অত্যাচার করে শিবির উচ্ছেদ হবে না

২২শে জুন ৪৩ মুক্তিসন (২০১৩)

শিবিরের ওপর সরকারের চণ্ডতার বিরুদ্ধে আমার গত লেখাটা দেখে অনেকে আমার সমালোচনা করেছেন। আমি অবাক হইনি, চারদিকে ঘৃণার যে টর্নেডো চলছে তাতে বোধহয় আমাদের উপলব্ধির সূক্ষতা নষ্টই হয়ে গেছে। গত কয়েক দশকে ছাত্রলীগ-ছাত্রদলের অনেক নেতা-নেত্রীদের টেন্ডার, ভর্তি, সিট ও যৌন-বাণিজ্য বহুবার কাগজে উঠেছে। সাথে আছে হল দখল ও অস্ত্রের সন্ত্রাস। লীগ-দল সেটা করেছে ব্যক্তিস্বার্থে, সেগুলো অন্যায় তা জেনে শুনেই ও নিজের বিবেকের কাছে অপরাধী হয়েই। কিন্তু শিবির ভর্তি, টেন্ডার, সিট ও যৌন-বাণিজ্য করেছে বলে অভিযোগ নেই। ওরা করেছে প্রধানত: হল দখল ও অস্ত্রের সন্ত্রাস, তাদের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য। মনের কাছে ওরা অপরাধী তো নয়ই বরং ইসলামের সেবা করছে মনে করে গর্বিত।

এটা বুঝতে কি মহাপণ্ডিত হতে হয় শিবিরের সাথে জাতির বড় একটা অংশের বিরোধটা ধর্মতাত্ত্বিক ? অত্যাচার করে ধর্মবিশ্বাস দমন -কোনদিন ইতিহাসে হয়েছে তা ? হয়নি। ধর্মতাত্ত্বিক সমস্যার ধর্মতাত্ত্বিক সমাধান করার চেষ্টা না করে সরকার অত্যাচার-নিপীড়নের পথধরেছে। যে বিপুল সংখ্যায় শিবিরদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে তা হাস্যকর ওঅবাস্তব। অত লোককে গ্রেপ্তার করাও সম্ভব নয়, আমাদের কারাগারেও অত জায়গা নেই আর অত মামলা চালানোর ক্ষমতাও আমাদের বিচার বিভাগের নেই।

রিম্যান্ড মানেই নির্মম প্রহার। শিবিরের সভাপতি শক্ত সমর্থ যুবক, রিম্যান্ড-এর পরে বোধ হয় দুদিন তাকে আদালতে আনা হয়েছিল,শেষের দিন সে ছিল হুইল চেয়ারে প্রায় অজ্ঞান, ওই অবস্থায় তার হাতে পায়ে ডান্ডাবেড়ী পরানো। নিশ্চয় অন্যান্যদেরও একই অবস্থা। আমি বহু বছর বিদেশে আছি, কোনো সভ্য সমাজে এমন বর্বরতা চিন্তাও করা যায় না। এর উদ্দেশ্য ছিলশিবির উচ্ছেদ, এই তো? তা, সেটা হয়েছে বিন্দুমাত্র? হয়নি। ওদের আদর্শ বদলেছে? বদলায় নি। ওরা শিবির করা ছেড়েছে? ছাড়েনি। ওদের অবস্থা দেখে অন্যেরা শিবির করা ছেড়েছে? ছাড়েনি বরং ওদের প্রতিটি সদস্যের ধর্মীয় আবেগ আরো শক্তিশালী হয়েছে। হিংসার যে রাজনীতি আগে থেকে চালু ছিল সেটা দ্বিগুন জ্বলে উঠেছে - ওই আগুনে দেশ ও আওয়ামী লীগ জ্বলে পুড়ে খাক না হয়ে যায়।

সমাজের সরকারের প্রতিটি স্তরে যে ভয়াবহ অনাচার দুর্নীতি তার বিকল্প তরুণ রক্ত খুঁজবেই। জামাত সেটাই ওদের দেয় - মোহময় আপাত: আকর্ষণীয় মৌদুদীবাদ। চারদিকে এত অত্যাচার অনাচারে বিপর্যস্ত মনে ইসলামী রাষ্ট্র, আল্লাহ'র আইন,রসুলের আদর্শ এসব শব্দের আকর্ষণ অপ্রতিরোধ্য। যত অত্যাচার হবে ওদের ইসলামী আবেগ তত শক্তিশালী হবে। শিবির জানে না মৌদুদীবাদ মুখে যত চটকদার আকর্ষণীয় কথাই বলুক সে মানবাধিকার আর ইসলাম-বিরোধী। ওর বিপক্ষে মুসলিম স্কলারদের রিসার্চ(নবম শতাব্দীর হাতিম আল রাজী থেকে শুরু করে এখনকার ড: আবদুল্লা আন নাইম, ড: বাসাম তিবি, ড: ফাদেল এবং আরো অনেকে) পড়ার সুযোগইশিবিরিকে দেয়া হয় না। কিন্তু এখন ইন্টারনেটের যুগ, কোরান-রসুল ও ঐতিহাসিক তত্ত্ব-তথ্য ধরে ধরে মৌদুদিবাদের ইসলাম-বিরোধীতা তুলে ধরলে এ ভুল ওদের কিংবা পরের প্রজন্মের অনেকেরই একদিন ভাঙবেই। একটা জাতির জন্য ওই সময়টা কিছুই নয়। যাঁরা আজ ছ'মাস পরের নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন তাঁদের জানা দরকার জামাত তিরিশ বছরের শুধু প্ল্যানই করেনি, লক্ষ্য অর্জনের রোডম্যাপও করে রেখেছে এবং ধীর কিন্তু দৃঢ় পদক্ষেপে সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে। শিবিরের ধর্মীয় আবেগ তার প্রধান অস্ত্র।

জামাত-শিবিরের উচ্ছেদ আমার চেয়ে বেশী কেউ চায় না। কিন্তু সেটা মানুষ উচ্ছেদ বা নাগরিকঅধিকার লঙ্ঘন করে নয়, রিম্যান্ড-এর নৃশংস অত্যাচার বা মামলার হয়রানী করে নয়। সেটা ইসলামের নামে ওদের অপতত্ত্বের উচ্ছেদ। কোরান-রসুল এবং ইতিহাসের শিক্ষা থেকে সেটা যথেষ্টই সম্ভব।

Print