হুটুটু - (ডারউইন দিবসের আষাঢ়-এ গল্প)।

Written on 29 March 2024. Posted in Literature :: Bangla

Darwin Dayপ্রাচীন কালে হোরাডো নামের এক দেশ ছিল। সেই দেশে এক লোক ছিল। লোকটা অত্যন্ত কৌতুহলী ছিল, প্রায়ই সে অদ্ভুত কাণ্ড করত। একদিন সে ভাবল, চোখে পট্টি বেঁধে উদ্দেশ্যহীন হাঁটলে শেষে গিয়ে কি ঘটবে? এই ভেবে সে চোখে পট্টি বেঁধে উদ্দেশ্যহীন হাঁটা শুরু করল। তিরিশ বছর ক্রমাগত হাঁটার পর সে পনেরো হাজার মাইল দুরে এক গ্রামে পৌঁছল। সে গ্রামের নাম ছিল হুটুটু।

হুটুটু গ্রামের মন্দির থেকে পুরুত-ঠাকুর মহা উrসাহে এ ঘটনার মাহাত্ম্য জনগণের মধ্যে প্রচার শুরু করল। কি অচিন্ত্যনীয় স্বর্গীয় পদ্ধতির বলে সুদুর পনেরো হাজার মাইল দুরের হোরাডো থেকে কেউ চোখ বন্ধ করে তিরিশ বছর ক্রমাগত হেঁটে পৃথিবীর অন্য কোথাও না পৌঁছে অত্যন্ত সঠিকভাবে হুটুটু-তেই পৌঁছতে পারে, সেকথা শুনে লোকজন ভক্তিতে অভিভূত হয়ে নুয়ে পড়ল। এই স্বর্গীয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করার ভার পুরুতের ওপর পড়ল। পুরুত এই অলৌকিক ব্যাপারের জটিল ব্যাখ্যা আবিষ্কার করে গ্রামে তা আরো জটিল ভাবে ব্যাখ্যা করতে লাগল। সেটা যত দুর্বোধ্য মনে হল মানুষের ভক্তিও ততই বেড়ে গেল। পুরুতকে মানুষ বিধাতার প্রতিনিধি মনে করল এবং পুরুত সেটা মেনেও নিল। এতে করে জনগণের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বেড়ে গেল।

স্কুল-কলেজে এই স্বর্গীয় ও অসাধারণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পড়ানো শুরু হল। মানুষের মনযোগ অন্যান্য সমস্যা-সমাধানের দিক থেকে সরে এসে এর ওপরে নিবদ্ধ হল। গ্রামের উন্নয়ন খাতের টাকা সরিয়ে এনে বিরাট দালান বানিয়ে এর ওপরে বিস্তর গবেষণা শুরু হল ও তার সম্পত্তি-কর, পানি-বিজলীর কর ইত্যাদি মওকুফ করে সরকারী টাকায় প্রচুর আসবাব ও যন্ত্রপাতি কেনা হল। অনেক বেতন দিয়ে সবচেয়ে মেধাবী বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হল যাঁরা এ গবেষণায় সারাটা সময় দিতে লাগলেন। অন্যান্য সব গবেষণা বন্ধ হয়ে গেল নয়ত কোনরকমে বেঁচে থাকল। ফসলের সার উrপাদন, রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ বানানো, হাসপাতালের ওষুধপত্র কেনা, নুতন স্কুল-প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বন্ধ বা ব্যাহত হল। কিন্তু তবু এতে গ্রামের সবাই পুরুত-ঠাকুরের ওপরে খুব খুশী হল।

সেই গ্রামে মু’মনা নামে এক বুদ্ধিমান ছেলে ছিল। কিছুদিন পরে মু’মনা সবাইকে বলা শুরু করল যে, পনেরো হাজার মাইল দুরের হোরাডো গ্রামের সেই লোকটা হুটুটু গ্রামের কথা জানতই না। তাই সে হুটুটুতে আসার জন্য রওনা হয়নি কারণ একটা জায়গার কথা যে জানে না সে সেখানে যাবার জন্য রওনা হতে পারে না। আসলে লোকটা বিশেষ কোথাও যাবার জন্য রওনা হয়নি, উদ্দেশ্যহীন রওনা হয়েছে। কোথাও না কোথাও তাকে পৌঁছতেই হত, সেভাবেই সে হুটুটু গ্রামে পৌঁছেছে। এরপর কেউ চোখ বেঁধে হোরাডো থেকে একশ’ কোটি বার রওনা হয়ে একশ’ কোটি বছর হাঁটলেও আর কখনোই হুটুট গ্রামে পৌঁছাবে না। সবাই এ নিয়ে ভাবতে শুরু করল। এতে পুরুত-ঠাকুর খুব রেগে গিয়ে মু’মনার কান ধরে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দিল। সবাই তখন চিন্তা করার মত কঠিন কাজ বাদ দিয়ে খুব আনন্দ করল। পুরুত মু’মনাকে নির্বাসনের দিনকে ধর্মীয় মহোrসব ঘোষণা করল।

প্রতি বছর সেই পবিত্র দিনে হুটুটু গ্রামে সেই উrসব মহাসমারোহে আজও হয়ে থাকে।

এমনকি দুর্ভিক্ষের সময়েও।

হাসান মাহমুদ

May 2003 

Print