অদৃশ্য "ইসলামী" রাষ্ট্রের আকাশ-কোর্ট

Written on 28 March 2024. Posted in Islamic :: Bangla

কামাল আততুর্ক "ইসলামী খেলাফত"-এর কবর দিয়েছেলেন ১৯২৪ সালে। ইতিহাসের কফিন থেকে সেটা এখন অবিশ্বাস্য বিস্ফোরণে ফিরে এসেছে ইরাক-সিরিয়ায়, প্রতিষ্ঠা করেছে "ইসলামী" রাষ্ট্র। ওটাও কবরে যাবে শিগগিরই, কিন্তু অদৃশ্য "ইসলামী" রাষ্ট্রের কি হবে? ওটা তো জন্মেছে আর বেঁচেই আছে "আকাশ-কোর্ট"-এর ওপর! মাসুদ রানা'র মতোই সে "ইনডেস্ট্রাকটিবল"; দুনিয়ার সব সরকার+ আর্মী একসাথে হলেও তার কেশাগ্র কেউ ছুঁতে পারবে না। কলি’র এই চানক্যের এ এক দুর্দান্ত কৌশল। মারাত্মক ব্যাপার, কিন্তু এ বিষয়ে কোথাও কোনো বিবৃতি নিবন্ধ বা ডকুমেন্টারি চোখে পড়েনি। মানুষের, পরিবারের ও সমাজের ওপরে এই আকাশ-কোর্টের প্রভাবের ওপরে কোনো সমীক্ষাও নেই।

ইন্টারনেটে ডজন ডজন "আকাশ-কোর্ট"-এ শত শত "শারিয়া বিচারক" বসে আছেন। দুনিয়া জুড়ে জীবনের সমস্যায় মুসলিমেরা তাঁদেরকে প্রশ্ন পাঠান ইসলামী সমাধানের জন্য। "বিচারক"-রা বর্তমান জীবনের প্রেক্ষিতে কোরান-রসুল থেকে মঙ্গলজনক সমাধান কমই বের করেন। প্রশ্ন পেলেই তাঁরা তড়িৎগতিতে হাজার বছর আগে লেখা শত শত বইয়ের হাজার হাজার পৃষ্ঠা খুলে বের করেন তখনকার কোন বিশেষজ্ঞ এ ব্যাপারে কি লিখে গেছেন, শারিয়া কেতাবে কি আইন লেখা আছে। সেগুলোই তাঁরা ইসলামী সমাধান হিসেবে পাঠিয়ে দেন, মুসলিমেরাও সেগুলো জীবনে প্রয়োগ করেন। "বিচারক"-রা আমলেই আনেন না কোন সমাধান বা আইন চিরকালের কোনটা তাৎক্ষণিক, কোনটা কোরান-রসুল বিরোধী, কোনটাতে মানুষের মঙ্গল কোনটাতে অমঙ্গল।

শারিয়া বইগুলোতে বহু ভালো আইন আছে কিন্তু বহু আইন আছে যা কোরান, রসুল ও নারী বিরোধী; যেমন তালাকের আইন। তাই প্রায় সর্বদাই তাঁদের "রায়" নারীর-বিপক্ষে যায়। এরকম হাজার হাজার "রায়" তাঁদের আকাশ-কোর্টের আর্কাইভে রাখা আছে। কখনো সেই রায় দেশের আইনের বিপক্ষেও যায় যেমন তাৎক্ষণিক তালাক ও বহুবিবাহ। কিন্তু আইন ভঙ্গকারী অন্য দেশে বসে আছে, দেশের আইন তাকে ছুঁতেও পারে না।

তাঁরা ভারী দরদী, সম্পুর্ন বিনামূল্যে তাঁরা এই সার্ভিস দিয়ে থাকেন। কিন্তু "নাথিং ইজ ফ্রি" কথাটার মধ্যে প্রজ্ঞা আছে। উনাদের এই মুফৎ সার্ভিসের উদ্দেশ্য হলো তথাকথিত "আল্লার আইন" অর্থাৎ শারিয়া ভিত্তিক ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাঁরা দুনিয়াটাকে সবার সঙ্গে ভাগ করে উপভোগ করতে চান না, তাঁরা চান বাকী সবাইকে ও নারীকে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ করতে। তাই স্বভাবতই এই আকাশ-কোর্ট পুরুষের ফেভারিট - খুবই পছন্দের।

নাগরিকের মানবাধিকার রক্ষা ও তার ওপরে অত্যাচার বন্ধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব সে অত্যাচার স্রষ্টার নামে হলেও।

মানব সভ্যতার সামনে এ এক নুতন চ্যালেঞ্জ, দুনিয়ার আইন-প্রণেতাদের সময় হয়েছে এদিকে নজর দেবার।

 

হাসান মাহমুদ ২১শে আগষ্ট ৪৪ মুক্তিসন (২০১৪)

Print