বাংলাদেশের শারিয়াকরণ

Written on 29 March 2024. Posted in Islamic :: Bangla

বাংলাদেশের শারিয়াকরণ : সুদে ও আসলে গুনতে হবে কি দেনা ?  

https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/47440

একাডেমিক জরিপকারী সংগঠন হিসেবে PEW-এর খ্যাতি আছে। ২০১৩ সালের এপ্রিলে কিছু দেশের মুসলিমদের মধ্যে শারিয়ার প্রতি সমর্থন জরীপ করে PEW যে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তাতে বাংলাদেশও আছে। জরিপের নাম The World’s Muslims: Religion, Politics and Society (বিশ্বমুসলিম: ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজ)। সেই জরীপ থেকে প্রধান ৫টি প্রশ্নোত্তর দেখাচ্ছি:-  

১।শারিয়া আইনকে আল্লাহ'র নাজিলকৃত আইন বলে মনে করেন -সর্বোচ্চ - জর্ডন ৮১%, সর্বনিম্ন –

    আলবেনিয়া ২৪%, বাংলাদেশ ৬৫%, পাকিস্তান ৮১%। 

২। শারিয়া আইন একটাই, বিভিন্ন নয় বলে মনে করেন - সর্বোচ্চ - তাজিকিস্তান ৭০%, সর্বনিম্ন–

    তিউনিশিয়া ২০%, বাংলাদেশ ৫৭%, পাকিস্তান ৬১%। 

৩। নিজের দেশে শারিয়া আইন চান - সর্বোচ্চ - আফগানিস্তান ৯৯%, সর্বনিম্ন আজারবাইজান ০৮%,

    বাংলাদেশ ৮২%, পাকিস্তান ৮৪%। 

৪। ব্যাভিচারীকে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন - সর্বোচ্চ- পাকিস্তান ৮৯%, সর্বনিম্ন- বসনিয়া ২১%

     বাংলাদেশ ৫৫%। 

৫। মুরতাদ অর্থাৎ ইসলাম-ত্যাগীদের মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন - সর্বোচ্চ - আফগানিস্তান ৭৯%, সর্বনিম্ন –

     কাজাখস্তান ০৪%, বাংলাদেশ ৪৪%, পাকিস্তান ৭৬% ।

আমাদের শারিয়াকরণ হচ্ছে  রাজনীতি নিরপেক্ষ পদ্ধতিতে। অর্থাৎ শারিয়াপন্থীরা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক গত বহু বছর ধরে দেশ শারিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। সেই এগিয়ে যাবার পদ্ধতিটা কি? কারণটা কি? শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যবসা, দ্রব্যমূল্য সর্বত্র নৈরাজ্য, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতিবাজদের দাপট সহ সমাজের সর্বক্ষেত্রে অসহ্য অরাজকতা বিরাজ করছে। এমতাবস্থায় শারিয়াপন্থীদের প্রস্তাবিত "ইসলামী" সমাধান ধীরে ধীরে জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবে এটাই স্বাভাবিক। "আল্লাহর  আইন সবকিছু ঠিক করে দেবে"- এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়ে উঠছে জনগণ। বহু সাধারণ লোক কোনো মওলানা মুফতির হুকুম বা ফতোয়া ছাড়াই নিজে থেকে শারিয়া প্রয়োগকারী হয়ে গেছেন। লক্ষ্যনীয়, এই সাধারণ লোকগুলো র অনেকেই কিন্তু কোনো ইসলামী দল করেন না। কিছু উদাহরণ দিচ্ছি।

এরকম অজস্র উদাহরণ প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শারিয়া আইন প্রয়োগ করার উগ্র প্রবণতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে। এবারে কি পদ্ধতিতে শারিয়াকরণটা হচ্ছে তা দেখা যাক।  

এরকম আরো ঘটনা ঘটছে। সমস্যা হলো, আমাদের শারিয়াপন্থী মওলানারা সাংঘাতিক নারীবিরোধী। তাঁদের ওয়াজ বক্তৃতা ও নিবন্ধে তার যথেষ্ট প্রমান রয়েছে। তাঁদের নারীবিরোধী অবস্থান এতই স্পষ্ট যে প্রগতিশীল শক্তি বিশেষ করে নারীশক্তির সাথে তার সংঘাত অনিবার্য্য হয়ে উঠেছে। এটা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক ও বিপজ্জনক। উদ্ধৃতি দিচ্ছি শারিয়াপন্থী মওলানা ও তাঁদের দৈনিক থেকে, (দৈনিকটির নাম উহ্য রাখা হল):-

ঘটনা যেভাবে ঘটছে তাতে একদিন গণতান্ত্রিক ভোটেই বাংলাদেশ শারিয়া রাষ্ট্র হয়ে যেতে পারে যেমন  মিসরে ঘটেছে। আমাদের কিছুটা দেরী হয়েছে কিন্তু পথ এখনো আছে, উপায় এখনো আছে। তা হলো, জাতিকে শারিয়া সম্পর্কে শিক্ষিত করে তোলা। জাতিকে জানানো যে হানাফী ও শাফি আইনের কেতাবে প্রত্যেকটিতে যে ছয় হাজারের বেশী আইন আছে তার বেশীর ভাগই ভালো কিন্তু কিছু আইন লঙ্ঘন করে কোরান, রসূল (স), ও মানবাধিকার। সেগুলো যুগোপযোগী করতেই হবে। সব মিলিয়ে, শারিয়া আইনের সিংহভাগ মানুষের তৈরী।    

এসবের ভিত্তিতেই বেশ কিছু মুসলিম প্রধান দেশের ইমামেরা শারিয়া-ভিত্তিক ইসলামী ব্যাখ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। ইতিহাস ব্যাকুল হয়ে বারবার হুঁশিয়ারী দিচ্ছে আমাদেরকে, কিন্তু আমরা বিপুল অহংকারে সে হুঁশিয়ারী উপেক্ষা করেই যাচ্ছি, করেই যাচ্ছি। আমরা বালুর মধ্যে মাথা গুঁজে নিজেদেরকে সান্ত্বনা দিচ্ছি এই বলে যে ঝড়টা আসছে না। কিন্তু …………

প্রকৃতির কিছু বিধান রয়েছে বাকী,  অন্ধ সে বিধি কাউকে ছাড় দেবেনা,  

কেউই পারেনি সেইখানে দিতে ফাঁকি,  সুদে ও আসলে গুনতে হয়েছে দেনা !

Print