নিকাব - কিছু মুসলিম দেশ সহ বহু দেশে নিষিদ্ধ কেন ?

Written on 29 December 2022. Posted in Islamic :: Bangla

নিকাব - কিছু মুসলিম দেশ সহ বহু দেশে নিষিদ্ধ কেন ?

RELATED:-  পোশাক যৌনতা - নিকাব নামা -  ০৭ই এপ্রিল ২০১৮ - https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/53199

কিছু মুসলিম প্রধান দেশ সহ এই ২৫টি দেশে/শহরে/অঞ্চলে মুখঢাকা নেকাব আইনতঃ নিষিদ্ধ :- (১) চাদ রিপাবলিক, (২) নিগার, (৩) ক্যামেরুন, (৪) কঙ্গো, (৫) তুর্কীস্থান, (৬) সৌদি আরবে হজ্ব ও ওমরার সময়, (৭) কায়রো বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের জন্য, (৮) তিউনিসিয়া, (৯) কসভো, (১০) আজারবাইজান, (১১) কাজাখস্তান, (১২) কিরগিজস্তান, (১৩) ফ্রান্স, (১৪) বেলজিয়াম, (১৫) হল্যান্ড, (১৬) অস্ট্রিয়া, (১৭) ইতালীর নোভারা ও (১৮) ভারালো সেশিয়া শহর, (১৯) চায়না'র উরুমকি শহর, (২০) স্পেনের বার্সিলোনা, (২১) রিউস ও (২২) ক্যাটালোনিয়া'র কয়েকটি শহর, (২৩) সুইজারল্যান্ড, (২৪) রাশিয়ার স্যাভর্পুল শহরের সরকারী স্কুলে ও (২৫) শ্রীলংকায়। 22 Jun 2024 - মুসলিম দেশ তাজিকিস্তানে হিজাব নিষিদ্ধ:- https://www.youtube.com/watch?v=ICVhseDwTUM

********************************

ইসলাম এক, আল্লাহ এক, কোরান এক, রসুল এক। কিন্তু আলেমরা মুসলিম নারীর জন্য অন্তত: ৩ রকমের বিভিন্ন পোশাককে দাবী করেছেন ইসলামী বলে।    (ক) শুধু চোখ খোলা রেখে সারা শরীর ও চেহারা আবৃত যেমন আফগানিস্তানে তালেবানরা আইন করেছিল (নেকাব বা নিকাব), আমাদের অনেক মওলানাও এ দাবী করে থাকেন,       (খ) চেহারা ও হাতের কব্জি পর্য্যন্ত খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত যেমন বহু মুসলিম দেশে আছে, এবং     (গ) সংযত পোশাক, শুধু নামাজ-আজান ইত্যাদি ও গুরুজনের সামনে মাথায় কাপড় দেয়া যা ইসলাম প্রচারকেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যা আমরা করতে দেখেছি নানী-দাদীদেরকে।  আমরা দেখব (১) কেতাব, (২) বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এবং (৩) বাস্তব।

 () কেতাব

(ক) নেকাবের সমর্থনে-

(খ) নেকাবের বিপক্ষে:- 

(বাস্তব

বিশেষজ্ঞদের একথাও মানতে হবে যে কোরানের কিছু হুকুম তাৎক্ষণিক এবং কিছু চিরকালের তার অজস্র প্রমাণ দেখুন - "ইসলামী শারিয়া : চিরন্তন নাকি পরিবর্তনযোগ্য?   :- https://www.youtube.com/watch?v=TdJeJQZBfq4

পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়া-সমর্থক বিশেষজ্ঞ ড: হাশিম কামালী তাঁর "প্রিন্সিপল্স অফ ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স" বহু উদাহরণ দিয়ে বলেছেন -  “নবী (দঃ)-এর সময়েই কোরাণ ও সুন্নাহ-তে কিছু পরিবর্তন করা হয়। পরিস্থিতির পরিবর্তনই ইহার মূল কারণ…. মানুষের উপকারের জন্য সমাজের বিদ্যমান পটভূমি ও আইনের সমন্বয় করার প্রয়োজনে নসখ আসিয়াছে……কোরাণ ও হাদিসে নসখ-এর সর্বপ্রধান কারণ হইল স্থান-কালের বিষয়টি।”   এমনকি মৌদুদীও সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন:- “বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত ধর্মীয় আইনগুলিতে ভিন্নতা আছে কেন? (differ in matters of detail)…বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত বেহেশতি কেতাবে নির্দেশিত ইবাদতের পদ্ধতিতে, হালাল-হারামের বিধানগুলিতে ও সামাজিক আইনগুলির বিস্তারিত কাঠামোতে (etailed legal regulations) ভিন্নতা আছে কেন ?…(কারণ) স্বয়ং আলাহ বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াইবার জন্য আইনের ধারা (legal prescriptions) বদলাইয়াছেন”−  মায়েদা ৪৮-এর ব্যাখ্যা, মৌদুদীর বিশাল বই তাফহিমুল কুরাণ। অবশ্যই তাই, "মানুষের উপকারের জন্য সমাজের বিদ্যমান পটভূমি ও আইনের সমন্বয়" এটাই মূল কথা। আজ আপনি যদি ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান হন, ফিরিয়ে আনবেন অমুসলিমদের ওপরে জিজিয়া ট্যাক্স?   বন্দিনী ধর্ষণ?  চালু করবেন দাসপ্রথা যেখানে হাট-বাজারে আলু-পটলের মত মানুষ কেনাবেচা হবে? করবেন না। কারণ পরিস্থিতি পালটে গেছে। 

কালতামামী 

মুসলিম খেলাফতে কখনো মুখঢাকা নেকাব বাধ্যতামূলক ছিলনা, ওটা বাধ্যতামূলক মুসলিম ঐতিহ্যই নয়।  এ ছাড়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, পাসপোর্ট, নাগরিক কার্ড, হাসপাতাল বিমান-বন্দর সহ সর্বত্র নিরাপত্তা এসব সমস্যা আছে। বাস্তবে নেকাব নারীর অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশা ও শখ বন্ধ বা ব্যহত করে যেমন রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক উচ্চপদ, ট্রেন-জাহাজ-এরোপ্লেন চালানো, ডাক্তার, সার্জন, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, সার্ফিং, পর্বতারোহন, ফুটবল, ক্রিকেট, সাঁতার ইত্যাদি খেলাধুলা ও শখ। নারীর কি ওসব ইচ্ছে করে না? নিশ্চয়ই করে। নারীর কি ওসব অধিকার নেই? অবশ্যই আছে। এই সেদিনও বাংলার নারী এভারেস্ট জয় করেছেন, 'বেঙ্গল মেসি কন্যা' বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের অধিনায়ক সাবিনা খাতুন নারী সাফ ফুটবল টুর্নামেন্টে হ্যাট্রিকসহ সাতটি গোল করেছেন, SAAF-CHAMPION হয়েছেন বাংলাদেশ নারী ফুটবলাররা।

নেকাবপন্থীদের মতে নেকাবের উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে ধর্ষণ ও যৌন উশৃঙ্খলতা বন্ধ করা। উদ্দেশ্যটা ভালো, কিভাবে তা বন্ধ করা বা কমানো যায় তা নিয়ে সমাজ-বিশেষজ্ঞরা মাথা ঘামাচ্ছেন। যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতি ইত্যাদি দিয়ে একে এতদিন মোটামুটি বশে রেখেছিল মানুষ। কিন্তু এখন মহাপরাক্রান্ত প্রযুক্তি এসে সবকিছু ভেঙ্গে চুরে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছেলেমেয়ের অবাধ যৌনতা এখন অপ্রতিরোধ্য। পোশাক নিয়ে হানাহানি করে, মুখ ঢেকে বা ফেসবুক, ইউ ইউব ও ওয়াজ মহফিলে হুংকার দিয়ে বা গালাগালি করে এটা ঠেকানো তো দুরের কথা কমানোও যাবে না। সেটা সমাজগুরু, ধর্মগুরু, সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। সমাজগুরু ও ধর্মগুরুরা জাতিকে শান্তভাবে হেদায়েত করুন (এখন ওটারই প্রচণ্ড অভাব), সরকার যৌন-অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত আইন করে কঠিন ভাবে তার প্রয়োগ করুন। দায়িত্ব আমাদের জনগণেরও আছে - আমরা জনগণ যেন যৌন-অপরাধের বিরুদ্ধে হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারি।         

 RELATED:- বাধ্যতামূলক নিকাব-বিরোধী বিশ্বখ্যাত ইসলামী স্কলারেরা - https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/278-2024-04-15-16-04-50?fbclid=IwY2xjawKEez1leHRuA2FlbQIxMABicmlkETE0ZjBCZjZibGhwWXlZVTdpAR5PKgZi5GITzG6s3MmwbO-eG7jY6xZEvfXUNvGXK9Gqaymjvq6GZ8MxHycBPg_aem_7w-ZINDPck1yo4JpSWmSgw NQB.png


Print