মুসলিম দেশ সহ অনেক দেশে নিকাব নিষিদ্ধ কেন ?

Written on 29 March 2024. Posted in Islamic :: Bangla

পোশাক যৌনতা - নিকাব নামা

হাসান মাহমুদ  - ০৭ই এপ্রিল ২০১৮

https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/53199

ইসলাম এক, আল্লাহ এক, কোরান এক, রসুল এক। কিন্তু আলেমরা মুসলিম নারীর জন্য অন্তত: ৩ রকমের বিভিন্ন পোশাককে দাবী করেছেন ইসলামী বলে।    (ক) শুধু চোখ খোলা রেখে সারা শরীর ও চেহারা আবৃত যেমন আফগানিস্তানে তালেবানরা আইন করেছিল (নেকাব বা নিকাব), আমাদের অনেক মওলানাও এ দাবী করে থাকেন,       (খ) চেহারা ও হাতের কব্জি পর্য্যন্ত খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত যেমন বহু মুসলিম দেশে আছে, এবং     (গ) সংযত পোশাক, শুধু নামাজ-আজান ইত্যাদি ও গুরুজনের সামনে মাথায় কাপড় দেয়া যা ইসলাম প্রচারকেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং যা আমরা করতে দেখেছি নানী-দাদীদেরকে।  যেখানে নেতারাই বিভক্ত সেখানে আমরা তো বিভক্ত হবই। সমস্যা হয় যখন সমর্থকদের তো বটেই কোন কোন আলেম/মওলানাদের ওয়াজ বক্তৃতায় উৎকট গালাগালি শুরু হয়ে যায়। প্রমাণ হয় যে আমরা এখনো পরস্পরের সম্মান বজায় রেখে সুস্থ বিতর্ক-আলোচনার যোগ্য হয়ে উঠিনি। প্রতিবাদের ভাষা আসলেই প্রতিবাদীর চরিত্র প্রমাণ করে। এবারে আমরা দেখব (১) কেতাব, (২) বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, এবং (৩) বাস্তব।

 () কেতাব

(ক) নেকাবের সমর্থনে-

(খ) নেকাবের বিপক্ষে:- 

() বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য

এবারে দেখা যাক মুসলিম বিশ্বের শীর্ষ বিশেষজ্ঞদের নেকাব বিরোধী সিদ্ধান্ত। আমাদের নিকাবপন্থী আলেমরা তাঁদের সাথে কথা বললে ভালো হয়।   

() বাস্তব

এ তো গেল দলিলের কচকচি, পক্ষ বিপক্ষের মতামত।    কে কি মানবে সেটা তার ব্যাপার কিন্তু “আমারটাই সত্য তোমরা সব মিথ্যে” এই হুংকারে গাত্রদাহ নিরসন হতে পারে কিন্তু হানাহানি বেড়ে যায়, শান্তি নষ্ট হয়। এবারে দেখা যাক বাস্তবে দুনিয়ায় কি ঘটছে কারণ জীবনের সবচেয়ে পরাক্রান্ত শক্তি হল বাস্তব যা কারো বিশ্বাসের ওপর  নির্ভর করেনা। 

নিকাব এখন ক্রিমিন্যালদের রক্ষাকবচ, নিকাব সিসি ক্যামেরাকে পরাস্ত করে। যে প্রথা খুনী ডাকাত অত্যাচারীদেরকে নিরাপত্তা দেয় তা অবশ্যই আইন করে বন্ধ করা দরকার।  কোনো হিন্দু যদি সতীদাহ করতে চায় কারণ ওটা তার ধর্মে আছে, তবে এই আপনিই কি তাকে বাধা দেবেন না? অবশ্যই দেবেন। কারণ ধর্মীয় সংস্কৃতির বাহানায় কারো ওপর অত্যাচার করা যায় না, কারো অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় না।

যদি বিশ্বাসও করি নেকাব কোরানের হুকুম তাহলে বিশেষজ্ঞদের একথাও মানতে হবে যে কোরানের কিছু হুকুম তাৎক্ষণিক এবং কিছু চিরকালের।  পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়া-সমর্থক বিশেষজ্ঞ ড: হাশিম কামালী তাঁর "প্রিন্সিপল্স অফ ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স" বহু উদাহরণ দিয়ে বলেছেন -  “নবী (দঃ)-এর সময়েই কোরাণ ও সুন্নাহ-তে কিছু পরিবর্তন করা হয়। পরিস্থিতির পরিবর্তনই ইহার মূল কারণ…. মানুষের উপকারের জন্য সমাজের বিদ্যমান পটভূমি ও আইনের সমন্বয় করার প্রয়োজনে নসখ আসিয়াছে……কোরাণ ও হাদিসে নসখ-এর সর্বপ্রধান কারণ হইল স্থান-কালের বিষয়টি।”   এমনকি মৌদুদীও সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছেন:- “বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত ধর্মীয় আইনগুলিতে ভিন্নতা আছে কেন? (differ in matters of detail)…বিভিন্ন পয়গম্বরের প্রচারিত বেহেশতি কেতাবে নির্দেশিত ইবাদতের পদ্ধতিতে, হালাল-হারামের বিধানগুলিতে ও সামাজিক আইনগুলির বিস্তারিত কাঠামোতে (etailed legal regulations) ভিন্নতা আছে কেন ?…(কারণ) স্বয়ং আলাহ বিভিন্ন সময়ের, বিভিন্ন জাতির ও বিভিন্ন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাওয়াইবার জন্য আইনের ধারা (legal prescriptions) বদলাইয়াছেন”−  মায়েদা ৪৮-এর ব্যাখ্যা, মৌদুদীর বিশাল বই তাফহিমুল কুরাণ। অবশ্যই তাই, "মানুষের উপকারের জন্য সমাজের বিদ্যমান পটভূমি ও আইনের সমন্বয়" এটাই মূল কথা। আজ আপনি যদি ইসলামী রাষ্ট্রপ্রধান হন, ফিরিয়ে আনবেন অমুসলিমদের ওপরে জিজিয়া ট্যাক্স?   বন্দিনী ধর্ষণ?  চালু করবেন দাসপ্রথা যেখানে হাট-বাজারে আলু-পটলের মত মানুষ কেনাবেচা হবে? করবেন না। কারণ পরিস্থিতি পালটে গেছে। 

কালতামামী 

নেকাবপন্থীদের মতে নেকাবের উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে ধর্ষণ ও যৌন উশৃঙ্খলতা বন্ধ করা। উদ্দেশ্যটা ভালো, কারণ বিশ্বময় ওটা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কিভাবে তা বন্ধ করা বা কমানো যায় তা নিয়ে সমাজ-বিশেষজ্ঞরা মাথা ঘামাচ্ছেন, উপায় এখনো বের করতে পারেন নি। যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতি ইত্যাদি দিয়ে এ শক্তিকে এতদিন মোটামুটি বশে রেখেছিল মানুষ। কিন্তু এখন মহাপরাক্রান্ত প্রযুক্তি এসে সবকিছু ভেঙ্গে চুরে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ছেলেমেয়ের অবাধ যৌনতা এখন অপ্রতিরোধ্য। পোশাক নিয়ে হানাহানি করে, মুখ ঢেকে বা ফেসবুক, ইউ ইউব ও ওয়াজ মহফিলে হুংকার দিয়ে বা গালাগালি করে এটা ঠেকানো তো দুরের কথা কমানোও যাবে না, অন্য পথ ধরতে হবে। সেটা সমাজগুরু, ধর্মগুরু, সরকার ও প্রশাসনের দায়িত্ব। সমাজগুরু ও ধর্মগুরুরা জাতিকে শান্তভাবে হেদায়েত করুন (এখন ওটারই প্রচণ্ড অভাব), সরকার যৌন-অপরাধের বিরুদ্ধে শক্ত আইন করে কঠিন ভাবে তার প্রয়োগ করুন। দায়িত্ব আমাদের জনগণেরও আছে - আমরা জনগণ যেন যৌন-অপরাধের বিরুদ্ধে হিমালয় হয়ে দাঁড়িয়ে যেতে পারি।         

এগুলো ছাড়া এই নিকষ অন্ধকার থেকে বের হবার আর কোন উপায় দেখছিনা। বিশ্বাসের "সত্য" কখনো সতীদাহের মতো মারাত্মকও হতে পারে –

"সত্য সত্য করিস নারে মন,

এমন সত্য আছে ভবে, হাত লাগাইলে বুঝবি তবে,

জ্বইলা যাবি অঙ্গারের মতন"......

Print