• Home
  • Articles
  • Islamic :: Bangla
  • ইসলামী শারিয়া : চিরন্তন, নাকি পরিবর্তনযোগ্য ?

ইসলামে ভাস্কর্য্য - বিশ্ব-মুসলিমের অতীত বর্তমান ও কোরান-হাদিস

ইসলামে ভাস্কর্য্য -   বিশ্ব-মুসলিমের অতীত বর্তমান ও কোরান-হাদিস

Published : 3 Dec 2020 - https://bangla.bdnews24.com/opinion/comment/64703

Added on 06 April 2024:-  SEARCH :- আল্লাহ লুত ()-এর স্ত্রীকে পাথরের মূর্তি বানিয়েছেন

STATUE_OF_LUTS_A_WIFE_IN_QURAN.png

&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&

(UPDATED – 04 April 2024)

প্রাচীন মানবের গুহার দেয়াল থেকে শুরু করে বর্তমান বিশ্ব ভাস্কর্যে সয়লাব, ভাস্কর্যহীন মানবসমাজ পৃথিবীতে কখনো ছিল না এখনো নেই।  ইসলাম মানুষের ফিতরাত অর্থাৎ স্বভাবজাত ধর্ম, এবং ভাস্কর্য মানুষের স্বভাবজাত প্রকৃতি।  এর বিরুদ্ধে যে দাঁড়াবে তার পরাজয় অবধারিত।  সেজন্যই ভাস্কর্য বিরোধী বয়ান চিরপরাজিত, বিশ্ব মুসলিম চিরকাল এই বয়ানকে পরিপূর্ণভাবে বর্জন করেছে। লেখাটি চার অংশে ভাগ করছি-

(ক) ক্ষতি কি, (খ) অতীত বর্তমানের বাস্তবতা, (গ) কোরান এবং (ঘ) ভাস্কর্য বিরোধিতার কারণ  

() ক্ষতি কি

অতিরিক্ত কেতাব-প্রবণতা ধর্মগুরুদেরকে বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। অক্ষরের এই কারাগারকে বিশ্বের অন্যতম সর্বোচ্চ শারিয়াবিদ ড. হাশিম কামালী বলেছেন আক্ষরিকতা "LITERALISM- প্রিন্সিপলস অব ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স। তখন শুরু হয় কে কার চেয়ে কত বেশি অক্ষর-শব্দ-দাঁড়ি-কমা জানেন বা "ব্যাখ্যা" করতে পারেন সেই বিপজ্জনক প্রতিযোগিতা। হ্যাঁ, অতীতে মানুষ ভাস্কর্যের পূজোআর্চা করতো যা তৌহিদের বিপক্ষে। তাই যদি সেই সময়ে ভাস্কর্য নিষিদ্ধ হয়ে থাকলেও সেটা তখনকার প্রজ্ঞা, এখনকার নয়। ঠিক যেমন জিজিয়া কর বা দাসপ্রথার ওপরে কোরান রসুলের (স.) হুকুমগুলো তখনকার প্রজ্ঞা, এখনকার নয়।

বর্তমানে ভাস্কর্য দেখে কি কোনও মুসলিমের ঈমান আকিদার ক্ষতি হয়েছে? হয়নি। কোনও মুসলিম কি ধুপধুনো জ্বেলে তার ইবাদত শুরু করেছে? করেনি। কেউ ভাস্কর্যের ইবাদত শুরু করবে সে সম্ভাবনা কি আছে? নেই, একেবারেই নেই। অর্থাৎ বর্তমানে ভাস্কর্যের বিরুদ্ধে "কেতাবে আছে" ছাড়া আর কোনো কারণ বা প্রজ্ঞা নেই।

. অতীত বর্তমানের বাস্তবতা

"শারিয়া রাষ্ট্র" পাকিস্তান, সৌদি আরব ও মুসলিম দেশগুলো সহ দুনিয়া জুড়ে ভাস্কর্য আছে অগণিত। সেসব দেশের আলেমরা কোনোদিন মিছিল হুংকার করেননি।  আশ্চর্য এই যে সৌদি আলেমদের সাথে মতে মিললে আমাদের আলেমরা বলেন, "ওখানেই তো ইসলাম এসেছিল উনারাই তো সবচেয়ে বেশি ইসলাম বোঝেন।" আর মতে না মিললেই বলেন, "সৌদি কি করে না করে তাতে কিছুই এসে যায়না, আমাদের ব্যাখ্যাই ঠিক"। 

(A) খলিফা দ্বিতীয় মুহাম্মদের যুগের একটি ব্রোঞ্জের মুদ্রা, ১৪৮১:- খলিফা_দ্বিতীয়_মুহাম্মদের_যুগের_একটি_ব্রোঞ্জের_মুদ্রা_১৪৮১.png

https://bn.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%89%E0%A6%B8%E0%A6%AE%E0%A6%BE%E0%A6%A8%E0%A7%80%E0%A6%AF%E0%A6%BC_%E0%A6%B8%E0%A6%BE%E0%A6%AE%E0%A7%8D%E0%A6%B0%E0%A6%BE%E0%A6%9C%E0%A7%8D%E0%A6%AF

(B) Sculpture in Muslim history- আমাদের ইতিহাস ভাস্কর্য্যে ও চিত্রকর্মে সয়লাব :- https://www.google.com/search?sca_esv=9f58efb118f0a45e&rlz=1C1CHBF_enCA911CA911&sxsrf=ACQVn0_mdY9JzfcGZyz1esnRDKHOqVuDCw:1711143555083&q=sculpture+in+Muslim+history&tbm=isch&source=lnms&prmd=ivsnmbtz&sa=X&ved=2ahUKEwj4mYq-6oiFAxWaHTQIHU3cAV8Q0pQJegQIChAB&biw=1360&bih=607&dpr=1

(C) Human faces in caliphs coins in islam - এমন অনেক মুদ্রার ছবি:- https://www.google.com/search?sca_esv=f6034427377cf62a&rlz=1C1CHBF_enCA911CA911&sxsrf=ACQVn0-BMkvH6r2cvf0UaCXyIrG_IbF8KQ:1711143766472&q=human+face+in+caliphs+coins+in+islam&tbm=isch&source=lnms&prmd=ivsnbmtz&sa=X&ved=2ahUKEwiFu_Ci64iFAxW0kokEHfvUAwIQ0pQJegQICxAB&biw=1360&bih=607&dpr=1#imgrc=2VDR1TIhulmB_M   - STANDING CALIPH DINAR (সোনার মুদ্রা) | Ashmolean Museum STANDING CALIPH DINAR | Ashmolean Museum

(D)   মুসলিম ইতিহাস ভাস্কর্য্যে সয়লাব :- https://www.google.com/search?client=firefox-b-d&sca_esv=f6034427377cf62a&sxsrf=ACQVn0_mr6y41QDo73icGFKAdlveoOp5sg:1711144228663&q=sculptures+in+islamic+history+and+culture&tbm=isch&source=lnms&prmd=ivsnmbtz&sa=X&ved=2ahUKEwjypKL_7IiFAxWXg4kEHbhyA10Q0pQJegQIEBAB&biw=1360&bih=615&dpr=1#imgrc=wTvxboHPUUvh0M

Sculpture_in_Islamic_history.png

 

ইতিহাস হল, এবারে কোরান-হাদিস।  

কোরানের ৬৩৪৯ আয়াত এবং সহি সিত্তার মোটামুটি ২৮,০০০ হাদিস মিলে মোটামুটি ৩৪,৩৫০টি ইসলামী সূত্রের বহু জায়গায় "উপাসনার প্রতিমা" অর্থাৎ IDOL অবৈধ করা হয়েছে। কিন্তু STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য্যকে অবৈধ করা হয়েছে মাত্র একটাতে – সহি মুসলিম বুক ২৪-৫২৫০। সেটা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।  

. কোরান

সূরা সাবা আয়াত ১৩: তারা সোলায়মানের (আ) ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, কুয়ার মতো বৃহদাকার পানির পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত।

এই একটা আয়াত ছাড়া কোরানের ইংরেজী অনুবাদে কোথাও STATUE অর্থাৎ "ভাস্কর্য" শব্দটিই আমি পাইনি।  কোরান মেনে চললে এখানেই সব বিতর্কের অবসান হবার কথা। কিন্তু তা হয়নি ভাস্কর্য নিষিদ্ধের অপচেষ্টায় শব্দ বাক্য দাঁড়ি কমা নিয়ে অন্তহীন চুলচেরা বিশ্লেষণ হয়েছে, যা করে অতীতের অনেক জাতি ধ্বংস হয়ে গেছে।  সূরা সাবা-র আয়াত ১৩-র ব্যাপারে ভাস্কর্য-বিরোধীরা বলেন ওটা নাকি ছিল নিষ্প্রাণ কিছুর মূর্তি, প্রাণীর নয়। তারা কোন নির্ভরযোগ্য সূত্রে এটা পেলেন? আল্লাহ তো সুস্পষ্টভাবে প্রাণীর মূর্তিকেও বৈধতা দিয়েছেন: "যখন তুমি আমার আদেশে কাদামাটি দিয়ে পাখীর মত প্রতিকৃতি নির্মাণ করতে, অতঃপর তুমি তাতে ফুঁ দিতে; ফলে তা আমার আদেশে পাখী হয়ে যেত" – মায়েদা ১১০।

ইংরেজিতে উপাসনার জন্য প্রতিমা-মূর্তি এবং সম্মান-সৌন্দর্যের জন্য ভাস্কর্যের মূর্তি আলাদা শব্দ - IDOL এবং STATUE।  অথচ কোরানের বাংলা তর্জমাতে ঢালাওভাবে "মূর্তি" শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে যার মধ্যে দুর্গামূর্তি গান্ধীমূর্তি, হনুমান-সাপ-মাছ উপাসনার প্রতিমা ইত্যাদি এবং সম্মানের ও সৌন্দর্যের ভাস্কর্য- সবই অন্তর্ভুক্ত। সেজন্যই কোরানের বাংলা অনুবাদে "প্রতিমা" শব্দটিই প্রযোজ্য, "মূর্তি" নয়।

. হাদিস

এবারে সহি সিত্তা অর্থাৎ আমাদের ছয়টি সহি হাদিস গ্রন্থ- সহি বুখারী, মুসলিম, আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ও তিরমিযী। দেখা যাক STATUE শব্দটি আছে কি না - যদি না থাকে তাহলে যা নেই তা নিয়ে তর্কের তুলকালাম করা যায় কিন্তু সেটা নিষিদ্ধ করার প্রশ্নই ওঠে না।

বুখারি:-

সহি বুখারিতে STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য শব্দটিই নেই, IDOL অর্থাৎ উপাসনার প্রতিমার উল্লেখ আছে এই ৩6টি হাদিসে – ১ম খণ্ড ৬, ২য় খণ্ড ৩০৩, ৬৭১, ৭০৬, ৩য় খণ্ড ১৮, ৪৩৮, ৬৫৮, ৪র্থ খণ্ড ২৬২, ২৭৬, ৪৬১, ৫৫৮, ৫৭৮, ৭২৩, ৫ম খণ্ড ১৬৯, ২০৬, ৩৭৫, ৬ষ্ঠ খণ্ড ২২, ৮৯, ১০৪, ১৪৭, ২৪৪, ৩৮৪, ৪৪২, ৪৪৭, ৪৪৮, ৪৭৮, ৪৮৩, ৭ম খণ্ড ৩৮২, ৩৮৩, ৮ম খণ্ড ২২৬, ২৭১, ৩১৪, ৩৪৫, ৯ম খণ্ড ২৩২, ৫২৭ ও ৫৩২।

নাসাঈ  :-

১ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ১৩টি জায়গায়,  

২য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ১৬টি জায়গায়,

৩য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ২৭টি জায়গায়, 

৪র্থ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' এবং IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' শব্দ দুইটির কোনোটিই নেই,

৫ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ২০টি জায়গায়,

৬ষ্ঠ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ২৫টি

ইবনে মাজাহ 

১ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ১৯টি জায়গায়,

২য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ৮টি জায়গায়, 

৩য় খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ৩টি জায়গায়,

৪র্থ খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ৭টি জায়গায়,  

৫ম খণ্ড – STATUE অর্থাৎ 'ভাস্কর্য' শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ২৮ট

আবু দাউদ 

STATUE অর্থাৎ "ভাস্কর্য" শব্দটি নেই, IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ১১টি জায়গায়। 

 তিরিমিযী

IDOL অর্থাৎ 'প্রতিমা' আছে ৮ জায়গায়। আর STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্য আছে হাদিস ২৭৬৪-এ যেটার বিষয় এ নিবন্ধের সাথে সংশ্লিষ্ট নয়, আপনারা চেক করে নেবেন

মুসলিম 

ভাস্কর্য নিষিদ্ধ হাদিস মাত্র একটা - মুসলিম 5250:- বাসায় কুকুর বা স্ট্যাচু থাকলে ফেরেশতা ঢোকেনা।  সূরা মায়েদা 110- এর বিরোধী কথা কি নবীজি বলতে পারেন? জবাব দিয়েছে সূরা আরাফ ২০৩, আম্বিয়া ৪৫, আহযাব ২, আহকাফ ৯, ইউনুস ১৫ ও ১০৯ এবং আনাম ৫০ ও ১০৬, নবীজি ওহীর বাইরে কিছুই প্রচার করেন নি। মায়েদা 110 বৈধ করেছে পাখির স্ট্যাচু –কোরান বিরোধী প্রতিটি হাদিস বাতিল!!

সহিঃ মুসলিম কতটা সহিঃদুনিয়া জানে নবি (স) মক্কায় ছিলেন 13 আর মদিনায় 10 বছর- সহিঃ মুসলিম কি বলছে ? সংশ্লিষ্ট অংশহাদিস 5805:-

"Ammar, the freed slave of Banu Hashim, reported: ................Bear this in mind very well that he was commissioned (as a Prophet) at the age of forty, and he stayed in Mecca for 15 years.

আম্মার বলছেন - ভালো করে মনে রেখো নবী (সা) মক্কায় 15 বছর ছিলেন।

সহিঃ মুসলিম কতটা সহিঃ? হাদিস 3424-  হুদায়ফার স্ত্রী সালহাকে তিনি নাকি অশ্লীল আদেশ করেছিলেন যুবক সলিম কে 10 ঢোক স্তন্যপান করাতে এবং সে নাকি সেটা করেও ছিল।  না, অশ্লীল আদেশ শয়তান দেয় - বাকারা 169। কেউ বলেন ওটা ওয়ান টাইম হুকুম ছিল।  না, ওয়ান টাইম হলেও সেটা অশ্লীল,  নবীরা অশ্লীল আদেশ দেন না।

অর্থাৎ সহিঃ মুসলিম ততটা সহি নয় যতটা আমাদেরকে বিশ্বাস করানো হয়েছে।  হিসাবটা মিলে যাবে যদি এই দুটো আয়াতের সাথে উপরের কথাগুলো মিলিয়ে নেন:-সূরা আরাফ ১৬ -১৭ - ইবলিশ মানুষকে পথভ্রষ্ট করার প্রতিজ্ঞা করেছে, বনি ইসরাইল ৬৪ :- আল্লাহ ইবলিশকে অনুমতি দিলেন মানুষকে বিভ্রান্ত করার।   

সব মিলিয়ে - কোরান হাদিসের প্রায় সাড়ে 34 হাজার সূত্রের মাত্র একটা হাদিস ভাস্কর্য বিরোধী কিন্তু সেটা কোরান-বিরোধী।

অর্থাৎ কোরান-হাদিসের মোটামুটি ৩৪,৩৫০টি ইসলামী সূত্রের মধ্যে STATUE অর্থাৎ ভাস্কর্যকে উল্লেখ ও অবৈধ করা আছে শুধুমাত্র একটি হাদিসে।  কিন্তু ওই সহি মুসলিমেই আছে নবীজি (সা) মক্কায় ছিলেন ১৫ বছর- বুক ০৩০, হাদিস ৫৮০৫। তাহলে কি আমরা ধরে নেব নবীজি (সা) মক্কায় সত্যি সত্যিই ১৫ বছর ছিলেন ?  ৩৪,৩৫০ এর বিপরীতে মাত্র ১টি, সংখ্যার দিক দিয়ে ওটা তুচ্ছ, তাছাড়া সূরা মায়েদা আয়াত মায়েদা ১১০-এ যে "কাদামাটি দিয়ে পাখীর মত প্রতিকৃতি নির্মাণ" করাকে বৈধ করা আছে যা পরে সত্যি সত্যি পাখি হয়ে যেত, - এর বিরোধী মুসলিমের ওই একটি হাদিস অবশ্যই ভুল। 

সংক্ষেপে আরো কিছু 

(ক) স্বয়ং রসূলের (স) বাড়িতে বিবি আয়েশা (র) প্রাণীর পুতুল নিয়ে খেলেছেন এবং নবীজি (সা) তাতে বাধা দেননি অর্থাৎ অনুমোদন করেছেন – বুখারি ৮ম খণ্ড ১৫১, আবু দাউদ ৪৯১৪, মুসলিম ৩৩১১, ৫৯৮১।    

Bukhari Vol 8, Book 73, Number 151: Narrated 'Aisha: I used to play with the dolls in the presence of the Prophet, and my girl friends also used to play with me. When Allah's Apostle used to enter (my dwelling place) they used to hide themselves, but the Prophet would call them to join and play with me. (The playing with the dolls and similar images is forbidden, but it was allowed for 'Aisha at that time, as she was a little girl, not yet reached the age of puberty.)  

হাদিসের শেষে অনুবাদক ব্র্যাকেটে লিখেছেন –আয়েশা (রা) ছোট ছিলেন বলেই নবীজি এটা এলাও করেছেন। নবীজির মনের কথা অনুবাদক কিভাবে জানলেন? তিনি তো নবীজির সাথে কথা বলেননি!  অরিজিনাল হাদিসে তো সেটা নাই!  এই সেই ক্রাইম যার নিন্দা করেছে বাকারা 79– লোকে নিজের কথা আল্লাহর নামে চালায়- এই সেই ক্রাইম তফসির বা ফুটনোটে না দিয়ে কোরআন হাদিসের অনুবাদে ব্র্যাকেটে নিজের কথা ঢোকানো যাতে মনে হয় কথাটা আল্লাহ-রসুলের। 

এরই প্রমাণ বুখারী VOL 9 হাদিস 174 - আমার ভাষায় বলছি:- নবী সা বলেছেন আমি রোজ হাশরে মানুষকে কাউসারের পানি খাওয়াবো কিছু লোক আসবে যাদেরকে আমি চিনি তারাও আমাকে চেনে কিন্তু আমাদের মধ্যে একটা বাধা রাখা হবে। আমি বলবো এরা তো আমার লোক !! তখন আমাকে বলা হবে:-'You do not know what changes. and new things they did after you.'  Then I will say, 'Far removed (from mercy), far removed (from mercy), those who changed (the religion) after me! " 

"আপনি জানেন না আপনার পরে এরা কি বদলে দিয়েছে এবং নতুন জিনিস এনেছে" -তখন আমি বলব - দূর হয়ে যাও আমার রহমত থেকে দূর হয়ে যাও যারা আমার পরে ধর্মকে বদলে দিয়েছো !!

কত দুঃখে কত বেদনায় একথা বলেছিলেন নবীজি (সা)?

(খ) কাবার দেয়ালে ছিল হযরত ঈসা (আ) ও মাতা মেরির ছবি,  কাবার ভিতরে ঢুকে "রাসুল (সা) হযরত ঈসা (আ.) ও (তার) মাতা মেরির ছবি বাদে বাকি সব ছবি মুছিয়া ফেলিতে নির্দেশ দিলেন"- সিরাত – ইবনে হিশাম/ইবনে ইশাক-এর পৃষ্ঠা ৫৫২।   

(গ) প্রাচীন সভ্যতা আছে এমন দেশ সহ বহু দেশ জয় করেছিলেন মুসলিমরা, সেখানেও নিশ্চয়ই অনেক প্রতিমা-ভাস্কর্য ছিল। কিন্তু সাহাবীরা কোথাও কোন ভাস্কর্য ভেঙেছিলেন তেমন দলিল আমরা পাই না।

অযথা কুতর্ক করা যেতে পারে কিন্তু সবমিলিয়ে ভাস্কর্য বিরোধিতার পেছনে কোন প্রজ্ঞা নেই। ইসলামে আরাধনার প্রতিমা হারাম, কিন্তু সম্মান-সৌন্দর্যের ভাস্কর্য হারাম হবার প্রশ্নই ওঠেনা। সেজন্যই অতীত বর্তমানের মুসলিম-বিশ্ব  ভাস্কর্য বিরোধী বয়ানকে বর্জন করে ভাস্কর্যকে গ্রহণ করেছে।  

 

Print