ইসলামী রাষ্ট্রের দুঃস্বপ্ন

ইসলামী রাষ্ট্রের দুঃস্বপ্ন 

হাসান মাহমুদ

(১৯ মার্চ ২০২৩ তারিখে যোগ করেছি :- একাত্তরে আমাদের ওপরে হিংস্র গণহত্যা গণধর্ষণের সময় আমরা আশা করেছিলাম মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো ও ৫৬ দেশের শক্তিশালী সংগঠন অর্গানাইজেশন অফ ইসলামিক কোঅপারেশন (ওআইসি) সর্বশক্তিতে আমাদের পক্ষে ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ঝাঁপিয়ে পড়বে। কারণ এটাই ইসলামের দাবী। কিন্তু বাস্তবে ঘটেছে ঠিক উল্টো, একাত্তরের ভয়াবহ ঘটনায় তারা পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে। পরে দেখেছি এমন ঘটনায় ইতিহাস পরিপূর্ন হয়ে আছে)।

ইসলামী রাষ্ট্রের কথা উঠলেই শারিয়াপন্থীরা ছুটে যান দেড় হাজার বছর আগে হযরত ওমরের (র) শাসনের উদাহরণে। তাঁর অনন্য শাসন পদ্ধতিতে কিভাবে কল্যাণ সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল, কেন সেই পদ্ধতি চিরকালের জন্য মুসলিম অমুসলিম সব শাসকের অনুকরণযোগ্য তা আমি একাধিক নিবন্ধে দেখিয়েছি।  কিন্তু চার খলীফার পরে একদিকে বিজ্ঞানীরা  অসাধারণ সফলতায় একের পর এক আবিষ্কার করেছেন অন্যদিকে (সামান্য কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া) খলীফারা পরস্পরের সাথে ক্ষমতার রক্তাক্ত কামড়াকামড়ি করেছেন।  শারিয়াপন্থীরা এড়িয়ে যান খেলাফতের দেড় হাজার বছরের নৃশংসতা যার সাথে ইসলামের কোনো যোগ নেই শুধু নামের সাইনবোর্ড ছাড়া।  "ব্যাটল অফ হাররা" সার্চ করে দেখুন, শরীর শিউরে উঠবে। এর মধ্যে ইসলাম কোথায় ? ইসলামের মূল্যবোধ কোথায় ? ইমাম গাজ্জালী থেকে দেখাচ্ছি :- 

“বাদশাহদের প্রায় সব জমিজমা ও প্রাসাদ অবৈধভাবে অর্জিত। কাহারো উচিত নহে এসব সুলতানকে মুখ দেখানো বা তাহাদের মুখ দেখা। তাহাদের অত্যাচারের জন্য তাহাদিগকে ঘৃণা করা উচিত, তাহাদের অস্তিত্বকেই নিন্দা করা উচিত, তাহাদের প্রশংসা করা উচিত নহে...তাহাদের রাজপ্রাসাদ ও সাজ-পোশাককে নোংরা ও অনৈসলামিক ঘোষণা করা উচিত”... তিনি সকল মন্ত্রীদিগকে চিঠিতে লেখেন যে, “স্বৈরতন্ত্রের অত্যাচার সকল সীমা অতিক্রম করিয়াছে। আমি এইস্থান ত্যাগ করিয়া যাইতেছি যাহাতে স্বৈরতন্ত্রের এই নিষ্ঠুর ও নির্লজ্জ কর্মকাণ্ড আমাকে দেখিতে না হয়” - (এ শর্ট হিস্ট্রি অফ দি রিভাইভালিস্ট মুভমেণ্ট ইন্ ইসলাম - মওলানা মউদুদী - পৃষ্ঠা ৬২-৬৩)।

চার খলীফার পরে খেলাফতের প্রথম ৩০০ বছরে মুসলিমের হাতে শুধুমাত্র মুসলিমদের যুদ্ধের তালিকা দেখাচ্ছি, পরের ইতিহাসও একই রকম।  অগণিত মুসলিমের রক্তস্রোতে, অগণিত বিধবা এতিমের হাহাকারে ভেসে গেছে কোরানের "মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই - সূরা আল হুজুরাত আয়াত ১০" এবং হাদিসের - "যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিমরা নিরাপদ, সে-ই প্রকৃত মুসলিম" ও  "নিশ্চয়ই তোমাদের পরস্পরের জান, মাল ও সম্মান ঠিক তেমনি অলংঘনীয় যেমনিভাবে তোমাদের এই নগরীতে [অর্থাৎ মক্কা নগরী] এই মাসের এই দিনটি [অর্থাৎ যিলহজ্জের ১০ তারিখ] পবিত্র”।   এটা আমাদেরই ইতিহাস, এর মুখোমুখি আমাদের হতেই হবে। 

মুসলমানের হাতে মুসলমানের গণহত্যা ১৯৭১ সালেও শেষ হয়নি, গত কয়েক বছর ধরে সৌদির নৃশংস আক্রমণে ইয়েমেনে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ চলছে আর বিশ্বের অমুসলিম কিছু সংস্থা ক্ষুধার্ত ইয়েমেনিদের জন্য ইন্টারনেটে ভিক্ষে করে বেড়াচ্ছে !!

সাল  :- 

৬৬১  - হজরত আলী (রা) নিহত, সিরিয়ার শাসক মাবিয়া উমাইয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠা, 

৬৮০  - মাবিয়ার মৃত্যু, এজিদ খলিফা হল- কারবালায় হজরত হোসেন (রা) সহ পরিবারের অনেকে নিহত,

৬৮৪  - মক্কায় আবদুল্লা বিন জুবায়ের-এর খলিফা হবার ঘোষণা, র্মাজ রাহাত-এর যুদ্ধ,

৬৮৭  - ৬৯২ - কুফা-য় মুখতার নিজেকে খলিফা ঘোষণা করলে মক্কায় জুবায়ের, কুফা-য় মুখতার ও সিরিয়ায় এজিদের বংশধর আবদুল মালিক, একসাথে এই তিন খেলাফতের উদ্ভব ও রক্তাক্ত যুদ্ধে মুখতার ও জুবায়ের নিহত। আবদুল মালিকের সেনাপতি ইতিহাসের কুখ্যাত নৃশংস হত্যকারী হাজ্জাজ বিন ইউসুফের ক্রমাগত গণহত্যা। সাহাবী সহ লক্ষ লক্ষ মুসলমানকে সে খুন করেছে,

৬৯৫  - জাজিরা, আহয়াজ ও কারুন-এর তিনটে যুদ্ধ,

৭০২  - ইরাকে আশাথ বিদ্রোহ, দায়রুল জামিরা’র যুদ্ধ,

৭০২ থেকে ৭৩৭ - মুসলিম সৈন্যদের বহু দেশ জয় ও ৭৩২ সালে ফ্রান্সের সীমানায় জেনারেল হ্যামার-এর হাতে পরাজয়, এরপরে ইউরোপে মুসলিমেরা আর কোনো দেশ জয় করতে পারেনি, এদিকে আবার মুসলিমদের মধ্যে রক্তাক্ত গৃহযুদ্ধ শুরু,

৭৪০  - (ক) ইরাবে শিয়া বিদ্রোহ। (খ) উত্তর আফ্রিকায় বারবার বিদ্রোহ,

৭৪৩  - খোরাসানে শিয়া বিদ্রোহ,

৭৪৪  - বিদ্রোহীদের অভ্যুত্থানে খলিফা ২য় ওয়ালিদ নিহত,

৭৪৫  - খোরাসানে আবার শিয়া বিদ্রোহ, খারাজী দ্বারা কুয়া ও মসুল দখল,

৭৪৬  - খোরাসানে আবু মুসলিমের বিদ্রোহ,

৭৪৯  - ইস্পাহান ও নিহাওয়ান্দ-এর যুদ্ধ,

৭৫০  - (ক) আব্বাসীয়-দের দ্বারা রক্তাক্ত গণহত্যায় উমাইয়া খেলাফতের অবসান, (খ) যাব-এর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ

৭৫৫  - খোরাসানে আবার বিদ্রোহ,

৭৬২  - ইব্রাহিম ও নাফ্উজ জাকিয়া-র নেতৃত্বে শিয়া বিদ্রোহ,

৭৬৭  - সিজিলমাসা-য় খারেজী শাসনের শুরু,

৭৭২  - উত্তর আফ্রিকায় জানবি-র যুদ্ধ, মরক্কোতে বিদ্রোহী রুস্তমিদ খেলাফত শুরু,

৭৮৮  - মগরেব-এ ইদ্রিসিদ খেলাফত শুরু,

৭৯৯  - খাজার-দের বিদ্রোহ দমন,

৮০০  - উত্তর আফ্রিকায় আঘলাবিদ খেলাফত শুরু,

৮০৩  - ইমাম জাফর বারমকি-র খুন,

৮১৪  - খলিফা হারুন রশীদের পুত্র দুই ভাই আল্ আমিন ও আল্ মামুনের ভয়াবহ গৃহযুদ্ধ, আল্ আমিন নিহত,

৮১৫  - ইবনে তুবা-র নেতৃত্বে শিয়া বিদ্রোহ, কয়েক বছর যুদ্ধের পর সেনাপতি হুরমুজান নিহত,

৮২০  - খোরাসান-এ তাহিরিদ খেলাফত শুরু,

৮২৭  - মুতাজিলা-দের সাথে অন্যান্যদের বিরোধ শুরু,

৮৩৭  - জাট (ভারতের নয়) বিদ্রোহ,

৮৩৮ - আজারবাইজান-এ বাবেক বিদ্রোহ দমন,

৮৪৩  - তাবারিস্তান-এ মাজাইর বিদ্রোহ,

৮৬১  - বিদ্রোহী অভ্যুত্থানে খলিফা মুতাওয়াক্কিল নিহত,

৮৬৪  - তাবারিস্তান-এ যায়দি খেলাফত শুরু,

৮৬৬ - খলিফা মুতাসিম বিতাড়িত, নূতন খলিফা মুতা’জ

৮৬৭  - সিস্তান-এ সাফারিদ খেলাফত শুরু,

৮৬৮ - মিশরে তুলুনিদ খেলাফত শুরু,

৮৬৯ - খলিফা মুতা’জ বিতাড়িত, নূতন খলিফা দাসী-পুত্র আল্ মুহতাদি,

৮৭০ - তুর্কী বিদ্রোহে আল্ মুহতাদি নিহত, নূতন খলিফা আল্ মুতামিদ,

৮৭৩ - রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে তাহিরিদ খেলাফতের উচ্ছেদ,

৮৭৪ - দক্ষিণ ইরাকে জাঞ্জ বিদ্রোহ,

৮৯১ - কেন্দ্রীয় খেলাফত অস্বীকার করে ইয়েমেন, বাহরায়েন ও উত্তর আফ্রিকায় কারমাতিয়ান শাসনের উদ্ভব, - "Qarmaṭ and his theologian brother-in-law ‘Abdān prepared southern Iraq for the coming of the Mahdi by creating a military and religious stronghold. Other such locations grew up in Yemen, in Eastern Arabia (Arabic Bahrayn) in 899, and in North Africa".

৮৯৭ - কারমাতিয়ান দ্বারা বসরায় গণহত্যা,

৯০৫ - মসুল ও জাজিরা-য় হামদানিদ খেলাফত শুরু, মিশরে তুলুনিদ খেলাফতের উচ্ছেদ,

৯০৮ - সামানিদ খেলাফত দ্বারা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে সাফারিদ খেলাফতের অবসান॥

এর সাথে দেখে নিন "শারিয়া – অতীতের দলিল" অধ্যায়:- http://www.shariakibole.com/%e0%a6%b6%e0%a6%be%e0%a6%b0%e0%a6%bf%e0%a7%9f%e0%a6%be-%e0%a6%85%e0%a6%a4%e0%a7%80%e0%a6%a4%e0%a7%87%e0%a6%b0-%e0%a6%a6%e0%a6%b2%e0%a6%bf%e0%a6%b2/

 

Print