একটা মঞ্চ-নাটক কতদূর যেতে পারে? সমাজ বদলের রূপকার হতে পারে?
২০০৫ সালে বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো জাতিকে একটি নবজাত শিশু উপহার দিয়েছিল। মানবাধিকারের পতাকা হাতে প্রচণ্ড তারুণ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সেই শিশু অদ্যপি ধাবমান।
জুলাই ২০০৫। টরন্টোতে 'শৃঙ্গার' আয়োজিত তিন দিনের নাট্য প্রতিযোগিতায় ২২টি নাটক প্রতিযোগিতা করছে, বিচারক হিসেবে আনা হয়েছে ঢাকা থেকে বিখ্যাত অভিনেতা হুমায়ুন ফরিদী, কোলকাতা থেকে বর্ষীয়ান নাট্য ব্যক্তিত্ব রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত ও ড: দেবজিৎ ব্যানার্জীকে। তিন বিচারক সর্বসম্মতিক্রমে, যা প্রায়ই হয়না, বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো'র হিল্লা বিয়ের ওপরে "নি:শব্দ গণহত্যা" নাটককে দিলেন “বেষ্ট প্রোডাকশন” পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনয়ের পুরস্কার পান নাটকের নায়িকা নূর আফরোজ মুন্নী ও পরিচালক/অভিনেতা মোহাম্মদ জামান (কামাল)। এ রোম্যান্টিক নাটকে ইসলামী সুত্রসহ দেখানো
হয়েছে কেন তাৎক্ষণিক তিন-তালাক ইসলাম-বিরোধী। যেমন - “নবীজীর সময় থেকে শুরু করে হজরত আবুবকর ও হজরত ওমরের সময় পর্যন্ত একসাথে তিন-তালাক উচ্চারণকে এক-তালাক ধরা হত”-সহি মুসলিম ৩৪৯১, ৩৪৯২ ৩৪৯৩, সুনান আবু দাউদ ২১৯৪, বিশ্ব-বিখ্যাত শারিয়াবিদ ডঃ আবদুর রহমান ডোই-এর “শারিয়া দি ইসলামিক ল” পৃঃ ১৭৯ ও মওলানা ওয়াহিদুদ্দিনের “Women in Islam” পৃঃ ১১০ ইত্যাদি।
পরের ঘটনাবলী:-
- এ পুরস্কারের খবর দেশে ছাপা হলে পরিচালক রাকিবুল হাসান এটাকে সিনেমায় রূপ দেন "হিল্লা" নামে, অভিনয়ে রাইসুল ইসলাম আসাদ ও ইলোরা গহর।
- অনেক চেষ্টাতেও দেশের কোনো টিভি চ্যানেল এটা দেখাতে রাজী হয়নি।
- ইংরেজী সাবটাইটেল সহ ইউটিউবে দেয়া হলে "হিল্লা" দুনিয়াময় ছড়িয়ে পড়ে।
ইউরোপ-আমেরিকা-ক্যানাডা ও ভারতে বিভিন্ন ইসলামী কনফারেন্সে দেখানো হয়, বিভিন্ন ইসলামী সংগঠন সমর্থন-পত্র পাঠান। - ভারতে ইসলামিক রিসার্চ ইন্সটিটিউট মুভি'র ৩০০ ডিভিডি কপি করে প্রত্যন্ত মুসলিম নারী-সংগঠনের কাছে পৌঁছে দে।
- আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে দেখানো হয় আমেরিকার লস অ্যানজেলেস শহরে ।
- তুর্কীস্থানের ও মালয়েশিয়ার দুই মুসলিম তাঁদের ভাষায় সাব টাইটেল করে ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন যাতে তাঁদের জাতিও দলিলগুলো জানতে পারে।
- ইংল্যান্ড ও ক্যানাডায় দুজন শিক্ষক তাঁদের ক্লাসে শিক্ষা-বিষয় হিসেবে প্রদর্শন করেন।
“হিল্লা”র সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ইসলামী দলিলবদ্ধ আরো তিনটি রোম্যান্টিক মুভি বানিয়ে দেখানো হয়েছে কিভাবে কোরান-রসুল (স) দিয়েই সমাজকে ইসলামের নামে বিভিন্ন ধরণের সন্ত্রাস থেকে মুক্ত করা সম্ভব। ওটা আর অন্যান্য শারিয়া মুভি রাখা আছে hasanmahmud.com ওয়েবসাইটে। ঢাকার মিডিয়া, রাজনীতি ও সুশীল সমাজের ঢক্কানিনাদ থেকে বহুদূরে নেতা-কর্মীরা কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গ্রামে মুভিগুলো দেখিয়েছেন। ওইসব গ্রামে আর কোনদিন ইসলামের নামে জঙ্গীবাদ ঢুকতে পারবে না। দেশের অনেক সাহিত্যিক-সাংস্কৃতিক ও মানবাধিকার নেতা-কর্মী, সাংবাদিক-শিক্ষক, নারী-সংগঠন ও আলেমদের মধ্যে মুভিগুলোর ডিভিডি বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। ক্যানাডা'র “মুসলিমস ফেসিং টুমরো” সংগঠনের এই আন্দোলন ছবিসহ রিপোর্ট করেছে ইংল্যান্ড-এর ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস টাইমস, ইউ. কে। পদ্ধতিটা শান্তিপূর্ণ, এতে নেই টাকা বা নেতৃত্বের কোন্দল।
জাতি আজ ইসলামের নামে জঙ্গীবাদের দুর্যোগে পড়তনা যদি এ আন্দোলন পঞ্চাশ বছর আগে শুরু হত। আজ এই মুভিগুলো আর "শারিয়া কি বলে আমরা কি করি" বই দিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যে নীরব বিপ্লব ঘটে যাচ্ছে তার সুফল টের পাওয়া যাবে পাঁচ-দশ বছর পর। একের পর এক মুভির শো হয়েছে স্কুলের মাঠে, বাড়ীর ড্রইংরুমে, মিলনায়তনে। গ্রামে ৫টি হিল্লা বিয়ে প্রায় হতে যাচ্ছিল, কর্মীরা “হিল্লা” মুভিটি ইমামদের দেখালে তাঁরা মুভিতে দেখানো রেফারেন্সগুলো চেক করে হিল্লার ফতোয়া ফিরিয়ে নেন। আরেক গ্রামে এক নারী কেঁদে বলেছিল এ মুভি আগে দেখলে তাকে ইসলামের নামে “হিল্লা”র মাধ্যমে ধর্ষিতা হতে হত না। এক খতিব বইটা মসজিদে রেখেছেন সবাইকে পড়তে বলছেন, বইটার দলিল দিয়ে দেখাচ্ছেন কিভাবে ইসলামের নারী-বান্ধব ব্যাখ্যা দিয়ে নারী-বিরোধী ব্যাখ্যাকে পরাস্ত করা যায়। এক বিয়েতে পাত্রীপক্ষ মেহমানদেরকে দেখিয়েছে, বিমুগ্ধ পাত্রপক্ষ ডিভিডি নিয়ে গেছে তাদের গ্রামে দেখাবে বলে। একের পর এক শহরে কলেজের হোস্টেল নিবাসী ছাত্রীরা গ্রামে এসে এটা দেখে ডিভিডি নিয়ে গিয়েছে বন্ধুদের দেখাবে বলে। এভাবেই গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে বই ও মুভিগুলোতে দেখানো কোরান-রসুলের (স) দলিল দেখে জনগন আলোকিত হচ্ছে।
এ শুধু শুরু। বিলাসিতা নয় বরং জাতির প্রয়োজন ও অস্তিত্বের এই আন্দোলন আরো অনেকদুর যাবে। বাংলাদেশ থিয়েটার টরন্টো’র ২০০৫ সালের সেই ছোট্ট শিশু দুর্দান্ত তারুণ্যে দেশ-দেশান্তরে গ্রাম-গ্রামান্তরে অদ্যপি ধাবমান !!