ডয়েচেভেলে'র সাক্ষাৎকার - মেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ও শারিয়া

ডয়েচেভেলে'র সাক্ষাৎকার - মেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ও শারিয়া

 LINK:- মেয়েদের বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার ও শারিয়া – DW – 12.12.2010

নারীর জীবনে অন্যতম অধিকারের মধ্যে একটি অধিকার বিবাহ বিচ্ছেদের অধিকার৷ এই অধিকার কী বিশ্বের প্রতিটি নারী পাচ্ছেন? প্রতিটি ধর্মে নারীকে এই অধিকার কী দেওয়া হয়েছে? ইসলাম কী বলে? আর কী বলা হয় শারিয়াতে?

শারিয়া আইনে মেয়েরা চাইলেই বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেনা

ইসলামে নারীর অধিকার রক্ষার কথা বলা হয়েছে৷ একটি হচ্ছে কোন নারী যদি না চান বা ইচ্ছে না করেন তবে তিনি তার স্বামীর সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে পারেন৷ এতে ইসলামের কোন বাধা নেই৷ কিন্তু যেসব দেশে শারিয়া আইন প্রচলিত, যদি কেউ চান যে তিনি স্বামীর সঙ্গে সংসার করবেন না, তাহলে তাকে এক ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে পড়তে হয়৷ অসংখ্য নারীর জীবন তার ফলে ধ্বংস হয়ে গেছে৷

এই সম্পর্কে কী বলা হয় শারিয়া আইনে? বলা হয়, স্বামী ইচ্ছে করলেই স্ত্রীকে তাৎক্ষনিকভাবে তালাক দিতে পারেন৷ কিন্তু স্ত্রী বিচ্ছেদ চাইলে তাকে শারিয়া আদালতে আবেদন করতে হবে৷ এই ক্ষেত্রে পুরুষ এবং নারীর মধ্যে শুধু যে এই বৈষম্য সৃষ্টি করা রয়েছে তাই নয়, শারিয়া আদালত তখন স্বামীর সঙ্গে দেন দরবার করে এবং স্বামীর অনুমতি সাপেক্ষে এই বিচ্ছেদে সম্মতি দেওয়া হয়৷

বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছি, মুসলিম ক্যানাডিয়ান কংগ্রেসের ডিরেক্টর অফ শারিয়া ল এবং প্রাক্তন সভাপতি হাসান মাহমুদের সঙ্গে (আমি সভাপতি ছিলাম মাত্র কিছুদিন, কাজেই বহুদিন থেকেই ওটার উল্লেখ আমি করিনা)৷ প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এভাবে এক ধরণের বৈষম্য কী করা হচ্ছেনা? এটাই কী শারিয়া আইন? তিনি বললেন, ‘‘এটা একেবারেই শারিয়া আইন এবং এটা একেবারেই অত্যন্ত অন্যায়৷ আমি শারিয়া আইনের রেফারেন্স দিচ্ছি৷ আমাদের বিধিবদ্ধ ইসলামি আইনের প্রথম খন্ড, ধারা ৩৫৫,সাফি আইন , হানাফি আইন পৃষ্ঠা ১১২, শারিয়াতে ইসলামিক ল, পৃষ্ঠা ১৯২, সব শারিয়া আইনের বইতে এটায় আইন এবং এটা অন্যায়''৷

‘আমি তার প্রেমে পড়লাম বলেই, তাকে আমার সাথে ঘর করতে হবে৷' এমন অদ্ভুত ধারণা এই আধুনিক যুগেও অনেক মানুষের রয়েছে৷ এটা বর্বর কোন আইন হতে পারে কিন্তু ইসলাম তা বলেনি৷ দেখুন সুরা নিসা আয়াত ১৯-এ কী বলা হয়েছে, বলা হয়েছে, ‘‘নারীদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে তাদের উত্তরাধিকার হওয়া নিষিদ্ধ করা হল৷ প্রকাশ্যে অশ্লীলতা না করা পর্যন্ত তাদের দেনমোহরের অংশ ফিরিয়ে নেওয়া বা কর্কশ ব্যবহার করা নিষিদ্ধ করা হল৷'' কোরাণে এই চমৎকার হুকুমটিই দেওয়া হয়েছে৷

কিন্তু শারিয়া আইন থেকে কী তবে মুক্তি নেই মেয়েদের? হাসান মাহমুদকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, মুসলিম মেয়েরা এই অত্যাচার থেকে কিভাবে মুক্তি পেতে পারেন?

তিনি বললেন, ‘‘দেখুন ধর্মের নামে যখন অত্যাচার হয়, তখন সেখান থেকে বের হয়ে আসার মোক্ষম পদ্ধতি হলো ঐ ধর্মের ভেতর থেকেই সমাধানটা তুলে আনা৷ আমরা কোরাণ রসুল দিয়ে এই আইনটাকে পরাজিত করতে পারি, এবং মেয়েদের সম্মান রক্ষা করতে পারি৷ চলুন নবিজির কাছে যাই, সহি বুখারি ভলিউম ৭-এ, হাদিস নাম্বার ১৯৯,২০৬, দু'জন মহিলা এসে নবিজিকে বলেছিলেন, যে তারা তাদের বিয়ে অব্যাহত রাখতে চান না৷ তাদের মধ্যে একজনকে নবি বলেছিলেন যে, তুমি এই বিয়ে অব্যাহত রাখো এটা আমার ইচ্ছা৷ তখন সেই মহিলা বলেছিলেন, না, যদি আপনি হুকুম দিয়ে বলেন আমি এই বিয়ে অব্যাহত রাখবো৷ কিন্তু এটি যদি আপানর ইচ্ছে হয়, আমি এতে রাজি নই৷ দু'জন মহিলাকেই নবিজি তাদের ইচ্ছা মেনে বিবাহ বিচ্ছেদ করতে দিয়েছিলেন৷

এবারে আসুন হাদিস ১৮৮-তে ভলিউম ৭, বিবি আয়োশা বলছেন যে আল্লাহ তাদেরকে, রসুলের বিবিকে এই অধিকার দিয়েছিল, তারা চাইলে রসুলকে ছেড়ে যাবেন অথবা থাকবেন৷ উনারা রসুলের সাথে থেকেছেন৷ কিন্তু তাঁদের অধিকার তো দেওয়া ছিল৷ এখন কোরাণে সুরা আল আহজাদ -এ আয়াত ২৮ এবং সুরা নিসাতে আয়াত ১৯ এই দুই জায়গাতেই বলা হয়েছে, মেয়েদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তাদেরকে আটকে রাখবে না৷এটা সুস্পষ্ট হুকুম৷ ১৪শ বছর আগে কোরাণ, রসুল মেয়েদেরকে এই অধিকার দিয়েছিল যে তারা ইচ্ছা হলে বিয়ে অব্যাহত রাখবে ইচ্ছে না হলে রাখবে না৷ কিন্তু পুরুষতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র সেটাকে এমনভাবে পেঁচিয়ে শারিয়া আইন করেছে, যে, কোর্টে আবেদন করতে হবে৷ মাসের পরে মাস কখোনো বছর ধরে কোর্ট স্বামীর সাথে দেন দরবার করবে এবং ঐ মহিলাকে ঐ স্বামীর সাথে ঐ বাসাতেই থাকতে হবে৷ এটা একটা দাসত্বের শৃঙ্খল আমরা এটা থেকে কোরাণ হাদিস দিয়েই বের হয়ে আসতে পারি৷''

প্রতিবেদন: ফাহমিদা সুলতানা

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

Print