• Home
  • Articles
  • Islamic :: Bangla
  • ইসলামে বহুবিবাহ - কোন ক্ষেত্রে নবীজি (সা) হারাম বলেছেন?

ইসলামে বহুবিবাহ - কোন ক্ষেত্রে নবীজি (সা) হারাম বলেছেন?

ইসলামে বহুবিবাহ - কোন ক্ষেত্রে নবীজি (সা) হারাম বলেছেন? - হাসান মাহমুদ

১১টি মুসলিম-প্রধান দেশে বহুবিবাহ নিষিদ্ধ:- 1. তিউনিসিয়া, 2. আলবানিয়া, 3. কসোভো, 4. আজারবাইজান, 5. বসনিয়া, 6. হারজিগোভিনা, 7. তাজিকিস্তান, 8. . তুরস্ক , 9. তুর্কমেনিস্তান, 10. কিরঘিজস্থান ও 11. উজবেকিস্তান। ওখানেও তো আলেমরা আছেন, তাহলে বহু বিবাহ নিষিদ্ধের কারণ কি? 
 

কোরানে মুসলিম পুরুষের বহুবিবাহের অবাধ অনুমতি আছে মাত্র একটা আয়াতে, সূরা নিসা আয়াত ৩। ওহুদ যুদ্ধে অনেক সাহাবী নিহত হলে অনেক এতিম বালিকার স্বার্থরক্ষার জন্য ওটা ছিল একটা তাৎক্ষণিক সমস্যার শর্তযুক্ত তাৎক্ষণিক সমাধান যা বিবি আয়েশা (রা) বলে গেছেন। কিন্তু "এতিম বালিকার স্বার্থরক্ষার" শর্তটা গায়েব করে পুরুষের এককালীন চার বৌ-এর বিধান প্রতিষ্ঠা করেছে পুরুষতন্ত্র। সেজন্যই অতীত বর্তমানে বহু ইসলামিক স্কলার এর প্রতিবাদ করেছেন। পুরুষের এই অধিকার সরাসরি কোরানেরও বিরোধী রসূলেরও (স) বিরোধী। সেজন্যই যখন হযরত আলী (রা) দ্বিতীয় বিয়ে করতে উদ্যত হলেন তখন রসুল (সা) তাঁকে বিরত করলেন - একবার নয় দুইবার। তিনি খোদার কসম দিয়ে বলেছেন তিনি হালালকে হারাম ও হারামকে হালাল করবেন না।

মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডঃ মুহসিন খানের বোখারি-অনুবাদ ৭ম খণ্ড, হাদিস ৩৫, ৫৯ ও ৬২ (ফ্রি ডাউনলোড:- The Translation of the Meanings of Sahih Al-Bukhari - Arabic-English (9 Volumes) : Free Download, Borrow, and Streaming : Internet Archive) কিংবা দেখুন বাংলাদেশ লাইব্রেরীর প্রকাশিত আবদুল করিম খানের সঙ্কলিত সহি বোখারি পৃঃ ৬৭৮, হাদিস ২৪২৮, 

“আয়েশা (রাঃ)-কে আয়াতটি সম্বন্ধে জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন − অনেক সময় এতিম মেয়ে ধনশালী ও সুন্দরী হইলে অভিভাবক নিজেই উপযুক্ত মোহর না দিয়া তাহাকে আপনার হওয়ার সুবাদে বিবাহ করে কিন্তু এতিম বালিকা ধনবান না হইলে বা সুন্দরী না হইলে সেইরূপ করে না। এই অন্যায় রহিত করণার্থেই এই আয়াত নাজেল হইয়াছে। এতিম মেয়ে সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা নাজেল হওয়ার পর লোকেরা রসুল (দঃ)-কে শিথিলতার আশায় জিজ্ঞাসা করিলে পূর্ব কড়াকড়ি বহাল থাকার ঘোষণা করিয়া আয়াত নাজেল হইল (আয়াত ১২৭) − “তাহারা আপনার নিকট মেয়েদের সম্পর্কে মসআলা জিজ্ঞাসা করিতেছে। আপনি বলিয়া দিন, − আলাহ তোমাদিগকে তাহাদের সম্বন্ধে ব্যবস্থা দান করিতেছেন এবং পিতৃহীনা নারীগণ সম্বন্ধে তোমাদের প্রতি কেতাব হইতে পাঠ করা হইয়াছে যে, তাহাদের জন্য যাহা বিধিবদ্ধ তাহা তোমরা প্রদান কর না এবং তাহাদিগকে বিবাহ করিতে বাসনা কর।” (উদ্ধৃতি শেষ)

“এই অন্যায় রহিত করণার্থেই এই আয়াত নাজেল হইয়াছে” কথাটার মানেই হল যেখানে “এই অন্যায়” নেই সেখানে খাটাবার জন্য কোরাণ এ-নির্দেশ দেয়নি। তাছাড়া − “তাহাদের জন্য যাহা বিধিবদ্ধ তাহা তোমরা প্রদান কর না ”− এ-কথাটা দুনিয়ার অন্যান্য নারীর ক্ষেত্রে খাটে না কাজেই বহুবিবাহের নির্দেশটা এতিম বালিকাদের বাইরে খাটে না। খোদ আলাহ’র রসুল এই একই উদাহরণ রেখে গেছেন আমাদের জন্য। দেখুন একই বাংলা-সহি বোখারি, পৃঃ ৬৮৭, উদ্ধৃতি : −

হাদিস ২৪৭২ − “আলী (রাঃ) আবু জহলের কন্যাকে বিবাহ করার পয়গাম পাঠাইয়াছে জানিতে পারিয়া ফাতেমা (রাঃ) রসুলুলাহ (দঃ)-এর নিকট গিয়া বলিলেন − আপনার আত্মীয়স্বজনগণ বলিয়া থাকে যে আপনি আপনার মেয়েদের পক্ষ হইয়া একটু রাগও দেখান না। ঐ দেখুন আলী (রাঃ) আবু জহলের কন্যাকে বিবাহ করিতে চাহিতেছে। রসুলুলাহ (দঃ) বলিলেন…‘নিশ্চয় ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা। তাহার ব্যথায় আমি ব্যথিত হই। নিশ্চয়ই আমি হালালকে হারাম বা হারামকে হালাল করিতে চাহি না। অবশ্য এই কথা বলিতেছি যে, আলাহর কসম ! আলাহর রসুলের কন্যা এবং আলাহর শত্র“র কন্যা একই ব্যক্তির বিবাহে একত্রিত হইতে পারিবে না।’ এই ভাষণের পর আলী (রাঃ)বিবাহের প্রস্তাব পরিত্যাগ করিলেন।” এটা আছে মুহসিন খানের অনুদিত বোখারী ৪র্থ খণ্ড হাদিস ৩৪২ ও ৫ম খণ্ড হাদিস ৭৬।  এর সাথে যোগ করুন সূরা নিসা আয়াত ১২৭ ও ১২৮।  

নিসা ৩ মোতাবেক এতিম নাবালিকাকে বিয়ের অনুমতি একটা তাৎক্ষণিক সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান মাত্র, ব্যতিক্রম মাত্র। "ইসলামে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ" এটাই জেনারেল রুল কারণ সূরা নিসা আয়াত ৬ মোতাবেক নারীর বিয়ের বয়স তখনই হয় যখন তারা নিজেদের সম্পত্তি দেখভাল করার মতো জ্ঞানবুদ্ধি অর্জন করে, যা নাবালিকার পক্ষে সম্ভব নয়। বহুবিবাহের পক্ষের প্রতিটি যুক্তি ভিত্তিহীন। যেমন প্রধান যুক্তি হল নারীর সংখ্যা পুরুষের চেয়ে বেশি। এ দাবী সত্যি হলে দুনিয়ায় প্রতি ১জন পুরুষের বিপরীতে ৪ জন নারী হবার কথা। অথচ:- 

(1) "Male-Female Ratio of the World" - সার্চ করলে পাবেন:- "102 men for 100 women - The number of men and women in the world is roughly equal, though men hold a slight lead with 102 men for 100 women (in 2020). More precisely, out of 1,000 people, 504 are men (50.4%) and 496 are women (49.6%)".

অর্থাৎ মোটামুটি ১০১ জন পুরুষের বিপরীতে ১০০ জন নারী - অর্থাৎ পুরুষের সংখ্যাই বেশী।  ইরানের মতো বেশ কিছু দেশে পুরুষের সংখ্যাই বেশী, চীনে নারীর চেয়ে পুরুষ সাড়ে তিন কোটি বেশি। 

(2) "Male female ratio in Bangladesh 2023" সার্চ করলে পাবেন:- "According to the Census, there are more females (50.43%) than males (49.51%)".

অর্থাৎ বাংলাদেশে প্রতি হাজারে মোটামুটি নারী ৫০৫ ও পুরুষ ৪৯৫। এ দিয়েও চার কেন দুই স্ত্রীকেও বৈধতা দেয়া যায়না। রেফারেন্স সহ বিস্তারিত :-

1. Click on the link:- চার বৌ |

2. আমার "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইয়ের "চার বৌ" অধ্যায়ে - Free download:- https://hasanmahmud.com/index.php/books/sharia-ki-bole

3. সজল রোশনের সাথে আমার এই ভিডিওতে:- https://www.youtube.com/watch?v=pV-UQTwp6SA

 

 

 


Print