PEW জরীপ - বাংলাদেশের শরিয়াকরণ - ১০নং মহাবিপদ সংকেত?

PEW জরীপ - বাংলাদেশের শরিয়াকরণ - ১০নং মহাবিপদ সংকেত?

কোনো জরীপই এবসলিউট নয়, কিন্তু নিরপেক্ষ,বস্তুনিষ্ঠ ও একাডেমিক হিসেবে PEW-এর খ্যাতি আছে।  গত সপ্তাহে PEW একটা জরীপ প্রকাশ করেছে,  নাম The World’s Muslims: Religion, Politics andSociety (বিশ্বমুসলিম - ধর্ম, রাজনীতি ও সমাজ)। এ জরীপের ওপর কিছু প্রশ্ন পাঠিয়েছি ওদেরকে, এলে সবাইকে জনাব। এতে বাংলাদেশও আছে, আমি  প্রধান ৫টি  প্রশ্নোত্তর দেখাচ্ছি:-   

**প্রথম ৩টি জরীপ সাধারণ মুসলিমের মধ্যে:-

১।শারিয়া আইন হল আল্লাহ'র নাজিলকৃত আয়াত -সর্বোচ্চ - জর্ডন ৮১%, সর্বনিম্ন - আলবেনিয়া ২৪%, বাংলাদেশ ৬৫%, পাকিস্তান ৮১%

২। শারিয়া আইন একটাই, বিভিন্ন নয় বলে মনে করেন - সর্বোচ্চ - তাজিকিস্তান ৭০%, সর্বনিম্ন– তিউনিশিয়া ২০%, বাংলাদেশ ৫৭%, পাকিস্তান ৬১%

৩। নিজের দেশে শারিয়া আইন চান - সর্বোচ্চ - আফগানিস্তান ৯৯%, সর্বনিম্ন আজারবাইজান ০৮%, বাংলাদেশ ৮২%, পাকিস্তান ৮৪%

 

**পরের জরীপগুলো শুধুমাত্র শারিয়া সমর্থকদের মধ্যে:-

৪। ব্যাভিচারীকে প্রস্তরাঘাতে মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন - সর্বোচ্চ- পাকিস্তান ৮৯%, সর্বনিম্ন- বসনিয়া ২১%

বাংলাদেশ ৫৫%

৫। মুরতাদ অর্থাৎ ইসলাম-ত্যাগীদের মৃত্যুদণ্ড সমর্থন করেন - সর্বোচ্চ - আফগানিস্তান ৭৯%, সর্বনিম্ন - কাজাখস্তান ০৪%, বাংলাদেশ ৪৪%, পাকিস্তান ৭৬%

 

অনেকে বলবেন - "যা: বাংলাদেশ হবে শরিয়া রাষ্ট্র!! উন্মাদের প্রলাপ !!" একথা আমাকে ১৯৭৫ সালের দিকে বলেছিল পাকিস্তানীরা ও ইরানীরাও, আবুধাবীতে। পরে যখন গঠনতান্ত্রিকভাবে ওগুলো শারিয়া-দেশ হয়ে গেল ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে, ওরা শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থেকেছে আর এখন মোল্লাতন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসার প্রাণান্ত চেষ্টায় রক্ত ঢেলে চলেছে।  তাই ভুল যদি করতেই হয় চলুন আমরা দড়িকে সাপ মনে করার ভুল করি, সাপকে দড়ি ভাবার মত ব্লান্ডার না করি।  আমাদের শরিয়া-করণ হচ্ছে রাজনীতি নিরপেক্ষ পদ্ধতিতে যা ওদের চেয় ভিন্ন। অর্থাৎ শারিয়া-পন্থীরা ক্ষমতায় থাকুক বা না থাকুক গত বহু বছর ধরে এই প্রক্রিয়ায় দেশ শারিয়ার দিকে এগিয়ে গেছে। আমরা পছন্দ করি বা না করি এর প্রচণ্ড প্রভাব এর মধ্যেই আমরা দেখছি। ক্রমাগত দুর্বল সরকারের ওক্রমবর্ধমান দুর্র্নীতির সুযোগে ধীরে ধীরে তাঁদের প্রস্তাবিত "ইসলামী" সমাধান জনগনের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে। শারিয়া সম্বন্ধে জনগণ কিছু জানেই না। তবু বহু লোক শারিয়ার রক্ষাকর্তা হয়ে গেছেন, তাঁদের অনেকেই আবার জামাত-বিরোধীও।

  1. ছোটবেলায় দেখেছি রোজার মধ্যে হোটেলগুলো চাদর দিয়ে ঢাকা থাকত।  অমুসলিমেরা তো বটেই কোন কোন মুসলমানও বাইরে খেত তাতে আকাশ ভেঙ্গে পড়ত না।  এখন বাইরে কাউকে খেতে দেখলে  সাধারণ মানুষের একাংশ হিংস্র হয়ে ওঠে।  আমার এক বন্ধু বাসে করে যাচ্ছিল, সে দেখল গাড়িতে ভ্যাপসা গরমের দুপুরে এক যাত্রী পানি খেয়েছে বলে বাসের ড্রাইভার বাস থামিয়ে তাকে অপমান করে পথের মধ্যে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল।
  2.  নানা-নানীর কোলে মানুষ, এখন ঢাকায় বসবাসকারী একজনের কন্যার প্রথম আকিকা-উৎসবের সাতদিন আগে গ্রামের বাড়ীতে নানা মারা গেলে সাধারণ মানুষ এসে দাবী করেছে শারিয়া মোতাবেক নানী চার মাস ঘরে থাকবে, নিজের নাতির বাসা হলেও ঢাকায় যেতে পারবে না।   
  3. পঙ্গু হয়ে কয়েক বছর শয্যাগত একজনের মৃত্যু হলে সাধারণ মানুষ দাবী করেছে কাফফারা না দিলে তাঁর জানাজা হবে না কারণ তিনি এত বছর নামাজ পড়েন নি।
  4. কোনো এক কলেজের শিক্ষক ছাত্রীদের বোরখা পড়তে বাধ্য করলে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও হাইকোর্টকে এগিয়ে আসতে হয়,শিক্ষা মন্ত্রণালয় কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেছে,কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাউকে বোরকা পরতে বাধ্য করা যাবে না - জনকন্ঠ ২৬শ আগস্ট ২০১২।
  5.  রংপুরে এক এস-আই ১৯জন মেয়েকে থানায় ধরে নিয়ে আসে বোরখানা পড়ে পার্কে গিয়েছিল বলে।  সেখানেও কোর্টকে এগিয়ে এসে  সেই পুলিশকে তলব করে ও এ ধরণের অপকর্মকে নিষিদ্ধ করে - জনকন্ঠ ০৩ মার্চ ২০১০।

 

এরকম অজস্র উদাহরণ প্রমাণ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে শারিয়া আইন মেনে চলার উগ্র প্রবণতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাচ্ছে।  কি কি পদ্ধতিতে এটা হচ্ছে সেদিকে এবার তাকানো যাক।

  1. অসংখ্য মওলানা-মুফতি-মোল্লা নিয়ে দেশজুড়ে যে অনিয়ন্ত্রিত আলেম-সমাজ গড়ে উঠছে তাঁদের প্রায় সবাই নারী-নীতির বিরোধী।  এঁদের যোগ্যতার কোন দৃশ্যমান মাপকাঠি নেই, জাতির বা সরকারের কাছে জবাবদিহিতাও নেই।  এঁদের বেশীরভাগই আধুনিক রাষ্ট্রপরিচালনার কিছুই জানেন না কিন্তু অবলীলায় বিশ্বের তাবৎ সমস্যার সমাধান পেশ করে থাকেন। 
  2. দেশে শরিয়াপন্থীদের শত শত একাগ্র, কর্মতৎপর ও ধনী সংগঠন জাতির চোখের সামনে ধরে রেখেছে শুধুমাত্র ওদেরই ইসলামি-ব্যাখ্যা।  ওদের বিপক্ষে সুফী ইসলামী ধর্মতত্বের বইগুলো প্রচার প্রসারের সংগঠন নেই বললেই চলে।
  3. ওদের আছে দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান মসজিদ, প্রতি শুক্রবারে জনতাকে প্রভাবিত করার সুযোগ যা তারা পুরোটাই নিয়েছে এবং ভবিষ্যতে আরও নেবে।
  4. আলিয়া,কওমি,ফোরকানিয়া,হাফিজিয়া ইত্যাদি মাদ্রাসার সংখ্যা হবে কমপক্ষে তিন লাখ–(জনকন্ঠ ১৫ মে ২০১৩ - মুনতাসীর মামুন)।  প্রতি বছর এরা সমাজে ঢেলে দিচ্ছে লক্ষ লক্ষ শরিয়া-সমর্থক যারা উবে যায় না, সরকারী চাকুরী ও সামরিক বাহিনী সহ সমাজের প্রতি স্তরে তাদের প্রভাব খাটাতে থাকে। প্রাথমিক পরীক্ষায় পাশ করার জন্য তাদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় বলে খবর উঠেছে। ক’বছরে এ সংখ্যা যা দাঁড়াবে তার প্রভাব জাতি এড়িয়ে যেতে পারবে না।
  5. মধ্যপ্রাচ্যে লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশী দেশে বানিয়েছেন অসংখ্য মাদ্রাসা।  মাদ্রাসা আসলে শারিয়াপন্থীদের সংখ্যা বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়।  সে পরিকল্পনা এখন বেশ সফল, এক নিমেষে বহু হাজার যুদ্ধংদেহী তরুণকে রাস্তায় নামানোর প্রচণ্ড ষ্ট্রীট পাওয়ারের অধিকারী ওরা।  গত ৫ই এপ্রিল ২০১৩ ঢাকাত শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের লক্ষ লোকের সমাবেশ তার প্রমাণ।  এ বাহিনী আগামীতে অনেক বাড়বে এবং সর্বত্র এর চাপ অনুভুত হবে।  এ চাপ ঠেকানোর পদ্ধতি এখনও বাংলাদেশে অনুপস্থিত।
  6. ওদের আছে নিজস্ব দলীয় পত্রিকা এবং সেগুলোতে ইসলামের নামে গোয়েবল্‌সীয় পদ্ধতিতে প্রচারিত হচ্ছে শারিয়া-প্রচার।  পক্ষান্তরে ইসলামি দলিলের ভিত্তিতে ওদের প্রচারণার ভিত্তিহীনতা, কোরাণ-বিরোধীতা, ইসলাম-বিরোধীতা ও অসততাকে তুলে ধরার তেমন কোন পত্রিকা নেই।  চেষ্টা করে দেখা গেছে অনেক সেকুলার পত্রিকাও  এসব দলিল জাতির সামনে তুলে ধরতে ভয় পায়। 
  7. এটাও শারিয়াপন্থীদের আর একটা বিরাট সাফল্য।এরা জনগণ, সরকার, মিডিয়া, টিভি-রেডিয়ো-সংবাদপত্র প্রকাশনা সহ সারা জাতিকে ভয় পাওয়াতে সক্ষম হয়েছে। এটা আরো বাড়বে বৈ কমবে না।
  8. ২০০৬ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারী ঢাকার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনষ্টিটিউট-এ জামাত ঘোষণা দিয়েছে দেশ জুড়ে মহাশারিয়া কোর্টের জটাজাল বানানো হবে। গ্রাম উপজেলার নিয়ন্ত্রনে, উপজেলা জেলার নিয়ন্ত্রনে, এভাবে আটষট্টি হাজার শারিয়া-কোর্টের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ থাকবে ঢাকার বায়তুল মোকাররমের খতিবের হাতে।  অর্থাৎ আটষট্টি হাজার শারিয়া-কোর্টের জালে মাছের মত আটকে যাবে দেশের ভবিষ্যৎ। 
  9. সমান্তরাল বিচার ব্যবস্থা রাষ্ট্রদ্রোহীতার পর্যায়ে পড়ে কিন্তু সম্ভবতঃ এর নাম দেয়া হবে ইসলাম পরামর্শ ব্যবস্থা, মানুষ ইচ্ছে হলে নিক ইচ্ছে না হলে না নিক্‌!  ওদিকে টহল দিয়ে বেড়াবে বেসরকারী শারিয়া-পুলিশ, ‘‘স্বেচ্ছাসেবক’’ নাম নিয়ে।  গালগল্প নয়, অন্যান্য শারিয়া-দেশে নামাজ-রোজা-দাঁড়ী-বোরখা নিয়ে ভয়াবহ দোজখ সৃষ্টি করেছে এই হিংস্র শারিয়া-বাহিনী। কেউ শারিয়া কোর্টে না গিয়ে দেশের কোর্টে গেলেই ছুটে আসবে মুরতাদ-ফতোয়ার চাবুক।  স্বাধীন-চিন্তা ও ভিন্নমতের ওপরে নেমে আসবে ব্ল্যাসফেমি আইনের খড়্গ, জনগণের সাধ্য হবেনা তার বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।  বন্ধু তো দুরের কথা ভাই ভাইয়ের কাছেও মন খুলে কথা বলতে ভয় পাবে মানুষ।  গল্প নয়, এরকম হয়েছে অন্যান্য দেশে।
  10. এর মধ্যেই বিভিন্ন ব্যাপারে সরকারী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা বায়তুল মুকাররমে গিয়ে গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যা তাঁরা ইমাম-খতিবদের ডেকে সেক্রেটারিয়েটেই নিতে পারতেন।  এভাবে সুযোগ দিতে থাকলে ইরাণের শুরায়ে নিগাহ্‌বান-এর মত বায়তুল মুকাররমকে ছায়া-সংসদ করে তোলা হবে, সরকার সেটা ঠেকাতে চাইবে না, চাইলেও পারবে না।
  11. আমাদের বুদ্ধিজীবি ও সুশীল সমাজও সুশীল বালকের মত ইসলামকে ব্যাখ্যা অধিকার ওদের হাতে ছেড়ে দিয়ে বসে আছেন। তাঁরা বিশ হাজার পৃষ্ঠার বই পড়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার-অর্থনীতিবিদ হবেন কিন্তু দশ হাজার পৃষ্ঠার ইসলামি দলিল পড়ার সময় নেই।  তাঁরা ভোগেন ভয়ংকর অহংরোগ, গর্ব, একগুঁয়েমী, ‘‘একলা চলো’’ নীতি ও সাংগঠনিক ব্যর্থতায়।  টাকার জোর বা আন্তর্জাতিক সমন্নয়ও তাঁদের নেই।    
  12. ইসলামী টিভি চ্যানেল তো আছেই, অন্যান্য প্রায় প্রতিটি টিভি চ্যানেলে এক একেকটা করে ইসলামী প্রোগ্রাম চলে, প্রায় প্রতিটি সংবাদপত্রে ইসলামী অংশ থাকে।  এদের প্রত্যেকটিই শারিয়া-পন্থী।  তাঁরা কোরানের অপব্যাখ্যা করে ও নারী-বিরোধী হাদিসগুলো উদ্ধৃতি দিয়ে নারী-বিরোধী  শরিয়া আইনগুলোকে ইসলামের নামে বৈধতা দেন।   গ্রাম গঞ্জের অশিক্ষিত অর্ধশিক্ষিত জনগনের ওপরে এসবের প্রভাব প্রচণ্ড ।
  13. আ-লীগ সরকারী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করবে - দৈনিক  ইনকিলাব ২০শে আগষ্ট ২০১১)। যে বাংলাদেশে একটা বাংলা বিশ্ববিদ্যালয় নেই, যে বাংলাদেশে কয়েকটা বেসরকারী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় আছে, প্রতিষ্ঠিত ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শারিয়াবাজদের নিয়ন্ত্রনে, সেগুলোতে আমাদের সুফি ইসলামকে পরাজিত করে নির্ভেজাল  মওদুদিবাদ পড়ানো হয়।  সরকারী ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়টাও ওদের হাতেই যাবে।  অজস্র মাদ্রাসার সাথে ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়টাও পরের প্রজন্মের একটা বড় অংশকে পথভ্রষ্ট করবে যারা সমাজে প্রবেশ করবে ও সমাজকে প্রবলভাবে প্রভাবাম্বিত করবে।
  14. হাইকোর্টে ফতোয়ার বিরুদ্ধে রায় বাতিল করে সুপ্রীম কোর্টের রায় - ফতোয়া বৈধ, "শুধুমাত্র বিজ্ঞ মুফতিরাই ফতোয়া দিতে পারবেন" ইনকিলাব ১৪ মে ২০১১।  এটা যে জাতির বিরুদ্ধে কতবড় বিশ্বাসঘাতকতা তা সময়ই বলবে। "বিজ্ঞ মুফতি" কাকে বলে সেটা কে ঠিক করবে? 
  15.  আলেমরা নাকি "সরাসরি আল্লাহ'র দ্বারা সরাসরি ফতোয়া দিবার অধিকার প্রাপ্ত" (ইনকিলাব ২০শে আগষ্ট ২০১১)।"আলেম" কাহাকে বলে সেটাই ঠিক করা গেলনা গত ১৪০০ বছরে, -  লাখো "আলেম"রা পরস্পরের সাথে শুধু গালাগালি হানাহানি কামড়া-কামড়ি করে বিশ্ব-মুসলিমকে শুধু বিভক্তই করেন নি বরং অজস্র হত্যা গণহত্যা ঘটিয়েছেন ওই ফতোয়ার অস্ত্রে, এসব জাতিকে জানানো দরকার।     
  16.  ওই রায়ে বসতে পারার প্রথম সুযোগেই শোবার দাবী এসেছে ন্যাশন্যাল ফতোয়া বোর্ড গঠনের।  
  17.  বায়তুল মুকাররমের খতিবকে প্রধান বিচারপতির সাংগঠনিক মর্যাদা দিতে হবে এ দাবী বহু আগে থেকেই ছিল।   

সব মিলিয়ে আমরা দেখছি সরকারে থাকলে তো কথাই নেই, না থাকলেও বা আংশিকভাবে থাকলেও তাঁরা গ্রাম গঞ্জে এক অদৃশ্য "ইসলামী সরকার" চালাবার কাছাকাছি পৌঁছে গেছেন। উনাদের দাবীতে অনেক কিছুই আছে, নেই শুধু নারীর কন্ঠ।  গত ১৪০০ বছরে একজনও নারী শরিয়া-ইমাম নেই, নারীর ইচ্ছে অনিচ্ছের প্রতিফলন নেই, নেই নারীর জীবনে  এসব  আইনের প্রভাবের ওপর কোনো সমীক্ষা। হাতীর দুই দাঁত - একপাটি  দেখা যায় যা তাকে সুন্দর করে তোলে।   আর একপাটি দাঁত আছে লুকোনো, চিবিয়ে হাড় ভাঙ্গার জন্য।  শারিয়াপন্থীদেরও ঠিক তাই;চোখের সামনে ধরা আছে মুখমিষ্টি "মায়ের পায়ের নীচে বেহেশত" আর লুকোনো আছে ভয়াবহ নারী বিরোধী আইন। জাতির সুশীল ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক  সমাজের এখনই উচিত নারীনীতি কেন ইসলাম-সমর্থিত, এর বিরোধীতা কেন ইসলাম-বিরোধী, অন্যান্য মুসলিম দেশে মওলানাদের সমর্থনে কি ইসলামি পদ্ধতিতে সাংবিধানিকভাবে নারীনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সে ব্যাপারে কিছু পড়াশুনা করা এবং বিভিন্ন মাধ্যমে তা জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া।

কিছুটা দেরী হয়েছে কিন্তু এটা এখনও সম্ভব এবং এর বিকল্প নেই।

হাসান মাহমুদ     

১৫ই মে, ৪৩ মুক্তিসন (২০১৩)

Print