স্রষ্টার প্রতিজ্ঞা
এক ছোট ছেলের মা মারা গেছে। সে কেবলই কাঁদছে, কেবলই কাঁদছে, কতদিন গেল তবু কিছুতেই থামছে না। লোকজন তাকে কত সান্ত্বনা দিচ্ছে তবু সে থামছে না। তার কষ্ট দেখে স্রষ্টা তাকে বললেন-
‘‘আমি স্রষ্টা। তুমি এত কাঁদছ কেন?"
ছেলে কেঁদে উঠে বলল –
"আমার মা মরে গেছে!"
"মা সবারই একদিন মারা যায় । কষ্টটা সারাজীবন থাকে কিন্তু সবাই কিছুদিন কেঁদে কেটে সামলিয়ে নেয়। অনেক দিন তো হল, তুমি এখন থামো’’।
ছেলে কেঁদে বলল -
"খেলা শেষে সন্ধ্যায় বন্ধুরা কি বাসায় ফেরে আর আমি কি বাসায় ফিরি তুমি জানো না? সকালে বন্ধুরা কিভাবে ঘুম থেকে ওঠে আর আমি কিভাবে উঠি তুমি জানো না?"
ছেলেটা কাঁদতেই থাকল। স্রষ্টা বললেন -
‘‘তোমার কষ্ট দেখে আমার কষ্ট হচ্ছে। কি পেলে তুমি থামবে বল’’।
‘‘আমি যা চাইব দেবে?’’
‘‘দেব’’।
‘‘প্রতিজ্ঞা কর দেবে?’’
‘‘প্রতিজ্ঞা করছি দেব’’।
‘‘আমার মা ফিরিয়ে দাও’’।
স্রষ্টা একটু থেমে বললেন -
‘‘আচ্ছা। প্রতিজ্ঞা যখন করেছি তখন দেব, কিন্তু আজ নয়, কাল দেব। এখন কিছু কথা শোন, এর পরেও যদি
তুমি চাও আমি তোমার মা ফিরিয়ে দেব’’।
‘‘বল’’।
‘‘আমি তো স্রষ্টা, আমাকে তো সবার প্রতি ন্যায়বিচার করতে হয়। পৃথিবীতে সবাই মৃত মা’কে ফিরে পেতে
চায়। তোমাকে যদি ফিরিয়ে দেই তবে সবাইকেই ফিরিয়ে দিতে হবে, তাই না?’’
‘‘হ্যাঁ’’।
‘‘মনে কর সবাইকে আমি মা ফিরিয়ে দিলাম। তখন তারাও তাদের মা ফিরে চাইবে, আমাকে সেটাও
দিতে হবে। এভাবে সৃষ্টির প্রথম থেকে সব মা পৃথিবীতে ফিরে আসবে, তাই না? বল?’’
‘‘হ্যাঁ’’।
"এত বেশী লোক নি:শ্বাস নিলে নি:শ্বাসের বাতাসও ফুরিয়েযাবে. তখন তুমি, তোমার মা সহ পৃথিবীর সব
মানুষ, সব প্রাণী মরে যাবে। তারপর এতবেশী লাশ পচে গলে গিয়ে আমার এত সুন্দর করে বানানো দুনিয়াটা বিষাক্ত করে নষ্ট করে দেবে, তাইনা” ?
ছেলেটা ডুকরে কেঁদে উঠে বলল-
‘‘জানি না - আমি কিছু জানি না। আমার মা’ ফিরিয়ে দাও, তুমি প্রতিজ্ঞা করেছ’’।
স্রষ্টা হেসে বললেন-
‘‘বলেছি তো, কালও যদি তুমি চাও তবে আমি নিশ্চয়ই তোমার মা' ফিরিয়ে দেব। এখন বাসায় যাও. বেশ
কিছু কেতাব আমি মানুষকে দিয়েছি কিন্তু কোরাণে আমি একটা কথা দিয়েছি যা ওভাবে আর কোথাও
দেই নি। বাসায় গিয়ে পড়ে দেখ সুরা বনি ইসরাইল আয়াত ২৪, আমি কাল আবার আসব’’।
স্রষ্টা অদৃশ্য হলেন, ছেলে ধীরপায়ে বাসায় গিয়ে ওজু করে খুলল কোরাণ।
পরদিন।
স্রষ্টা এলেন। বললেন-
‘‘তুমি মনস্থির করেছ?’’
‘‘হ্যাঁ’’।
‘‘বল - আমি শুনছি’’।
ছেলেটা শান্তভাবে একটা গভীর নিঃশ্বাস নিল। তারপর গভীর স্বরে উচ্চারণ করল বনি ইসরাইল আয়াত ২৪-
‘‘হে আমার পালনকর্তা! আমি যখন শিশু ছিলাম তখন তাঁরা যেভাবে আমার যত্ন নিয়েছিলেন সেভাবে
তাঁদের প্রতি রহম কর’’।
স্রষ্টা হেসে বললেন –
‘‘আমি তার চেয়েও অনেক বেশী আদরে তোমার মা'কে রাখব, বেহেশতের সবচেয়ে সুন্দর জায়গায় রাখব".
"সত্যি রাখবে?"
“সত্যিই রাখব. এ আমার প্রতিজ্ঞা তোমার কাছে, স্রষ্টার প্রতিজ্ঞা. আর, তার জীবনের সমস্ত ভুলত্রুটি আমি
মাফ করে দিলাম, তুমি শান্ত হও’’।
"আচ্ছা".
ছেলে শান্ত হল।
স্রষ্টা অদৃশ্য হলেন। হাসান মাহমুদ