২৩শে জানুয়ারী ৪২ মুক্তিসন (২০১২) ||
‘‘উম্মতের জন্য আমার সর্বাপেক্ষা গভীর উদ্বেগ পথভ্রষ্টকারী ইমামদের নিয়া”-- রসুল (স:)- সহি ইবনে মাজাহ ৫খণ্ড ৩৯৫২ |
‘‘অথচ ক’দিন আগে গো-আযমকে দেখলাম হেটে মসজিদে যেতে যেতে টিভি ক্যামেরায় কথা বলছে” –শরিফ এ. কাফি.
উল্লাসে ফেটে পড়েছে জাতি। অবশেষে বিচারের লাঠি একাত্তরের গণহত্যাকারী গণধর্ষণকারীদের তাড়া করেছে । যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে জামাতের তখনকার আমীর গোলাম আজম ও কিছু কেন্দ্রীয় নেতাদের বিচার চলছে। জামাত ও তার সহযোগীরা দাবী করছে এ বিচার নাকি ইসলাম ধ্বংসের ষড়যন্ত্র। কি নির্লজ্জ মিথ্যা কথা! খুন-ধর্ষণের বিচার হতেই হবে, সেটাই কি ইসলাম নয়? সেটা তখনই “ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” হয় যখন খুনী ধর্ষকেরা ইসলামের মালিকানা হাতিয়ে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা করে । সেজন্যই নিজামী চটগ্রামের এক বক্তৃতায় বলেছিল জামাতের সমালোচনা করা নাকি ইসলামের সমালোচনা করা। স্পর্ধা দেখুন!! ওদের ভয়ংকর ইসলামি ব্যাখ্যাই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র যা আসলে মৌদুদিবাদ। সেজন্যই মৌদুদী'র উত্থানকালে ভারতবর্ষের বহু মওলানা তাঁকে কাফের বলেছেন, দজ্জাল বলেছেন। সৌদি পেট্রোডলার আর অপরাজনীতির ষড়যন্ত্র না হলে এই অপশক্তির মৃত্যু তখনই হত। বাংলাদেশের নোংরা রাজনীতি না হলে তাদের কোথাও জায়গা হত না, চেহারায় জনগনের ঘৃণা নিয়েই মরতে হত।
অপরাধীরা চিরকাল ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র”, “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” এসব বাহানায় নিজেদের শুধু রক্ষাই করেনি বরং প্রতিপক্ষকে হেনস্থা ও হত্যা করেছে। কারবালায় শিশু-নারী সহ ইমাম হুসেইন (রা:) কে নৃশংসভাবে হত্যার আগে ‘‘ইসলাম রক্ষা”র হুজুগ এরাই তুলেছিল। ‘‘ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই কাবার দেয়াল ভেঙ্গে তার চাদর আগুনে পুড়িয়েছিল, হজরত জুবায়েরকে কাবার ভেতরে হত্যা করেছিল। “কোরানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র” চীৎকারে এরাই ইমাম বুখারীকে আমৃত্যু নির্বাসনে পাঠিয়েছে, ইবনে খালদুনের মত "ইতিহাস বিজ্ঞানের পিতা"কে দেশে দেশে তাড়িয়ে বেড়িয়েছে, বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানীর মত দরবেশকে কাফের ফতোয়া দিয়েছে। এরা একাত্তরের ঘাতক, এরা ধর্মদস্যু, এরা আমেরিকা-ইউরোপ যেখানেই পালিয়েছে, আলখাল্লা-দাঁড়ী-টুপি পড়ে ইসলামি সংগঠনে ঢুকে পড়েছে। লণ্ডনের আবু সাঈদ, মইনুদ্দীন, নিউ ইয়র্কের আশরাফ তার জ্বলন্ত প্রমাণ। আজ গণহত্যা ও গণধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের বিচার বানচাল করতেও এরা ইসলামকে হাতিয়ার করার চেষ্টা করছে ।
ইসলামের ধ্বজাধারী এই ধর্মদস্যুরা মিথ্যের পর মিথ্যেও বলে চলেছে। অথচ কোরাণ কতবার বলেছে সত্য গোপন না করতে, মিথ্যা থেকে দুরে থাকতে- (বাকারা ৪২ - "তোমরা সত্যকে মিথ্যের সাথে মিশ্রিত করো না এবং জেনে শুনে সত্য গোপন করো না" ও হজ্জ্ব ৩০ - "মিথ্যে কথা পরিহার কর")। জাতির জানা দরকার ক্রমাগত এত নির্লজ্জ মিথ্যের শেকড় আছে তাদের মৌদুদিবাদের ভেতরেই -‘‘উদ্দেশ্য হালাল হইলে সেজন্য মিথ্যা বলা শুধু বৈধই নয় বরং বাধ্যতামূলক” । এর সাথে মিলিয়ে নিন – “বিষয় যদি আল্লাহ’র অধিকারের সহিত সংশ্লিষ্ট হয় তবে সেই ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে সাক্ষ্য প্রদানও করিতে পারে অথবা গোপনও করিতে পারে” -বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ১৩ ও ২য় খণ্ড ধারা ৫৭৫, ৫৫৯, শাফি আইন উমদাত আল্ সালিক r.৮.২ ইত্যাদি। এই হল ওদের ক্রমাগত দিনে রাতে মিথ্যাভাষণের শেকড়। ভারতের অস্ত্রে ফেলানী’র হত্যা ও কাঁটাতারে ঝুলে থাকা আমরা জানি। জামাত-নেতা সেটা আরেক ডিগ্রী চড়িয়েছে নির্লজ্জ মিথ্যাভাষণে- ফেলানীকে নাকি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।
জাতির জানা দরকার একাত্তরে জামাত নিজের জাতির ওপরেই যে হিংস্রতা করেছে তা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; এটা ওদের মৌদুদিবাদী অপদর্শনেই আছে। ওদের উদ্দেশ্যই “ইসলামি রাষ্ট্র” কায়েম করা, সেপথে যে কোনো বাধাকে যে কোনো উপায়ে সরিয়ে দেয়া ওদের ইবাদতের মধ্যে পড়ে। ‘‘উদ্দেশ্য সাধনের জন্য” যে ধর্ম মিথ্যাকে বাধ্যতামূলক করে তা অবশ্যই ভয়াবহ অধর্ম। "ইসলামী রাষ্ট্রে" জামাত নিজেদের বেকসুর খালাসের ব্যবস্থাও করে রেখেছে-ওদের "আল্লার আইনে"-এ তওবা করলে গণহত্যা-গণধর্ষণকারীদের শাস্তি হবে না- বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ধারা ১৩। এগুলো শারিয়ার হিরাবাহ যা কিনা - ‘‘সংঘবদ্ধ শক্তির জোরে আক্রমণ চালাইয়া আইন-শৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাইয়া জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করা বোঝায়। সম্পদ লুন্ঠন, শ্লীলতাহানী, হত্যা ও রক্তপাত ইহার অন্তর্ভুক্ত”- বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড ২১৮ পৃষ্ঠা। এ কেতাব তাদেরই লেখা, প্রকাশ করেছে কোনো মুনাফাখোর প্রকাশক নয় বরং আমাদের ইসলামি ফাউণ্ডেশন।
একাত্তরের গণহত্যাকারী গনধর্ষণকারীদের বিচার ইসলামেরই দাবী। এটা বানচাল করার অপচেষ্টাই ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। যারা এদেশের ওপরে বইয়ে দিয়েছে লক্ষ অশ্রু আর রক্তধারা সেই সব ধর্মদস্যুদের বিচার না হওয়াই ইসলামের বিরুদ্ধে মহা ষড়যন্ত্র।
শাস্তি তাদের হতেই হবে কারণ অতীতের বিপুল দেনা শোধ না করে আমরা ভবিষ্যতের দিকে পা বাড়াতে পারব না ।