পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান

পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান
হাসান মাহমুদ
 
অনেক বছর আগে। টরন্টোর বিখ্যাত হাই পার্কে বেড়াতে গেছি, দেখি গাছের ছায়ায় ঘাসের ওপর বসে আছে হাতির দাঁতের কাজ করা অদ্ভুত বাঁশি হাতে এক কৃষ্ণাঙ্গ তরুণ। আমি সংগীতের মানুষ, জিজ্ঞেস করাতে ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলল ওটা ওদের স্থানীয় বাঁশী, সে আফ্রিকার কঙ্গো থেকে বেড়াতে এসেছে। কিছুক্ষণ পরে দেখি আমাদের দোতারার কাছাকাছি বাদ্যযন্ত্র হাতে এক ফর্সা তরুণ। জিজ্ঞেস করাতে ভাঙ্গা ইংরেজিতে বলল ওটা ওদের বাদ্যযন্ত্র, সে চীনের দক্ষিনে দ্বীপদেশ ম্যাকাও থেকে বেড়াতে এসেছে।
 
কিছুক্ষণ পর আফ্রিকান ছেলেটা বাঁশিতে একটা গান ধরল, আমি চমকে ফিরে তাকালাম।  এই বিশ্বজয়ী "জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল" গানটা ভার্সিটি লাইফে তন্ময় হয়ে হাজারবার শুনেছি বিশ্বনন্দিত হ্যারি বেলা ফন্টে, ন্যাট কিং কোল আরো কত শিল্পীর কন্ঠে।
 
মুহূর্তে ম্যাকাও তরুণ ছুটে এসে বসে পড়ল আফ্রিকান তরুণের পাশে, তার দোতারাতেও তখন "জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল"!!
 
মুহূর্তের মধ্যে কয়েক'শো লোক যেন হ্যামিলনের বাঁশীর টানে ছুটে এসে দুই শিল্পীকে ঘিরে বসে পড়ল মাটিতে। তাদের কেউ তালে তালে মাথা দোলাচ্ছে, কেউ হাতে তালের বিট বাজাচ্ছে এবং অনেকে গুন গুন করে গাইছে জ্যামাইকা ফেয়ারওয়েল – দোতারা-বাঁশীতে বেজে চলেছে - “My heart is down - My head is turning around - I had to leave a little girl in Kingston town……..” 🙁! .
 
আর আমি মনে মনে অংক করছি।
 
কোথায় কত হাজার মাইল দূরে আফ্রিকার কঙ্গো!
কোথায় কত হাজার মাইল দূরে চীনের দক্ষিণে ম্যাকাও দ্বীপ !
তাদের থেকে কত হাজার মাইল দূরে আমেরিকার কাছে জ্যামাইকা আর আর জ্যামাইকা থেকে কত  দূরে ক্যানাডার পার্কে বিভিন্ন দেশের মানুষের এই আশ্চর্য অনুষ্ঠান।
 
এখানে নেই কোন মঞ্চ বা অডিটোরিয়াম, নেই মনোহরণ আলোক-সম্পাত বা মাইক্রোফোন ও শব্দযন্ত্র, নেই কোন তুখোড় উপস্থাপক। এ অনুষ্ঠানের পেছনে নেই মাস ধরে পরিকল্পনা বা নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ। বিভিন্ন দেশের এই শিল্পী-দর্শকরা কেউ কাউকে চেনে না জানে না কেউ কারো সাথে কথাও বলেনি, অথচ তারা নিমেষের মধ্যে কী এক মায়াময় বিনিসুতোর মালার বাঁধনে পরস্পরের সাথে বাঁধা পড়ে গেছে।
 
এই অসাধ্য সাধন কে করল?
 
সঙ্গীত।  এরই নাম সংগীতের শক্তি।
 
সভ্যতার নামে এই অসভ্য পৃথিবীতে, রাজনীতির নামে এই দুর্নীতির পৃথিবীতে, ধর্মের নামে এই হিংস্র অধর্মের পৃথিবীতে আজ এই শক্তির বড় দরকার।
 

("Jamaica Farewell" - এই অমর সংগীত লিখেছেন এবং খুব সম্ভব সুরও দিয়েছেন জ্যামাইকার Irving Louis Burgie- গেয়েছেন Harry Belafonte ও আরো অনেকে :- https://www.youtube.com/watch?v=Zh1ow6zKapQ  ).

Print