ইসলামী কনফারেন্স ও সাড়ে সাতশ ডলারের চেক !!
হাসান মাহমুদ
জীবনে এশিয়া ইউরোপ আমেরিকা কানাডায় আমার কিছু আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে বক্তৃতা দেওয়ার সুযোগ হয়েছে। অজস্র অভিজ্ঞতার মধ্যে কিছু মজার অভিজ্ঞতাও হয়েছে, তারই একটা বলছি। ২০০৭ সাল, ক্যালিফোর্নিয়ার অরেঞ্জ কাউন্টি থেকে মিহিকন্ঠে ফোন এলো - দু'মাস পরে ফুলারটন কলেজের একটা কনফারেন্সে আমাকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। যথারীতি খুশি হলাম, রাজি হলাম। অন্যের টাকায় প্লেনে আসা-যাওয়া, ভালো হোটেলে থাকা, যত ইচ্ছা যা ইচ্ছা খাওয়া, অডিটোরিয়াম ভর্তি দর্শক-শ্রোতার সামনে মঞ্চে গুণীজনের সাথে বসা, বক্তৃতা দেওয়া - ভালই তো, তাই না? যথারীতি নানারকম ফরমালিটির ফর্ম ফিলাপ করতে হলো, অফিস থেকে ছুটি নিলাম, সময়মতো ইমেইলে প্লেনের টিকিট এলো। আর তারপরেই লাগলো ল্যাঠা।
একদিন আবার মিহিকণ্ঠের ফোন এলো এবং এইরকম কথাবার্তা হলো:-
মিহি - মিস্টার ম্যামুদ (ওরা মাহমুদ বলতে পারে না), বক্তৃতার জন্য আপনি কত চার্জ করেন?
আমি - চার্জ ? কিসের চার্জ ?
মিহি - মানে আপনি কত ডলার চার্জ করেন ?
আমি - ওহ - না আমি কোনদিন আমার কোন বক্তৃতার জন্য কিছু চার্জ করিনি, করবোও না।
মিহি - তাহলে তো সমস্যা, কারণ কম্পিউটারের ফর্মে বক্তাদের সম্মানির একটা বক্স আছে, সেখানে সম্মানীর পরিমাণ বসাতে হয়। বক্সটা খালি থাকলে কম্পিউটার একসেপ্ট করে না।
আমি - আচ্ছা ওখানে শুন্য বসিয়ে দিন
মিহি - হা হা হা, বক্সে শূন্য দেখলে আমার বস আর একাউন্ট্যান্ট আমাকে পাগল বলবে।
আমি – আচ্ছা, - তাহলে এক ডলার বসিয়ে দিন।
মিহি - দেখুন এক ডলার বসালে কেউ সেটা বিশ্বাস করবে না, ভাববে আমি কিছু ঘাপলা করেছি। প্লিজ আমাকে সমস্যায় ফেলবেন না।
আমি - না না - আপনাকে সমস্যায় ফেলবো কেন - আচ্ছা সম্মানীর মিনিমাম অ্যামাউন্ট কত?
মিহি - সাতশ' পঞ্চাশ ডলার, আপনি এখানে পৌঁছালে আপনাকে চেক দেওয়া হবে।
আমি - আচ্ছা, আমার চেক রেডি রাখুন তাহলে।
পনেরো বছর হয়ে গেল, সেই চেক এখনো আমার ফাইলের ভেতর থেকে পিট পিট করে হাসি মাখা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
(ওটা ইসলামী কনফারেন্স ছিল - ইসলামের কাজ করে টাকা নেয়া নিষেধ আছে - কোরান ২: ৪১, ৭৯, ১৭৪,১৭৫, ১৭৬, ৬: ৯০, ১১: ২৯, ৫১, ১২: ১০৪, ২৬: ১৪৫, ১৬৪, ১৮০, ৩৮: ৮৬, ৪২: ২৩)।