টরোন্টোতে বিজয় দিবস অনুষ্ঠান ২০২৪ – ‘পাঁচালী’ বিতর্ক - হাসান মাহমুদ
একজন জানালেন টরেন্টোতে একগুচ্ছ সংগঠন "বিজয় পথের পাঁচালী" নামে ১৬ই ডিসেম্বর বিজয় দিবস উদযাপন করবে, কিন্তু কেউ কেউ অনুষ্ঠানের নামে "পাঁচালী" শব্দ ব্যবহারের ভাষাভিত্তিক সমালোচনা করেছেন এ ব্যাপারে আমার কি মত। আমার মতে নামটা চমৎকার। মোটাদাগে “পাঁচালী” ছিল নাচ-গান-অভিনয়ে বিষয়বস্তুর সিকোয়েন্সিয়াল অর্থাৎ অনুক্রমিক বর্ণনা। শব্দটাকে নাচ-গান-অভিনয় থেকে বের করে এনে অপূর্ব কাব্যিক দক্ষতায় "পথের পাঁচালী" উপন্যাসে ব্যবহার করেন বিভূতিভূষণ বন্দোপাধ্যায়। জীবনকে তিনি ধাপে ধাপে বা বাঁকে বাঁকে একটা সিকোয়েন্সিয়াল অর্থাৎ অনুক্রমিক পথ-ভ্রমণ হিসেবে দেখেছেন। পথের সেই ধাপ ও বাঁকগুলোর সিকোয়েন্সিয়াল বর্ণনাই "পথের পাঁচালী" যার শেষ পৃষ্ঠায় তিনি বলেছেন - "পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন - মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামে বাঁশের বনে..... পথ আমার চলে গেল সামনে শুধুই সামনে দেশ ছেড়ে দেশান্তরের দিকে, সূর্যোদয় ছেড়ে সূর্যাস্তের দিকে দিন রাত্রি পার হয়ে.....সে পথের বিচিত্র আনন্দ যাত্রার অদৃশ্য তিলক তোমার ললাটে পরিয়েই তো তোমায় ঘরছাড়া করে এনেছি....... চলো এগিয়ে যাই"……
তো, প্রতিটি শব্দের একটা দাবি আছে এবং সে দাবি মেটাতে হয়। বিজয় অনুষ্ঠানের নাম "পাঁচালী" রাখলে এই শব্দের দাবি পূরণ করতে হবে। অনুষ্ঠানে নাচ-গান বর্ণনা স্ক্রিপ্ট যে মাধ্যমেই হোক দর্শকদেরকে সেই পথে ভ্রমণ করাতে হবে যেপথ দিয়ে শতাব্দী ধরে হেঁটে এসে বিজয় দিবস ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের কাছে পৌঁছেছে। তা না হলে সেটা বিজয় দিবসের আর যাই হোক "পাঁচালী" হবে না। ভুললে চলবে না এই প্রতিটি প্রচেষ্টায় লক্ষ লক্ষ মুক্তিযোদ্ধার আত্মদানের ওপরেই দাঁড়িয়ে আছে একাত্তরের বিজয় দিবস - "মুক্তির মন্দির সোপান তলে কত প্রাণ হলো বলিদান - লেখা আছে অশ্রুজলে"। তাঁদেরকে স্মরণ না করলে আমাদের বিজয় দিবস দাঁড়ায় না। মোটাদাগে - ইতিহাসে স্বাধীনতার যে ব্যর্থ প্রচেষ্টাগুলোর পথ ধরে একাত্তরের সফল মহাবিজয় আমাদের কাছে পৌঁছেছে :-
(১) ১৯১৫ সালে কাবুলে প্রবাসী স্বাধীন সরকার (ব্যর্থ প্রচেষ্টা)
(২) মেদিনীপুরে স্বাধীন তাম্রলিপ্ত সরকার - ১৭ ডিসেম্বর ১৯৪২ (ব্যর্থ প্রচেষ্টা),
(৩) সিঙ্গাপুরে নেতাজি সুভাষ বোসের প্রতিষ্ঠিত স্বাধীন প্রবাসী সরকার - অক্টোবর ১৯৪৩ (ব্যর্থ প্রচেষ্টা),
(৪) ১৯৭১ সালে তাজউদ্দিনের নেতৃত্বে মুজিবনগরে প্রবাসী স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার ১০ এপ্রিল ১৯৭১ (সফল প্রচেষ্টা)।
বিস্তারিত তথ্যসূত্র:- 'একাত্তরের রক্তবীজ' :- https://hasanmahmud.com/index.php/articles/literature-bangla/309-2024-10-24-21-36-06