একাত্তরের চিত্রকল্প


পূবের দিকে মিষ্টি মধুর এক মায়াময় দেশ ছিল,
চাষী, কামার-কুমোর জেলে, তাঁতি সেথায় বেশ ছিল।
বারো মাসের তেরো পাবণ, টাক ডুমাডুম ঢাক ছিল,
লক্ষ বনলতা সেনের চোখে নীড়ের ডাক ছিল।
কদম-কেয়া, শাপলা-শালুক, দোয়েল-কোয়েল শিস্ ছিল,
জামাত নামে ওৎ পাতা এক কালনাগিনীর বিষ ছিল।

পাক নামে এক ঠকবাজদের দেশ বানাবার হাঁক ছিল,
পাকের ভেতর নাপাক কিছু শুভংকরের ফাঁক ছিল।
পশ্চিমেতে সুখের প্রাসাদ, পুর্বের ফুটপাত ছিল,
অপমানের অসম্মানের নিষ্ঠুর উৎপাত ছিল।
ওদের উদর ভরল যত, এদের ততই কম ছিল,
প্রতিবাদের উঠলে কন্ঠ অস্ত্র হাতে যম ছিল।
নষ্ট দেশের অষ্টপ্রহর যতই বৈরী হচ্ছিল,
বাংলাদেশের ভ্রূণ অলখে ততই তৈরী হচ্ছিল।

তারপর .....


একাত্তরের বিস্ফোরণে দোয়েল-কোয়েল পুড়ছিল,
আকাশ জুড়ে জামাত-নাপাক কালশকুনী উড়ছিল।
চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ ফুলের কলি ঝরছিল,
মুনাফেকের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছিল।
লক্ষ লক্ষ ধর্ষিতা বোন, ধর্ষিতা মা কাঁদছিল,
চতুর্দিকে শুধুই রক্ত, লাশ ও আর্তনাদ ছিল।

যে দেখেনি বুঝবে না সে, এমন কেয়ামত ছিল,
কেয়ামতেই দেশের স্বাধীনতার নেয়ামত ছিল।

মানচিত্র ভাঙ্গার গড়ার প্রচণ্ড উত্তাপ ছিল,
সেই সাথে এক বজ্রকণ্ঠে আকাশ-বাতাস কাঁপছিল।
বিশাল বিপুল তূর্য্য হাতে বিশাল বিপুল শেখ ছিল,
বিষ্ময়ে সব বিশ্ববাসী মুগ্ধ চোখে দেখছিল।
জাতির মাথায় সোনার মুকুট তাজউদ্দিন তাজ ছিল,
তাজের হাতেই স্বাধীনতার প্রলয়শংখ বাজছিল।

জন্ম-সুখের উৎসবে দেশ মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছিল,
ষোলই ডিসেম্বর সুদুরে মিষ্টি উঁকি দিচ্ছিল।

যে দেখেনি বুঝবে না সে, এমনি কেয়ামত ছিল,
কেয়ামতের শেষে জামাত-নাপাক নাকে খৎ ছিল।

অভ্রভেদী সেই সে জাতি, সেই উল্লাস, সেই বিজয় !!!
সে জাতকে আজ দেখলে বুকে বুকভাঙ্গা এক কষ্ট হয় . . . 

 

হাসান মাহমুদ
১০ই ডিসেম্বর ৪১ মুক্তিসন (২০১১)

Print