উদভ্রান্ত প্রলাপ - ফতেমোল্লা
আমার ছড়া-কবিতা-ছোটগল্পের বই
*******************************************
টিং হিং ছট
যতো না বুঝিস ততো হাততালি খুব দিস ভাই মোল্লাগুচ্ছে,
আঁতেল পাঠক লেখকের কাক এভাবেই সাজে ময়ূরপুচ্ছে !!
*********************************
মিল
শুক্রকীট ও রাজনীতিকের,
মিল বলতো কোন সে দিকের?
কোথায় গরল ভেল?
লক্ষ কোটি হন বাবাজী,
একটাই হন কাজের কাজী
বাদবাকি সব ফেল !
*********************************
স্রষ্টা ও সৃষ্টি
"স্রষ্টা বড়োই করুণাময়" - বলছো যাকে তাকে,
যাও, বলো ওই ধর্ষিতাকে, সাহস যদি থাকে !
কিংবা বলো দগ্ধ মৃত ছোট্ট শিশুর মা'কে...
ঢেকুর তুলে ধর্মবাণী বলা বড়োই সোজা,
আর কতকাল চলবে অলীক পরশপাথর খোঁজা,
স্রষ্টা তো নয় মানুষই বয় ভগ্ন বুকের বোঝা ....
*******************************
আমরা সবাই পাঁড় মাতাল !!
রহিম যেটা দেখছে পানি, করিম সেটা দেখছে কালি,
প্রশংসা যার করছে যদু, মধু তাকে দিচ্ছে গালি !
তুই যেটাকে লম্বা দেখিস, অন্যে সেটা দেখছে গোল,
আমি যেটা দুগ্ধ দেখি, তুই সেটাকে দেখিস ঘোল।
সবার চোখেই একেক রঙের চশমা, তা কেউ পাইনে টের,
সবাই একেক রঙের দেখি - একই মোক্ষ - এক রঙের।
দুই চশমায় মিললে মধুর - "স্লামালেকুম !" "সুপ্রভাত" !!
না মিললেই "ধর শালাকে", "মার শালাকে"-র সূত্রপাত। !
নিজের নিজের বিশ্বাসটাই "পরম সত্য" রূপ ধরে,
নেই পরোয়া কে হয় তাতে খুশী, কে হয় ক্ষুব্ধ রে !!
আসল সত্য কোথায় থাকে, কে জানে তার হয় কি রূপ,
বিশ্বাসেরই "সত্যে" সবাই হয়ত খুশী, নয় বিরূপ।
সত্য হাসে সুদুর থেকে। হায়রে ধরার শ্রেষ্ঠ জীব !
বন্ধ বোধে, অন্ধ ক্রোধে তুই বড় নিকৃষ্ট জীব !!!!!
মাতাল ভাবে সে ঠিক আছে! দুনিয়াটাই খাচ্ছে টাল,
বিশ্বাসের-ই "সত্য" খেয়ে আমরা সবাই পাঁড় মাতাল !
************************************************
দোহাই কবি !!
দোহাই, ফিরিয়ে দে রে পদ্য কবিতা,
জান খেয়ে নিল যত গদ্য কবিতা ।
পত্রিকা খুললেই হাজার কবির,
রাত জাগা মাথাব্যথা করে থাকে ভীড় ।
বোঝা-ই যায় না সেই সব পদ্য যে,
ভাবে ও ভাষায় মহা দুর্বোধ্য যে !
মা'র চিঠি মাঝখানে ছিঁড়লেই ঠিক,
দুখানা কবিতা পাবে খুবই আধুনিক ।
পাঠকের চেয়ে বেশী কবিদের দল,
কবিতার সাথে চাই প্যারাসিটামল !
কিংবা হয়ত সেটা দারুণ ! কি জানি!!
আমি-ই রাসভ, হলে পাইনেকো পানি !
কাছা মেরে নেমে পড়ি, আঁতিপাঁতি খুঁজি,
রত্ন মাণিক ফসকেই গেল বুঝি !
কিন্তু শুধুই ন্যাড়া মাথায় ঠকাস,
বেল খাই। হা রে মরণানন্দ দাস !
বুঝি রবি মাইকেল, বুঝি নজরুল !!
এখন দেখি রে চোখে সর্ষের ফুল।
শতকরা নব্বই নই তো আঁতেল,
অমৃতের আসরে এ কি গরল ভেল ??
কবিগণ! বাবাধন ! করে দিস মাপ,
ফতেমোল্লা'র উদভ্রান্ত প্রলাপ !
************************
বিদায় !
সঙ্গে ছিলি, গন্ধ যেমন থাকে ফুলের গায়,
ছেড়েই গেলি, গন্ধ যেমন ফুলকে ছেড়ে যায়…..
************
সুরদাস-কে (কবিগুরু)
কায়া কোথায়? ছায়ার সাথেই সবাই তো ঘর করি,
ছায়ার সাথেই বাঁচি এবং ছায়ার সাথেই মরি। (বইতে ছাপা হয়েছে ছাঁয়া - আশ্চর্য্য !
***************************
নাস্তিক-মোল্লা ?
মোল্লারা বলে নাস্তিক আমি, নাস্তিক বলে মোল্লা আমি যে,
থোড়াই কেয়ার! আমার ভেতরে কে বিরাজমান জানি আমি নিজে !
হা: হা: হা: ....
******************************************
ফেসবুক - ঘটনা ও রটনা
যাচাই করেই খবর ছেপো, যাচাই করে, যাচাই !
নইলে সবাই তোমার মাথা চিবিয়ে খাবে কাঁচা-ই !
ফেসবুকেতে মিথ্যের ঝড় "সত্য" লেবেল মুড়ে,
সেই ঝড়েতে সত্যবাবু কখন গেছেন উড়ে।
বলছে সবাই "আমার এটাই সবচে' অথেন্টিক",
কেমনে বুঝি সেই দাবীটা মিথ্যে না সঠিক ?
যৌতুকে বৌ খুন হয়েছে নাটোর বড়াইগ্রামে,
পুলিশ যুদ্ধ হয়েছে ফ্রান্স শহর নটরডামে।
আলজিয়ার্সে প্লেন ভেঙেছে, কয়েক শত মৃত,
গোপালগঞ্জে বিক্রি হচ্ছে ভেজাল দেওয়া ঘৃত।
আমেরিকায় পড়ছে ধরা জঙ্গী বাংলাদেশী,
বগুড়াতে হিল্লা বিয়ে বাড়ছে অনেক বেশী।
সবখানে যাও, সবখানে যাও করতে খবর যাচাই,
মিথ্যে খবর ছাপলে মোল্লা, কঠিন হবে বাঁচা-ই !
*******************************
স্বর্ণমৃগ !
স্বর্ণমৃগের পিছে যত ছুটি, তত আকন্ঠ ডুবে যাই ঋণে,
জীবন তো দেয় দু'হাত ভরেই, দু'মুঠোর বেশি নিতে যে পারিনে !!
********************************
সম্পর্ক
জীবনের ঘূর্ণীঝড়ে, সম্পর্ক ভাঙে ও গড়ে,
আসে যায় কত শত লোক,
বহু দরকার নেই, কমই থাকুক, সেই
সম্পর্ক প্রাণবন্ত হোক ....
****************************
পোড়া ও পোড়ানো
দীপের সাধনা শুধু পুড়বার ? নাকি শুধু পোড়াবার ?
এ রহস্যভেদে কতো পতঙ্গ পুড়ে হলো ছারখার..
*************************
মা
আল্লা দেখিনি রসুল দেখিনি, দেখিনি তাঁদের কায়া,
কিন্তু আমার মায়ের মধ্যে দেখেছি তাঁদের ছায়া !!
****************************
সাকী
গ্রন্থ সাকীর অণুতে অণুতে ঘুরে মরি যত ভেজাল সত্যে
মত্ত সাকীর তপ্ত তনুতে মহাসুখে করি আত্মহত্যে।
*************************************
অনুপস্থিতা -
তুই না এলে কার কি ক্ষতি? শুনিস মেয়ে? এই !!
কার কি এলো আর গেলো যে তুই এখানে নেই ?
তুই কি ভাবিস তোর বিহনে সৃষ্টি যাবে থেমে ?
আকাশ থেকে সবার মাথায় বজ্র আসবে নেমে ?
তুই না হলেও গায় পাখী আর চন্দ্রসূর্য্য ওঠে,
তুই না হলেও বাদল ঝরে, কদম কেয়াও ফোটে।
তোর বিহনেও আকাশ জুড়ে আঁকছে যে মেঘ ছবি,
তুই না হলেও কাব্য লেখে লক্ষ মুখর কবি।
তুই না হলেও প্রবল জীবন প্রবল বেগেই বয়,
দিগন্তরে একটা শুধু কষ্ট জেগে রয়........
*****************************
ডাক্তার !!
ডাক্তার বলে "এই বয়সে সুস্বাদু সব বাদ",
পাগল নাকি? তবে তো এই জিন্দেগী বরবাদ !
স্বাদু খাবার বাদ দিলে কি থাকল এ জীবনে? –
ধুত্তোরি ! এই বাঁচার চেয়ে সুখ ভালো মরণে।
খ্যাঁতা পুড়ি মৃত্যুদূতের!! যা ইচ্ছে তাই খাবো, -
খেতে খেতেই বাঁচবো এবং খেতে খেতেই যাবো :)!
*********************************
ধামাধরা
নকল যদি করতেই হয়, ফার্স্ট বয়ের’ই করিস ভাই ,
ধরলে ধামা, কোনো মহাপুরুষের’ই ধরিস ভাই !!!!
*************************************
এই সেনারা সেই সে নারা !!
("নারা" = শ্লোগান, যেমন "নারায়ে তকবির"। ২০০৭ সালের ২০ থেকে ২৩ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী তথা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের উপর নির্লজ্জ হামলার ওপরে)
এই সেনারা সেই সে নারা দিচ্ছে আবার, একি!
স্বাধীন দেশে ছদ্মবেশে হদ্দ পাকি দেখি!!
কথায় বলে সৈন্যদলের বুদ্ধিটা হাঁট্টুতে,
অনেক দেশই ঠকেছে এই দিল্লী কা লাড্ডুতে।
আমরা ঘোরাই পরিশ্রমে অর্থনীতির চাকা,
ওদের শুধু লেফট-রাইট আর মুখের বুলি ফাঁকা।
প্রতিরক্ষা শিকেয় তুলে গদির লোভে ক্রমে,
নিজের দেশই জয় করে সে বিপুল বিক্রমে !
আহার-বিহার, পোশাক-বাড়ী খাচ্ছে মুফৎ সব,
গরীব জাতির রক্তমাংসে ওদের মহোৎসব।
খায় যত তার কোনো কিছুই দেয়না ফেরৎ তো,
নিরস্ত্র জনতার ওপর ওদের বীরত্ব !!
এই সেনা আর চাইনে রে ভাই, চাইনে সেনাপতি,
জনগনই হয়ে উঠুক সব অগতির গতি।
এ শ্বেতহস্তি চাইনে রে ভাই, চাই গণবাহিনী,
এটাই শেখায় একাত্তরের বিজয়ের কাহিনী।
***********************************
একাত্তরেই ছিল !!!!
আজকে তোদের যা কিছু চাই, একাত্তরেই ছিল,
“বাংলাদেশী” নামের বড়াই, একাত্তরেই ছিল !!
ঐক্যবোধের শক্ত জাতি, মুল্যবোধের ভক্ত জাতি,
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিবোধ, একাত্তরেই ছিল,
ধর্মচোরার অধর্ম রোধ, একাত্তরেই ছিল !!
শিকল পরা পায়ের নাচন, শিকল ভাঙ্গার মরণ-বাঁচন,
দীপ্ত ভবিষ্যতের বাণী, ক্ষিপ্ত ধরা কালনাগিনী,
জীবন-মৃত্যু পায়ের ভৃত্য, মুক্তিপাগল প্রলয়-নৃত্য,
জন্মসুখের যন্ত্রণা তোর একাত্তরেই ছিল,
ক্ষণিক পাওয়া পরশপাথর একাত্তরেই ছিল !!
মুক্ত দেশের সুস্মিতলোক, বিশ্ববাসীর বিস্মিত চোখ,
দিব্যলোকের সেই বরাভয়, দিগ্বলয়ের মুক্ত অভয়,
নিঃস্ব জাতির বিশ্ববিজয় একাত্তরেই ছিল,
অভ্রভেদী সেই পরিচয় একাত্তরেই ছিল !!
ঐ মহাকাল দিগ্বিদিকে, সেই ইতিহাস যাচ্ছে লিখে,
রক্তস্নাত পবিত্র দেশ একাত্তরেই ছিল,
ভবিষ্যতের দিক-নির্দেশ একাত্তরেই ছিল !!
ঐ যে জ্বলে একাত্তরের মরণজয়ী শিখা,
ঝড় তুফানে পথ দেখানোর আলোকবর্তিকা !!!
******************************************
কর্মদানব চাই !!
কাজ জমেছে, কাজ !
অনেক অসমাপ্ত কাজের হিসেব হবে আজ।
কাজ জমেছে ড্রইংরুমে এবং রান্নাঘরে
কাজ জমেছে বারান্দা আর ঘরের মেঝের পরে.
কাজ জমেছে ধুলো ঝাড়ার, পোশাকে-আশাকে,
পানি দেবার কাজ জমেছে ফুলের চারাটাকে।
কাজ জমেছে গঞ্জে গ্রামে, অন্দরে বন্দরে,
আরো অনেক কাজ জমেছে চিত্তের কন্দরে।
অনেক বছর কাউকে যেন কেউ দিয়েছে ফাঁকি,
তাই দেখি আজ অনেক কাজের অনেক কাজ-ই বাকি।
হচ্ছে প্রচুর চিন্তা করা, প্রচুর কথা বলা,
সুক্ষ্মভাবে হচ্ছে শুধু কাজ এড়িয়ে চলা।
কোথাও কি কেউ নেই ?
বলবে - "তোমার কাজটা হবে করতে তোমাকেই !!
তোমার এ কাজ তোমারই কাজ! কেউ দেবে না করে!!
করনি, তাই অজস্র কাজ রয়েছে আজ পড়ে"।
চতুর্দিকে পাহাড় প্রমাণ কাজ জমেছে, তাই,
দুর হয়ে যাও বাক্যনবাব ! কর্মদানব চাই !!
***********************************************************
মেশিন
মনের মেশিন চালায় দেহ, দেহের মেশিন মন,
হায়রে মোল্লা, কে বুঝবে তোর অংকের কথন?
******************************************************
কন্যা আমার!
মাটির ভুবন পরে, মাটির ভুবন ভরে, ছন্দ লয়ে খেলা করে
-অমূল্য রতন,
নিসর্গের লক্ষ তারা, মুগ্ধ চোখে বাক্যহারা, দেখে দেখে হয় সারা
- নিসর্গের ধন।
রংধনু রং যত, লক্ষ ফুলের মত, ছোট্ট অঙ্গে শত শত
- খেলা করে তার,
কোথা রাখি কোথা রাখি! অমিয় সুখের পাখী, বুকের পাঁজরে ঢাকি
- কন্যা আমার!
সৃষ্টি-রহস্যরাশি, তারে ঘিরে ওঠে হাসি, বিপুল সুন্দর আসি’
- করে যেন মেলা,
এ যেন দণ্ডে-পলে, উছল জলধি জলে, শত পূর্ণিমা-ঢলে
- অপরূপ খেলা!
তরঙ্গ ভঙ্গে উঠি’, অনঙ্গ অঙ্গে লুটি’, সহস্র রঙ্গে টুটি
-নিমেষে নিমেষে,
লক্ষ কিরীট-চয়নে, অনির্বচন বয়নে, অপরিতৃপ্ত নয়নে
-দেখি অনিমেষে।
নীরব জলদমন্দ্র, নিথর জাগে অতন্দ্র, নিযুত সুর্য্যচন্দ্র
-অসীমের গায়,
স্থবির, জীবনহীন, গভীর মরনে লীন, দেহটিরে চিরদিন
- বহে বহে যায়।
এ ধরণী বন্ধ্যা নয়, শত বর্ণগন্ধময়, কত জন্ম কত লয়
- নাহি জানি কার,
মোর প্রাণ এইখানে, নিত্য প্রভাত-গানে, স্বর্গসুধার স্নানে
-কন্যা আমার!
মরন সহস্রধারে, দুর্র্ধষ ছোবল মারে, উন্মাদের মত নাড়ে
-ভিত্তি জীবনের,
তবু বসুন্ধরা পরে, দিক হতে দিগন্তরে, যুগ হতে যুগান্তরে
-কি খেলা প্রাণের!
সে প্রাণ তীব্রস্রোতে, অনাদি-অনন্ত হতে, ছুটিয়া এল আলোতে
-চোখের পলকে,
ঘন এ জীবন্ত নীড়ে, সায়াহ্নের সিন্ধুতীরে, ছোট্ট সুধা-বিন্দুটিরে
-দেখি অপলকে!
এ জীবন মরূতৃষা, যন্ত্রণায় লুপ্তদিশা, মরণের অমানিশা
- সর্ব অঙ্গে তার,
প্রাণ শুধু এইখানে, উষ্ণ ধমনী-টানে, মৃত্যুহীন স্পর্শদানে
- কন্যা আমার!!
*****************************************************************
একাত্তরের চিত্রকল্প
পূবের দিকে মিষ্টি মধুর এক মায়াময় দেশ ছিল,
চাষী, কামার-কুমোর জেলে, তাঁতি সেথায় বেশ ছিল।
বারো মাসের তেরো পাবণ, টাক ডুমাডুম ঢাক ছিল,
লক্ষ বনলতা সেনের চোখে নীড়ের ডাক ছিল।
পাক নামে এক অশ্বডিম্ব দেশ বানাবার হাঁক ছিল,
পাকের ভেতর নাপাক কিছু শুভংকরের ফাঁক ছিল।
পশ্চিমেতে সুখের প্রাসাদ, পুর্বের ফুটপাত ছিল,
অপমানের অসম্মানের নিষ্ঠুর উৎপাত ছিল।
নষ্ট দেশের অষ্টপ্রহর যতই বৈরী হচ্ছিল,
বাংলাদেশের ভ্রূণ অলখে ততই তৈরী হচ্ছিল।
তারপর .....
একাত্তরের বিস্ফোরণে দোয়েল-কোয়েল পুড়ছিল,
আকাশ জুড়ে জামাত-নাপাক কালশকুনী উড়ছিল।
চোখের সামনে লক্ষ লক্ষ ফুলের কলি ঝরছিল,
মুনাফেকের হাতে লক্ষ লক্ষ মানুষ মরছিল।
লক্ষ লক্ষ ধর্ষিতা বোন, ধর্ষিতা মা কাঁদছিল,
চতুর্দিকে শুধুই রক্ত, লাশ ও আর্তনাদ ছিল।
যে দেখেনি বুঝবে না সে, এমন কেয়ামত ছিল,
কেয়ামতেই দেশের স্বাধীনতার নেয়ামত ছিল।
মানচিত্র ভাঙ্গার গড়ার প্রচণ্ড উত্তাপ ছিল,
সেই সাথে এক বজ্রকণ্ঠে আকাশ-বাতাস কাঁপছিল।
বিশাল বিপুল তূর্য্য হাতে বিশাল বিপুল শেখ ছিল,
বিষ্ময়ে সব বিশ্ববাসী মুগ্ধ চোখে দেখছিল।
জাতির মাথায় সোনার মুকুট তাজউদ্দিন তাজ ছিল,
তাজের হাতেই স্বাধীনতার প্রলয়শংখ বাজছিল।
জন্ম-সুখের উৎসবে দেশ মৃত্যুঝুঁকি নিচ্ছিল,
ষোলই ডিসেম্বর সুদুরে মিষ্টি উঁকি দিচ্ছিল।
ওই যে জ্বলে একাত্তরের মরণজয়ী শিখা,
ঝড় তুফানে পথ দেখানোর আলোকবর্তিকা !
**********************************
জিহ্বা -
হবু রাজা বলে, “গবু হে মন্ত্রী শোনো,
চিত্তে আমার সুখ যে নেইকো কোনো !”,
গবু বলে- “রাজা ! তোমার তো সবই আছে !”
হবু বলে, “নেই শ্রেষ্ঠ আমার কাছে !
নিয়ে যাও যত কোটি টাকা তুমি চাও,
জগতের সেরা শ্রেষ্ঠটি এনে দাও !!”
গবু বলে, “এতে সমস্যার কি হলো?
কিসের শ্রেষ্ঠ চাই শুধু সেটা বলো !-
পোশাক? খাদ্য? অলংকার, বা বাড়ি?
বললে এখনি এনে দিতে সেটা পারি !”
হবু রেগে বলে, সেটা কি জানি হে ছাই?
সৃব শ্রেষ্ঠের সর্বশ্রেষ্ঠ চাই,
নিয়ে এসো সেটা”!
মন্ত্রী ফিরিল বাড়ি,
মুখখানা তার করি কালিমাখা হাঁড়ি,
গৃহিনী মধুরে কহিল বাঁকায়ে গ্রীবা,
“আহা মিতা, তুমি চেহারা করেছ কি বা?”
চিন্তিত গবু সমস্যা খুলি কয়,
নারী কহে, এত সমস্যা মোটে নয় !!
এসো মোর সাথে !” পতির হাতটি ধরে,
সোজা নিয়ে গেল মাংস দোকান পরে।
খাসীর একটি জিহ্বা কিনিয়া বেশ,
হেসে বলে “নাও, সমস্যা হলো শেষ।“
গবু রেগে বলে, “এ কেমন রসিকতা”?
নারী হেসে কয়, “জিহ্বা মানেই কথা !!”
আনন্দে গবু ত্রস্তে ছুটিয়া গিয়া,
পৌঁছিল রাজপ্রাসাদে জিহ্বা নিয়া।
হবুরে কহিল, দেখো রাজা দেখো, এই!
কথা হতে ভালো এ জগতে কিছু নেই !
কথা দিয়ে জোড়া দিতে পারো ভাঙ্গা বুক!
ভাঙ্গা সংসারে এনে দিতে পারো সুখ !
কথায় গড়তে পারো যে দেশ, সমাজ,
কথার শক্তি, ভেবে দেখো মহারাজ,
জগতে প্রতিটি দুখী মানুষের মনে,
যাঁরা দিয়েছেন শান্তি প্রতিটি ক্ষণে,
মহাপুরুষেরা, নবী রসুলেরা শোনো
দেননি তো বাড়ি গাড়ি বৈভব কোনো !!
দিয়েছেন শুধু অমূল্য কিছু কথা,
মানুষ পেয়েছে জীবনের পূর্ণতা !
এত কল্যাণ আর কিছুতেই নেই!
সব শ্রেষ্ঠের সর্ব শ্রেষ্ঠ এই !”
হবু বলে, “হুম! অর্ধেক শুধু হলো,
এবারে সবার নিকৃষ্ট কি তা বলো,
নিয়ে এসো সেটা!”
গবুর মাথায় বাজ !
ঘুম ভেঙ্গে কার মুখ দেখেছিল আজ !
ছুটিল বাড়িতে করিয়া পড়ি কি মরি,
ঝুলিয়া পড়িল গৃহিনীর গলা ধরি!
সন্দেহ চোখে হাসিয়া কহিল নারী,
“আজ যেন বাপু দেখি কিছু বাড়াবাড়ি !
নিশ্চয় কোনো বিপদে পড়েছ মিতা!”
গবু বলে, “সবচেয়ে নিকৃষ্ট কি তা ?”
রমনী নয়নে রহস্যবাণ হানে,
স্বামীরে তাহার কি কহিল কানে কানে।
শুনিয়া গবুর অধরে হাসি না ধরে,
গৃহিনীকে দেখে বিস্ময় ও আদরে!
তারপর ফের মাংস দোকানে গিয়া,
প্রাসাদে ছুটিল আরেক জিহ্বা নিয়া,
হবুরে কহিল, “দেখো রাজা দেখো এই,
কথার মত বিষাক্ত কিছু নেই !!
সাপের চেয়েও ছোবল পারে এ দিতে,
ধ্বংস আনতে পারে কথা পৃথিবীতে।
কথার আঘাতে ভেঙ্গে গেছে কত বুক !
কথার আগুনে পুড়ে গেছে কত সুখ !
সাজানো বাগান হয়ে গেছে ছারখার,
ধ্বংস করেছে কথা কোটি সংসার ।
প্রতারকদের মিষ্টি কথার ফাঁদে,
কত প্রতারিত কেঁদেছে, এখনো কাঁদে ।
এত বিধ্বংসী এ জগতে আর নেই !
সব নিকৃষ্টের নিকৃষ্টতম সে এই !”
হবু বলি উঠে – “গবু! ধন্য ধন্য!
পুরো রাজকোষ আজকে তোমার জন্য !!
এই পৃথিবীতে সবাইকে বলে দাও,
কথার শক্তি চিনে নাও, চিনে নাও,,
বলা হয়ে গেলে কথা তো আসে না ফিরে,
সাবধানে !!
সাবধানে কাজে লাগিও জিহ্বাটিরে !!”
(প্রেরণা :- সাহাবী রসুলকে (স) জিজ্ঞাসা করিলেন "ইয়া রাসূলুল্লাহ ! আমার ব্যাপারে কি লইয়া আপনি সর্বাধিক উদ্বিগ্ন?" রসুল (স) জিহ্বা দেখাইয়া বলিলেন - "ইহা" - সহি ইবনে মাজাহ - ৫ম খণ্ড হাদিস ৩৯৭২)।
*****************************************************************
যম-গোলাম
কারার ওই লৌহ কপাট - এখনো হয়নি লোপাট
রক্ত জমাট - মৌলবাদীর পাষাণ বেদী,
এখনো খোদার নামে - এদেশের গঞ্জে গ্রামে
যম-গোলামে - খায় মা-বোনের বক্ষ ছেদী।
এখনো হিংস্র শকুন - মানুষের খায় চুষে খুন
তপ্ত আগুন - বিষাক্ত তার ক্লিন্নকরে,
এখনো মানুষ শিকার - উন্মাদ ধর্মবিকার
দিকবালিকার - ছিন্নদেহ বিষ নখরে।
ফতোয়ার ঘূর্ণিপাকে - মা ও বোন্ ঘোর বিপাকে
দুর্বিপাকে - হাজার নুরজাহান ফিরোজা,
ধর্মের ছদ্মবেশে যত অধর্ম এসে
সোনার দেশে গাড়লো আসন ভুতের বোঝা।
একি বিভৎস ছবি - মহাকাল দেখছে সবই
দ্বীনের নবী - শিউরে উঠে চক্ষু বোঁজে,
দানবের হিংস্র হাতে মানবের অশ্রুপাতে
আর্ত মানবতার বাণী পানাহ খোঁজে।
ঈশানের বজ্রাঘাতে - ভেঙ্গে পড় জোর আঘাতে
বজ্রপাতে জ্বাল দাবানল নষ্টনীড়ে
হান তুই হানরে আঘাত, হাতে নয় কর পদাঘাত
যায় যদি যাক জীবন তাতে কষ্ট কি রে !!
**********************************************
বিপ্রতীপ
গয়না হয়না খাঁটি স্বর্ণতে, লাগেই একটু খাদ,
একটু দুঃখ নাহলে জীবনে সুখটাই বরবাদ।
বহু আনন্দ, কিছুটা অশ্রু, কিছুটা আর্তনাদ,
অনেক সখ্য, কিছু সংঘাত, কিছু বাদ প্রতিবাদ
বহু সম্মান, একটু নিন্দে, কিঞ্চিৎ অপবাদ,
অনেক স্বপ্ন সার্থক, তবু কিছু অপূর্ণ সাধ,
এটুকু দু:খ নাহলে জীবনে সুখটাই বরবাদ !!!!
বিশাল দৈত্যবাহিনীর মাঝে ছোট্ট সে প্রহ্লাদ,
গুরু গম্ভীর উঁচু হিমালয়, পাশেই গভীর খাদ,
অঢেল জ্যোৎস্না কিছু কলংক, তবে পূর্ণিমা চাঁদ।
ঝাল চাটনীতে ইকটু মিষ্টি, তবেই তো তার স্বাদ !
একটু দুঃখ নাহলে জীবনে সুখটাই বরবাদ !
***********************************
সত্য ??
কথা ও সুর - ফতেমোল্লা।
সত্য সত্য করিস না রে, করিস না তুই মন
করিস না তুই সত্য সত্য, করিস না রে মন।
এমন সত্য আছে ভবে - হাত লাগাইলে বুঝবি তবে,
জ্বইলা যাবি অঙ্গারের মতন !
সত্য সত্য করিস না রে, করিস না তুই মন
করিস না তুই সত্য সত্য, - করিস না রে মন।
ফুল দেইখা ত'র আশ না ফুরায়, মন জুড়ায় আর চৌক্ষু জুড়ায়,
ফুল আছে এক ভবের ঝিলে - কয় গুরু তার গন্ধ নিলে,
পুইড়া যাবি জহরের মতন,
ফুল দেখিলেই নিস না গন্ধ নিসনা রে তুই মন,
সত্য সত্য করিস না রে, করিস না তুই মন!
চাইর পাশে দ্যাখ এই দুনিয়ায় - কষ্ট থাইকা সবাই পালায়
কষ্ট এমন আছে যারে - কয় গুরু তুই পাইলে তারে,
পরবি মনে গহনার মতন !
কষ্ট থাইকা পালাইস না রে, পালাইস না তুই মন।
সত্য সত্য করিস না রে, করিস না তুই মন!
সবাই পিটায় ধরলে রে চোর - ডাণ্ডা মারে মারে পাথর
এক মনচোর আছে যারে - কইছে মোল্লা পাইলে তারে,
রাখবি বুকে মেহমানের মতন !
চোর ধরিলেই পিটাইস না রে - পিটাইস না তুই মন।
সত্য সত্য করিস না রে, করিস না তুই মন।
******************************
জাতি খুব কষ্ট পেয়েছিল, লক্ষ রক্তস্রোত ও রমণীর সম্ভ্রম বড় অপমানিত হয়েছিল যখন ২০০১ সালে একাত্তরের কসাইরা ক্ষমতায় এসে মন্ত্রী হয়ে জাতীয় পতাকা ওড়ানো গাড়ীতে চড়েছিল। অসহ্য যন্ত্রনায় কোটি বুক ভেঙে গিয়েছিল সেদিন। সেই বেদনার দিনে এদিন কল্পনা করাও কঠিন ছিল, কিন্তু প্রকৃতির বিধানের ওপরে ভরসা রেথে বুকে পাথর বেঁধে নীচের ছড়া দুটো আমি লিখেছিলাম।
এক মাঘে শীত
১.
তুমি কি ভেবেছ এভাবেই দিন যাবে?
এ সুখস্বপ্ন কখনো হবে না বাসী?
এভাবেই তুমি বাংলাদেশকে খাবে, -
চিরকাল র'বে তোমার কুটিল হাসি?
তুমি কি ভেবেছ হাজার বধ্যভুমী –
বিক্রী করবে ছল চাতুরীর দামে?
ঠোঁটে রক্তের দাগ মুছে ফেলে তুমি –
পার পেয়ে যাবে শুধু ধর্মের নামে?
প্রকৃতির কিছু বিধান রয়েছে বাকী, -
অন্ধ সে বিধি কাউকে ছাড় দেবে না,
কেউই পারেনি সেইখানে দিতে ফাঁকি, -
সুদে ও আসলে গুনতে হয়েছে দেনা।
পাশার এ ছক উল্টে যখন যাবে, -
বিচারের লাঠি করবে তোমাকে তাড়া,
আবার তোমার সামনে এসে দাঁড়াবে, -
বাংলার লাখো দামাল লক্ষ্মীছাড়া।
জাতি আর কোনো চাতুরীতে ভুলবেনা –
যত হও তুমি সুদক্ষ অভিনেতা,
একাত্তরকে ধর্মে যাবে না কেনা –
যতই ধূর্ত হোক ক্রেতা বিক্রেতা।
২.
লিখে রাখো এই সব কালো কালো দিন,
চিনে রাখো ওই সব কালো কালো মুখ,
জাতির মাথায় শয়তানের সঙ্গীন,
তবু দৃঢ় উন্নত রাখো হে চিবুক।
একদিন এই ছায়া উড়ে যাবে শেষে,
এ দানব পদানত হবেই হবেই,
প্রতিবাদ প্রতিরোধ পার হয়ে এসে,
প্রতিশোধে উঠে তুমি দাঁড়ালে তবেই !!
*******************
আল ভোঁদড় ! (২০০০ সালে লেখা)
আমি - আল ভোঁদড়ের "সাথে যে খেলিব মরণ খেলা,
- প্রভাতবেলা।
আমি - সুগভীর নি:স্বনে, কঠিন আলিঙ্গনে,
- কন্ঠ পাকড়ি ধরিব আঁকড়ি দুইজনা দুইজনে,
- সঘন বিস্ফোরণে
- দংশনক্ষত শ্যণবিহঙ্গ যুঝি ভুজঙ্গ সনে।"
আমি - ক্ষতবিক্ষত শান্তিকপোত, হয়েছি সর্বনাশা,
কারণ - আমার স্নিগ্ধ নীড়ে বিষধর নাগিনী বেঁধেছে বাসা।
আমি - আকাশ ফাটানো প্রলয়ংকর বিস্ফোরণের সাথে
সেই নাগিনীর মাথায় পড়ব করাল বজ্রপাতে।
আমি - রক্ত দুচোখে তীব্র তাকাব তার বিষাক্ত চোখে
আমার দেশ যে নরক করেছে তিরিশ লক্ষ শোকে।
সেই কালনাগ প্রবল জড়াব শত-সহস্র হাতে,
আমি - এই দানবের মুখোশ খুলব উদ্ধত পদাঘাতে !
ফুল-পাখী-চাঁদ, প্রেমিকার মুখ নিয়ে পড়ে থাক তোরা ,
কোরান -রসুল কঠিন কব্জা করেছে ধর্মচোরা !
ধর্মের নামে লক্ষ লক্ষ মানুষ হয়েছে বলি,
তোরা বেওকুফ !! ঘুরিস রঙ্গীন আবেগের কানাগলি ?
আসিস নাইবা আসিস, তোরা নাইবা থাকিস সাথে,
আমি - একাই সরাবো জঞ্জাল - উন্মত্ত এই দুহাতে !
বুকে তুলে নেব একাত্তরের ছিন্নতন্ত্রী বীণা,
দেখব সেখানে কোনো সুর বাকী এখনো রয়েছে কিনা !!
তারপর –
"নিশ্চল নিশ্চুপ,
আপনার মনে পুড়িব একাকী, গন্ধবিধুর ধূপ........"
**************************************
কন্যা একবার আমাকে লিখে পাঠাল – “মানুষ আমি, আমার কেন পাখীর মত মন?” এই গানটার কথাগুলো যেন লিখে পাঠাই। গানটা আমার জানা নেই - তাই এই কথাগুলো লিখে পাঠালাম :-
নকল !
মানুষ আমি, আমার কেন পাখীর মত মন?
আমায় কেন করল বিধি এমন অযতন?
গাইতে যে চাই পাখীর মত, উড়তে অনেক দূর,
হায়রে যে নেই পাখীর ডানা, পাখীর মতন সুর।
নেইতো আমার পাখীর আঁখি, চাউনি পাখীর মত
তাই পাখী মন সারাজীবন হয় ক্ষতবিক্ষত।
পাখীর শান্তি নেইতো আমার, পাখীর ভালবাসা,
বিষন্নতা তাই বেঁধেছে এই বুকে তার বাসা।
পাখীর আছে সন্ধ্যাবেলায় স্নিগ্ধ ফেরা নীড়ে,
আমার শুধু হারিয়ে যাওয়া, অন্ধকারের ভীড়ে।
কন্যা প্রথমে বিশ্বাস করল এটাই সেই গান - কিন্তু পরে গানটা জোগাড় করে দেখল গানের কথা প্রথম লাইন ছাড়া বাকী একটুও মিলছে না !! এই নিয়ে আমরা এখনো হাসাহাসি করি !!
*************************************
পিচ্চি মিতা!
অনেক আগে যখন ফেসবুক ছিলনা, আমি ফুল ফোর্সে ইসলামের জঙ্গী ব্যাখ্যাকে পিটাচ্ছি। ইমেইল পেলাম:- " আমার নাম এই, আমি ক্লাস নাইনে পড়ি। তোমাকে নিয়ে আম্মু আর আব্বু খুব ঝগড়া করে। আম্মু তোমাকে খুব পছন্দ করে কিন্তু আব্বু তোমাকে দেখতে পারে না। আমি পেন ফ্রেন্ড করি - অনেক দেশে আমার অনেক মিতা আছে, তুমি আমার মিতা হবে?" হাসি পেল, বললাম -"আচ্ছা, হলাম"! এরপর পিচ্চি আমাকে কিছু ইমেইল করল জবাবও দিলাম। কিন্তু ব্যস্ততার জন্য ফলো আপ করতে পারলাম না, মেয়ে আমাকে ইমেইল করে করে শেষে ক্ষ্যান্ত দিল।
বছর কয়েক পরে মেইল পেলাম - "মিতা! আমাকে মনে আছে? আমি এখন ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ি"! জবাব দিলাম - "বাহ, বাহ, তোমার নামটা যেন কি"? মেয়ে ফেটে পড়ল– “কি?? তুমি আমার নাম ভুলে গেছ ? কেমন মিতা তুমি? আমি আর কোনদিন তোমার সাথে কথা বলব না”!! তখন তাকে আমি এটা পাঠাই –
মিতা!
কে আমি আর কে তুমি তা, - একটু খুলে বলবে, মিতা?
শুধুই তুমি নামের বানান? - ভুলে গেলেই করবে গো মান?
নামটা তোমার ভুলতে মানা, - তুমি কেবল সেই ঠিকানা?
নামের খ্যাতি পাবার জন্যে, - ছুটুক সবাই পাগল হন্যে -
নও তুমি ওই অন্ধ কুয়ার, - বাসিন্দা! এই বন্ধ দুয়ার
খুলেই দ্যাখো আকাশ জুড়ে, - আলোর পাখী যাচ্ছে উড়ে !
অসীম প্রভায় দিক দিগন্ত - যাচ্ছে ভেসে যুগ যুগান্ত।
ফুটছে ফুলের মিষ্টি হাসি - ঝরছে মেঘের বৃষ্টিরাশি -
পদ্মপত্রে জলের ধারায় - নাম হারালে কিই বা হারায়?
মগ্ন সবাই নিজের গানেই, - নামের ধাঁধায় কেউ বাঁধা নেই।
নামের ভুলে কি আসে যায়? সব নামে জুঁই সুবাস ছড়ায়।
রাগ কোর না ! মাথার মধ্যে, - পদ্য তো নেই, কঠিন গদ্যে
জ্বলছে আগুন বিস্ফোরণে – লড়ছি মরণ-বাঁচন রণে।
লক্ষ নুরজাহান ফিরোজা, - চলছে বয়ে ভুতের বোঝা!
ওদের আমি ভাই, সেটা কি, - চাইবে তুমি ভুলেই থাকি?
পুড়ছে আমার লক্ষ বোনেই, - তাই এ মাথায় জায়গা তো নেই -
হাজার হাজার তত্ব তথ্যে, - ভর্তি মাথা মিথ্যে-সত্যে।
তোমার শুধু ভুলেছি নাম, - তোমায় মনে রেখেছিলাম !!
বিস্মরণের স্মৃতি নিয়ে, - আছিই সখী, হাত বাড়িয়ে !
মিতা।
মেয়ে আর যোগাযোগ করেনি, আমার পিচ্চি মিতা হারিয়ে গেছে জীবন থেকে !!!!
**********************************
প্রজন্ম সংলাপ - (বৃদ্ধ ও যুবকের সংলাপ)
যুবক:- আমার দিকে অমন নিবিষ্টে কি দেখছো, বৃদ্ধ?
বৃদ্ধ:- তুমিও তো আমার দিকে তাকিয়ে আছো, যুবক !
যুবক:- আমি তো তোমাকে শুধু দেখছি। কিন্তু তুমি তো আমাকে যেন একেবারে দর্শন করছ !
বৃদ্ধ:- হ্যাঁ, দর্শনই করছি। অনেক, অনেক দূর থেকে।
যুবক:- দূর কোথায় ? এই তো আমরা কত কাছাকাছি !
বৃদ্ধ:- উড়ন্ত সময়ের দূরত্ব যুবক, দুরন্ত প্রজন্মের দূরত্ব !
যুবক:- ও ! হ্যাঁ, তা ঠিক,
বৃদ্ধ:- তুমি সুন্দর ! তোমার দেহসৌষ্ঠব যেন গ্রীক দেবতা !
যুবক:- তোমার দেহ, দোমড়ানো খবরের কাগজ।
বৃদ্ধ:- তুমি শক্তিশালী। তুমি বইতে পারো অনেক ভার।
যুবক:- তুমি শক্তি হীন। নিজেকে বইতেও তোমার কষ্ট।
বৃদ্ধ:- তুমি শাখায় শাখায় পল্লবিত, তোমার দুচোখে দীপ্ত দ্রোহ।
যুবক:- তুমি বজ্রাহত বনস্পতি, তোমার দুচোখ যেন মৃত মাছের চোখ !
বৃদ্ধ:- হাঃ হাঃহাঃ কিন্তু এই চোখ দিয়েই আমি দেখতে পাচ্ছি তোমার মাথার ভেতর। ওখানে অনেক জঞ্জাল
জমেছে।
যুবক:- হাঃ হা হা - উপহার, উপহার, জঞ্জালই এ যুগের শ্রেষ্ঠ উপহার। এতো জঞ্জাল মাথার ভেতরে, কি করি
বলতো !
বৃদ্ধ:- স্নান করো ! স্নান করো, সর্বদা !
যুবক:- সে তো করিই, প্রতিদিনই করি !
বৃদ্ধ:- সে স্নান নয় ! সাংস্কৃতিক স্নান করো, মাথার জঞ্জাল ধুয়ে যাবে।
যুবক:- তুমি ! তুমি তো অসুন্দর নও ! তুমি তো সুন্দর তোমার জ্ঞানে !! ......এমন নিবিষ্ট কি দেখছো আবার
আমার দিকে?
বৃদ্ধ:- তোমার মাথার ভেতরে দেখছি কালবোশেখী ঝড় !
যুবক:- হাঃ হাঃ হাঃ - কালবোশেখী এখন সবারই মাথায় !
বৃদ্ধ:- আর, তোমার বুকের ভেতরে দেখছি একটা ঝরা ফুল !
যুবক:- (উদ্বিগ্ন) আ - আর কিছু দেখছো না তো ! আর কিছু দেখোনা যেন !
বৃদ্ধ:- আর, তোমার বুকের ভেতরে দেখছি একটা মরা পাখী !
যুবক:- (আর্তনাদ) না ! না না - থামো থামো !!!
বৃদ্ধ:- আর, আর দেখছি একটা ছায়া ছায়া মুখ.... অস্পষ্ট যেন এক বনলতা সেন !!
যুবক:- (ভেঙ্গে পড়ে) না না, দেখোনা, দেখোনা প্লীজ !! অন্ধকারেই থাকুক...অন্ধকারেই থাকুক... !
বৃদ্ধ:- আচ্ছা, দেখবো না। থাকুক, অন্ধকারেই থাকুক। কলহ, ঘৃণা, এমনকি হত্যাও আমরা
করতে পারি উজ্জ্বল রাজপথে, কিন্তু এক টুকরো ভালোবাসার জন্য অন্ধকারটা আমাদের বড়ো দরকার !
যুবক:- তুমি !! তুমি তো শক্তিহীন নও ! তুমি শক্তিশালী তোমার প্রজ্ঞায়! বলো! বলো বলো, মন দিয়ে শুনছি!
বৃদ্ধ:- শোনো। ছেড়ে যাবার আগে....সে তোমাকে... "হে বন্ধু, বিদায়!" বলেছিল ?
যুবক:- হ্যাঁ, বলেছিল।
বৃদ্ধ:- তুমি তাকে "যেতে নাহি দিব"!!! বলেছিলে?
যুবক:- বলিনি! একবারও বলিনি!! শুধু, - শুধু পাথর চোখে তার চলে যাওয়া দেখেছিলাম।
বৃদ্ধ:- তুমি শুধু তাকেই নয়, তুমি তোমাকেও প্রতারিত করেছ। সে কখনোই তোমার প্রিয় ছিলনা।
যুবক:- তুমি - তুমি কিভাবে জানো?
বৃদ্ধ:- আমি জানি, আমি জানি ! আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি !
যুবক:- কিভাবে দেখতে পাচ্ছ? আমি, - আমিও দেখতে চাই তোমার বুকের ভেতরে। দেখতে চাই ওখানেও আছে
কিনা কোনো ঝরা ফুল আর মরা পাখী!
বৃদ্ধ:- পারবে না যুবক, পারবে না !
যুবক:- কেন পারবো না ? তুমি দেখতে পাবে আমার ভেতরে, আমি কেন পারবো না????
বৃদ্ধ:- কারণ তুমি যেখানে আছো, সেখানে আমি একদিন ছিলাম। আমি যেখানে আছি, সেখানে তুমি এখনো
আসোনি।
*****************************
গণজাগরণ মঞ্চ -
ওই শোনো ভৈরব গর্জন জনতার,
প্রবল বন্যা স্রোতে, এলো দশ দিক হতে,
এ দারুণ সময়ে সে আহ্বান শোনো তার ।।
"জয় বাংলা" ফিরে এলো ঝড়ো গতিতে,
বিকৃত ইতিহাস ছুঁড়ে ফেলে অতিতে।
বিস্ফোরণে কাঁপে প্রজন্ম চত্বর,
ফিরেছে হুহুংকারে তুমুল একাত্তর,
তিরিশ লক্ষ লাল রেখা তুমি গোনো তার,
ওই শোনো ভৈরব গর্জন জনতার !!
নতজানু বিচারের রায় নয় সুবিচার
ধর্ষিতা নিহতের প্রতি ঘোর অবিচার।।
চল্লিশ বছরের জঞ্জাল সরিয়ে,
নষ্ট রাজনীতির ভিত দিল নড়িয়ে,
এ ফেরার পথ ছিল দু:সহ, দুর্গম
পায়ে দলে ছুটে এলো প্রজন্ম দুর্দম,
দুর্বার ছুটে এলো - ভয় নেই কোনো তার,
ওই শোনো ভৈরব গর্জন জনতার !!
************************
অমোঘ
হাসান মাহমুদ
বাগান হোক না শত, ঝড়ে ক্ষতবিক্ষত - নামহীন কোনো ফুল ফুটবেই,
দূর দুরান্ত থেকে, যুগ যুগান্ত থেকে - কলিতে অলিরা এসে জুটবেই!
তীক্ষ্ণ খরার পরে, খালবিল নদী ভরে - উত্তাল জল ছল ছলবেই,
ক্ষুদ্র মরণ শেষে, রুদ্র জীবন এসে - জীবনের রূপকথা বলবেই !
হোক পথ দু:সহ, দুর্গম ভয়াবহ - দু'এক পথিক পথ চলবেই,
বোধের বন্ধদ্বারে, নিকষ অন্ধকারে - বিদ্রোহী কিছু দীপ জ্বলবেই !!
BANGLADESH
*************************
বিশ্ব-একুশের মর্ম-সংগীত
কথা ও সুর - ফতেমোল্লা
কণ্ঠ - ড: মমতাজ মমতা ও তাঁর ছাত্রছাত্রী বৃন্দ
দিগন্তরে,
অমর একুশে যুগ যুগান্তরে,
ছড়িয়ে গেলো আজ কি মন্তরে,
মুক্তিকামী মানুষের অন্তরে ।।
ওই একুশে - একুশে - একুশে !!
রফিক সালাম,
দেশ বিদেশে ছড়িয়ে গেলো নাম,
দেশ বিদেশে সবে জানালো সালাম ।।
রক্তরাগে,
শহীদ মিনার কি অলক্ত রাগে
বিশ্ব বীণায় বাজে সপ্ত রাগে ।।
ওই একুশে - একুশে - একুশে !!
কি ঝংকারে
বিশ্ব ললাটে জ্বলে অহংকারে,
একুশে রক্তক্ষতের অলংকারে ।।
ওই একুশে - একুশে - একুশে !!
এসো সবে,
বিশ্ব মাতৃভাষার এ উৎসবে,
বাংলার দানে ধরা ধন্য হবে ।।
এসো এসো ভাই,
অমর একুশের জয়গান গাই,
মায়ের ভাষার বড় নাই কিছু নাই ।।
ওই একুশে - একুশে - একুশে !!
*************************************
কথা
কথা ও সুর - হাসান মাহমুদ
বলতে কথা বলছ তুমি! কি বলব ভাই! বঙ্গভূমি -
যাচ্ছে ভেসে কথার তোড়ে, - বিশ্ব মারে মুখের জোরে !
চাপা'র চোটে কান পাতা দায়, - ফুটছে যে খৈ হাজার কথায়...
কথার কোথায় দেখলে অভাব? চতুর্দিকেই বাক্যনবাব !
এখন শুধু এটাই প্রথা, মিষ্টি মধুর মিথ্যে কথা,
ছেঁদো কথার বকবকানি, কথা-ই আছে নেই তো বাণী।
ধর্মচোরা বড্ড চ্যাঁচায়, কথার প্যাঁচে ধর্ম প্যাঁচায়
রাজনীতিকের কথার ফানুস, - উড়ছে দেদার পুড়ছে মানুষ…
নীরব কথাও, যেমন ধরো - ধর্ষিতা শিশু কেমনতরো,
অশ্রুভেজা মুক চোখে কয় ! সে অশ্রুকে মুক্তো কে কয়?
সে অশ্রু এই জাতির গালে, চপেটাঘাত রোজ সকালে।
অস্ফুট সব কথাও আছে, - আকাশ বাতাস নদীর কাছে ।
লক্ষ ছেঁড়া শাড়ীর ভাঁজে, - লাখ এতিমের বুকের খাঁজে।
রক্তে ভেজা দুর্বা ঘাসে, - একাত্তরের লক্ষ লাশে।
কথার পিঠে কথা আরো, - আছে, বুঝে নিতেই পারো
সবাই কথা বলছে রে ভাই, - যাচ্ছে চেপে আসল কথাই।
যেই কথাটা সবার জানা, - কিন্তু তবু বলতে মানা।
রয়েই যাবে সেই কথা কি, - বুকের খাঁচায় বন্দী পাখী?
কইছে কথা দেয়াল লিখন, - বড়ই সুক্ষ্ম, বড়ই চিকন !
ভুলিসনে তুই কথার ফেরে, কেউ গোকুলে উঠছে বেড়ে !!!!
*************
সর্বনাশা পথের পথিক
কথা ও সুর - ফতেমোল্লা
কণ্ঠ - মণিকা রশিদ।
সর্বনাশা পথের পথিক দেখো যদি কখনো,
চুপ ! তাকে কোনো কথা তুমি, কোনো কথা যেন বোলনা !!
কোন অচিন ধরণে, গড়া সে অচিন গড়নে
আলোতে ছায়াতে বাঁধা সে চিরদিন হিয়ার চরণে।
সেই জানে কার সন্ধানে, তার চলা তো শেষ হলোনা ,
চুপ ! তাকে কোনো কথা তুমি, কোনো কথা যেন বোলনা !!
কার অরূপ ইঙ্গিতে, কোন অপরূপ সংগীতে
ভেঙেছে গড়েছে ভেঙেছে কতবার কতনা ভঙ্গীতে !
কি কাতর, পরশপাথর তার খোঁজা তো শেষ হলো না ...
চুপ ! তাকে কোনো কথা তুমি, কোনো কথা যেন বোলনা !!
সর্বনাশা পথের পথিক দেখো যদি কখনো,
চুপ ! তাকে কোনো কথা তুমি, কোনো কথা যেন বলোনা !!
******************
সমাপ্তি
আঁধার গগন ঘোর অমানিশা, ছুটন্ত পাখী বিলুপ্ত দিশা, অসহ দহন অসহ্য তৃষা,
অনন্ত পারাবারে,
ছুটে চলি শুধু মহাকাল মাঝে, এ অন্ধকারে কিছু দেখি না যে, অস্ফুটে শুধু শুনি সুর বাজে –
অচিন বীণার তারে !
কিছু যায় বোঝা কিছু বা না যায়, মৃণ্ময় বীণা কে ওই বাজায়, পলে বিদীর্ণ পলকে সাজায়
কৌতুক লীলাভরে,
জীবনের যুগ-যন্ত্রণা যত, সব ভুলে গিয়ে শুনি অবিরত, অস্ফুটে এ ধমনীতে নিয়ত
কার গান খেলা করে !!
স্রষ্টা সৃষ্টি জানিনে জানিনে, কেবা প্রভু কেবা দাস তা মানিনে, বেদ-বাইবেল-কোরাণ টানিনে
জটিল চিত্রলিখা,
স্বর্গ-নরক, দুরে সরে থাকো ! শেষ বিচারের রায় চাই নাকো, অনন্ত স্নেহে শুধু ঢেকে রাখো
মাটির পুত্তলিকা।
শেষ পারানির কড়িটি গুছায়ে, জীবনের শেষ অশ্রু মুছায়ে, ধীরে চলে যাবো ঘন বনছায়ে - সে বীণার সন্ধানে,
থাকুক পেছনে পুরানো ধরণী, অজস্র স্মৃতি অলখ বরণী, ভেসে চলে যাবো ভাসায়ে তরণী
শেষ মিলনের টানে - - - -
******************************************
কন্ঠ !!
কন্ঠ তোমার সুকন্ঠী এক ময়ুরকন্ঠী রাতের নীল,
অঝোর ঝরা বাদল রাতে রবীন্দ্র কাব্যের মিছিল।
কন্ঠ তোমার ঝড়ের পরে আম কুড়োনোর হট্টগোল,
গভীর রাতে দূর নদীতে জোয়ার আসার অট্টরোল !
কণ্ঠ তোমার মির্জা গালিব, তাজমহলের আগ্রাতে,
হাফিজ-রুমী আর খৈয়াম তাজমহলের মাঝরাতে।
কন্ঠ তোমার জীবনানন্দ, উড়ুক্কু সেই এতিম চিল,
শ্রাবণ রাতে মেঘ মল্লার, সা-রে-মা-পা-নি-সা'র মিল !!
কন্ঠ তোমার ক্লিন্নদেহে পবিত্রতার গঙ্গাস্নান,
ক্ষিপ্ত স্নায়ুর অস্থিরতায় আবেশ বিভোল ঘুমের টান।
কন্ঠ তোমার ছুট গতিতে একটু যতি'র স্নিগ্ধ মুখ,
লক্ষীছাড়ার লাগাম টেনে লক্ষীছেলে হবার সুখ !
কণ্ঠে তোমার অসহ্য সুখ ! ও নন্দিত সংগীতে,
খুন হলো এক মুখর কবি, আনন্দিত ভঙ্গীতে !!
*************************************
সাধু অসাধু
সাধু ও অসাধু যবে মেলে পরস্পরে,
অভিজ্ঞতা হুঁশিয়ার করে উচ্চ স্বরে -
"সাধু সঙ্গে কদাচিৎ হয় স্বর্গবাস,
অসৎ সঙ্গে সদা হয় সর্বনাশ" !!
****************************
সিরাতুল জিলাপী !! (২০০০ সালে লেখা)
নূরানী এ চেহারায় দেখাই যে দুঃখ,
মাথায় কিন্তু ভাই প্যাঁচ খেলে সুক্ষ্ম।
আওয়ামী-বিএনপি’রা লড়ে হোক কুপোকাৎ,
ফাঁকতালে আমাদের হয়ে যাবে বাজিমাৎ !
এমন দাবড়ে দেব শারিয়ার ডাণ্ডা,
কাফের ও মুশরিক হয়ে যাবে ঠাণ্ডা
মানবাধিকারে কেউ করলে টুঁ শব্দ,
বিকট হুহুংকারে করে দেব জব্দ।
মুরতাদ-ফতোয়ায় কাটব যে কল্লা,
তাই দেখে দুনিয়ায় হয় হোক হল্লা।
খাবি খাবে হাইকোর্ট ফতোয়ার ধাক্কায়,
তখন দেখবি মাথা কত ঘুরপাক খায়!
প্রচুর সর্ষেফুলে ভির্মি-ই খাবি সব,
জামাত-শিবির ধেড়ে-নৃত্যে মহোৎসব,
দেখে হবে দুনিয়ার চক্ষু চড়কগাছ,
জামাতে পিছলামি’র তুমুল বাঁদর নাচ।
জামাতের মাদ্রাসা হবে শত লক্ষ,
বেরোবে পঙ্গপাল জামাতের পক্ষ।
আর্মি ও সরকার ভরে দেব তা দিয়ে,
কোথা যাবি পিছলামী রাষ্ট্রটা না দিয়ে ?
ভুতের উলটো পায়ে প্রচণ্ড গতিতে,
ছুটবে বাংলাদেশ, বহুদূর অতিতে।
নারী-অধিকার হবে অতীব নিষিদ্ধ,
বৌকে-পেটানো হবে আইনতঃ সিদ্ধ।
তালাক সাক্ষ্য আর উত্তরাধিকারে,
পিষে যাবে মেয়েগুলো জামাতের শিকারে।
মাথা থেকে পা-ঢেকে কাপড়ের বস্তায়,
ঘুলঘুলি চোখে ভুত চলবে যে রাস্তায়।
নারীরা থাকবে চার দেয়ালের ভেতরে,
চা-র জেনানা! উফ্! বলব কি সে তোরে!
হঠাৎ তালাক দিয়ে বড় বৌ বুড়িকে,
আনব কলমা পড়ে নধর এক ছুঁড়িকে।
মহাসুখে চার বৌ বদলাব বারবার,
ভাবছ কি নৃশংস জামাতির কারবার?
মোদুদি’র ইসলামে এতে কোন মানা নেই !
আফসোস! তোমাদের কিছুই যে জানা নেই !!
মুখভরা মিঠে কথা বুকভরা তেতো বিষ,
এটাই তো জামাতের রহস্য, তা জানিস?
পিটিয়ে তাড়াতে হবে এদেশের হেঁদুদের,
বইবে নহর জামাতিছলামী সে দুধের।
আটকানো বিহারীরা হয়ে যাবে নাগরিক,
ভোটগুলো জামাতকে তারা দিয়ে দেবে ঠিক।
মুফৎ বিলানো হবে মওদুদি-বান্না,
গৃহিণীরা পড়বে তা শেষ হলে রান্না।
মুক্তিযোদ্ধা (ভুয়া) পরিষদ বানাবো,
মুজিব-তাজের সব ছবি টেনে নামাবো।
স্মৃতির সৌধ আর শহীদ মিনারটা,
বিজয়-স্তম্ভ নামের ও ম্যাগনা কার্টা,
আধা-মুসলিম এ জাতির মেরুদণ্ড,
বোমা মেরে করে দেব খণ্ড -বিখণ্ড ।
ন’শো টন স্কচটেপ কেনা হবে পণ্য,
সাংবাদিকের ঠোঁটে লাগানোর জন্য।
গায়ক-নাচকেরা, ভাগো সব ভাগো রে,
সবাইকে ফেলে দেব বঙ্গোপসাগরে।
সিনেমা থাকবে। তবে নায়কের দাঁড়ি চাই,
সে দাঁড়িতে দৈর্ঘ্যের কিছু বাড়াবাড়ি চাই।
নায়িকা রাখতে পারো, রেখে যদি পাও সুখ,
পেছন দেখাবে শুধু ! দেখাবেনা চাঁদ মুখ!!
নাচ গান নয়, শুধু বাদ্যিটা থাকবে,
সংলাপে মোদুদী'র নামটাও রাখবে।
সুযোগ পেলেই করি আর এক চেষ্টা,
ক্রীতদাস-দাসীদের হাটে ভরি দেশটা।
অগুন্তি দাসীরা তো চর্ব্য ও চোষ্য,
জামাতের সংস্কৃতি বটে তো অবশ্য।
ওদের জীবনে আমি হলে হব কেয়ামত,
আমার জীবনে ওরা আল্লার নেয়ামত।
এটাই বৈধ আছে মোদুদিছলামি’তে,
দোষ কেন দাও জামাতির পিছলামিতে ?
না জুটুক মালকোঁচা, না জুটুক খাদ্য,
সবাইকে হতে হবে জামাতের বাধ্য।
গোটা দেশ ছেয়ে দেব টুপিতে ও দাঁড়িতে,
ওয়াজ চলবে, ভাত না থাকুক হাঁড়িতে।
বেতারে-টিভিতে হবে জামাতের চর্চা,
রাতদিন, ‘‘মিডিলিষ্ট” দেবে তার খর্চা।
বায়তুল মোকারমে বসে যাবে সংসদ,
বুদ্ধিজীবিরা সব হয়ে যাবে বংশদ।
মরণানন্দেরাই লিখবে যে পদ্য,
তবেই তো বটতলা হবে অনবদ্য!
ওহে কবি ! এইটুকু পারিসনি শিখতে,
আরবীতে রবীন্দ্র-সংগীত লিখতে?
রবে কিছু মোনাফেক, তাতে আর ভয় কি?
মর্দে জামাতিদের হবে জয়, নয় কি ?
আল্লা রসুল আর কোরাণের বাইরে,
জামাতি থাকবে শুধু শুনে রাখ্ ভাইরে !
জামাতের ইসলাম প্রলাপ ও বিলাপ-ই, - মুস্তাকিম-এর নামে সিরাতুল জিলাপী !!
সিরাত = পথ, মুস্তাকিম= সহজ সরল।
সিরাতুল মুস্তাকিম - সহজ সরল পথ।
সিরাতুল জিলাপী – জিলাপী’র মত প্যাঁচানো পথ !
********************************
ওয়েদার অ্যাঞ্জেল
ঢাকায় চলছে ভ্যাপসা গরম, হেথায় তুষার ঝড়,
ওয়েদারের অ্যাঞ্জেলকে এবার ফায়ার কর !!!!
টরোন্টোতে তুষার ঝড়ে ৫৫০+ গাড়ী দুর্ঘটনা - সারা সপ্তাহ প্রচণ্ড বরফ-বৃষ্টি ও তুষারপাত।
*******************************************
মাৎসর্য্য (মি-টু আন্দোলন)
আকাশের তারা দেখি ঈর্ষার চোখে,
ঈর্ষায় শুনি কত তারকা-কথন,
সেই তারা খসে যবে পড়ে মর্ত্যলোকে,
মহা আনন্দে দেখি তারকা-পতন !!
*********************************
মনুষ্য-সমাজ
জঙ্গলে থাকে বিষধর সাপ, ধূর্ত শেয়াল, বাঘ এবং ফেউ,
চারপাশে তোর মানুষের দেহে ওরা সবই আছে, জানিস তা কেউ ?
*********************************
সঙ্গী
হাসান মাহমুদ
চিরদিন আমি যার বয়ে গেছি লাশ,
দেখতে কেমন সে যে? কোথায় নিবাস?
যতো বলি, “দেখা দাও, এসো সম্মুখে ”,
হেসে বলে, “দেখে নাও আয়নার বুকে ” !!
*****************************
জ্ঞানপাপী
আঙুর ফলটা কি স্বাস্থ্যকর ! রস খাও তার রস খাও আরো,
জ্ঞানের চক্ষু খুলে যাবে ভায়া, যদি ক'বছর রেখে খেতে পারো !
********************
চারিদিকে আজ ঘৃণার বিরুদ্ধে ঘৃণা, আঘাতের বিরুদ্ধে আঘাত, আগুনের বিরুদ্ধে আগুন। আমরা সবাই শান্তি চাই অথচ একটু সহ্য করে নিলেই সবার জীবনে শান্তি আসত !!
সহন
আমার তোমার সবারই ভুল হচ্ছে এবং হবে,
একের ভুলে অন্যের আঘাত শান্তি আনবে ভবে ?
গোরস্থানের শান্তি চাইনা, প্রাণেরই হৈ হল্লা চাই,
তাই বলে তো এমন নয় যে ভুল হলেই তোমার কল্লা চাই !!
একটুখানি সহ্য করো, দ্যাখো ক্যামন ম্যাজিক হয়,
ক্ষমার গুণে তুমিই বড়ো - তুমিই হিরো বিশ্বময় :)!
গালিটি খেলেই গালি দিতে হবে?
"সহ্যগুণ"-টা কাকে বলে তবে?
সুযোগ পেলেই হৈ হৈ রবে, - ছুটতে হবে নাকি রে?
প্রতিবাদ করা যায় ইঙ্গিতে,
মিষ্টি হাসিতে, মধু ভঙ্গীতে,
তবেই শান্তি সুখ সংগীতে - আসবে আবার ফিরে।
শুধু একবার ভেবে দ্যাখো দিকি,
হলে ক্ষণিকের "গান্ধী" ক্ষতি কি?
জীবনের তাতে থামবে গতি কি? - খোয়াবে কি পা বা হাত?
আঘাতে দৈর্ঘ্য ছোট হয় কারো,
কেউ বা বৃহৎ হয়ে ওঠে আরো,
এ থেকে শিক্ষা নিতে যদি পারো, - তাহলেই বাজিমাৎ !!
***************************
হামসফর
"সারা জীবন চলব সাথে" - কথার কথাই জানি,
দু'চার কদম ছিলি, এটাই অনেক ভাগ্য মানি....
**************************
তৈরী
এবার আমি বৃদ্ধ হবো, অনির্বচন ঋদ্ধ হবো।
অস্তগামী সূর্য্য-শিখার অগ্নিবাণে বিদ্ধ হবো ....
***********************************
পরিবর্তন
হারিয়ে যেতিস যদি,
আনতাম খুঁজে মন্থন করে পাহাড় মরু নদী।
কিন্তু তুই যে বদলে গেছিস, কি আর করি তবে,
ভাবিই নি তো এই নসিবে এমনও দিন হবে .....
**********************************************************
কবিবর শামসুর রাহমানের "সুধাংশু যাবে না" কবিতাটির পটভুমিতে লেখা।
তবেই সুধাংশুরা কোথাও যাবেনা।
হায় কবি! তোমার বর্ণময় বর্ণমালা
সয়ে সয়ে কি অসহ জ্বালা
তোমার ও সুবচন ক্ষতবিক্ষত
প্রবঞ্চিতা কিশোরী প্রেমিকার মতো
ধুকে ধুকে জ্বলে পুড়ে হয়ে গেছে খাক, সেই কবে!
শ্মশানের বাউকুড়ানীর হা হা রবে !!
হায় কবি ! তোমার কবিতা যদি সত্যই হত
কালনাগিনীর বিষে দলিত মথিত
হতোনা সুধাংশুরা ! তুমি কি বোঝোনি,
পোড়া ঘর, ভাঙাবুক, গোঙানীর ধ্বনি
মুছে দেয় আকাশের নীলিমা নিবিড়।
গাছ নদী পাখী প্রেম, সংগীতের মীড়
ফিরে ফিরে যায় কি বিফল করাঘাতে
ওই মৃত বুকে। শুধু ব্যর্থ অশ্রুপাতে -
মাতৃহীন বালকের মত।
আছে আরো ক্ষত। কোনো দেবতা কখনো,
বুঝেছে কি সুধাংশুর যন্ত্রনা কোনো ?
এসেছে মর্ত্যে নেমে ছেড়ে স্বর্গলোক,
জড়িয়ে ধরেছে স্নেহে? মুছেছে দুচোখ?
অগণিত সুধাংশুরা হয় সর্বহারা,
তখন স্বর্গে বসে থাকে দেবতারা,
আসেনা মর্ত্যে নেমে। পাছে, বীণা যায় থেমে !
তবু,
সান্ত্বনা, প্রতিবাদ, প্রতিরোধ আছে -
মানুষের কাছে, শুধু মানুষেরই কাছে।
মানুষই এসেছে ছুটে ছুটে বারবার,
মোছাতে সজল চোখ, তোমার আমার।
সুধাংশু, শোনো, একই যন্ত্রনা আছে
তোমার মতোই বহু কলজে’র কাছে।
আমাদেরও আছে বুকভাঙা হাহাকার,
শত ধর্ষিতা বোন, পিতার মাতার,
অবিরাম বুকভাঙা সজল দুচোখ।
সত্য হোক, তবে এই সত্য হোক,
"মুহুর্তে তুলিয়া শির, একত্রে দাঁড়াও দেখি সবে" !
"কারার ওই লৌহকপাট, ভেঙে ফেল কররে লোপাট.......
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা, যত সব বন্দীশালা -
আগুন জ্বালা আগুন জ্বালা ফেল উপাড়ি"।
তবেই সুধাংশুরা থেকে যাবে দেশে, তবেই সুধাংশুরা কোথাও যাবেনা।
****************************************
মহারোগ
কোষ্ঠকাঠিন্য শুধু পেটেতেই নয়,
বুদ্ধি ও বিবেকেও এ রোগটা হয় !!!
******************************************
তীর্থ
লক্ষ টাকায় গয়া কাশী গিয়ে কর তুই পূজা মহা আনন্দে,
আমি দু' টাকার দু'কল্কি মেরে পৌঁছেই যাবো পরমানন্দে.....
**************************************************************
সিগারেট !!
বক্ষ পোড়ায় দু'জন, ঠোঁটে একজনই দেয় ছোঁয়া,
তাই তো তাহার চেয়ে ভালো সিগারেটের ধোঁয়া!
*****************
নিষিদ্ধ ফল!
রুটিন জীবন যাপন করে লাভ কি হবে বল ?
নিষিদ্ধ ফল চাই রে মোল্লা, চাই নিষিদ্ধ ফল !!
***********************
"আনাল হক" !!
আমরা সবাই নদীর পানি, আসছি এবং যাচ্ছি সরে,
মহাকালের তরঙ্গে খুব হেলছি দুলছি নেশার ঘোরে,
একটু আগেই জন্মেছি আর একটু পরেই যাচ্ছি মরে.......
মরেই আবার জন্ম নিয়ে করছি শুরু সেই খেলাটাই,
জীবন-ঘুড়ির নিয়ন্ত্রণে রহস্যময় হাতের লাটাই....
সুতোর টানে গতি'র-যতি'র উথাল পাথাল জীবন কাটাই।
মরেই আবার জন্ম নিয়ে সেই খেলাটাই করছি শুরু,
গুরুর মাঝে শিষ্য বিলীন, শিষ্য মাঝে বিলীন গুরু !!!!
"আনাল হক" - (আমিই তিনি) - যে ঘোষণা দেবার জন্য মোল্লারা তাঁকে পুড়িয়ে মেরেছিল :(! - হযরত মনসুর হাল্লাজ (র)।
**********************
নিছক মানুষ
এক সময়ের পরম চরম সত্য, অন্য সময় হলেই,
কুয়াশার মত মিলায় শুন্যে, মোল্লা নিছক মানুষ বলেই :)!
***********************
একমেবাদ্বিতীয়ম !
জীবনের টানে টানে কত মুখ, কেউ কারো চেয়ে কম?
মরণের টানে টেনেছিল সেই একমেবাদ্বিতীয়ম!!!!
*******************************
বৃত্ত-ভ্রমণ
এঁকে গর্বিত পায়ের চিহ্ন বন-পর্বতে, মরু-সিন্ধুতে,
মোল্লা অবাক ! ফিরেছে বেকুব, যাত্রা শুরুর সেই বিন্দুতে !!
**************************
পাপ
প্রতিটি সন্ন্যাস মনে, গোপন অক্ষরে,
পাপ খেলা করে - বহু পাপ খেলা করে !!
************************
অনন্য
কথার মতোন ফুলঝুরি নেই,
শুভংকরের মতোন ফাঁক,
খোঁপার মতোন ফুলদানী নেই,
স্মৃতির মতোন বইয়ের তাক্।
চোখের মতোন সাগর তো নেই,
প্রেমের মতোন মিষ্টি ভুল,
মায়ের মতোন স্রষ্টা তো নেই,
শিশুর মতোন স্নিগ্ধ ফুল!
************************
বিষন্ন সেপাই
হাজার বছর তাক করে আছি, যদি মোল্লাকে হাসিখুশী পাই !
জীবন ফুরালো তবু দেখি শালা সে চির-বিষন্নতার সেপাই !
*****************************
মাতৃভুমি
কোটি প্রভাতের কিরণ ধন্য - কোটি গোধুলিতে ম্লান বিষন্ন,
পুষ্পে পুষ্পে অলি পুঞ্জিত - দোয়েল কোয়েলে কুহু কুঞ্জিত,-
কোটি পূর্ণিমা জ্যোৎস্না প্লাবিত - পদ্মা মেঘনা যমুনা ধাবিত,
আলো ঝলমল হরিৎবরণী - স্নেহময়ী মাতা, হৃদয়হরণী !!!!!
আমাদের প্রিয় পবিত্র মাতৃভুমি। JOY BANGLA
এই পবিত্র স্বর্গীয় মানবকুঞ্জ থেকে মৌলবাদের দানব উচ্ছেদ করতে হবে, হবেই!!
***********************************************
উনিশ
জীবন যখন করছি শুরু ছিলই না তো জানা,
এক জীবনে উনিশটি বার মৃত্যু দেবে হানা।
মোল্লা-জীবন কেমন কাটে জানেনা আর কেহ,
প্রতিটি বার যাচ্ছে মারা আগের মৃতদেহ....
******************************
ফতেমোল্লা'র জন্ম যখন যে কারণে হয়েছিল।
দেশের বাইরে আমাদের সবচেয়ে বড়ো সাংস্কৃতিক তীর্থকেন্দ্র আমেরিকা-ক্যানাডার ফোবানা যার ৭ম সম্মেলন ১৯৯৩ সালে ক্যানাডার টরন্টো শহরে অনুষ্ঠিত হবার পরে আন্ত-কলহে দ্বিখণ্ডিত হয়েছিল। সেই থেকে প্রতি বছর দুটো, কখনো ৩টে করে একই দিনে কখনো একই শহরে ফোবানা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আমি আর ড: রফিকুল ইসলাম ১৯৯৩ সালের সেই অখণ্ড ফোবানার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান বানানো, তিনদিনের সব অনুষ্ঠানের শিডিউল করা থেকে শুরু করে এর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলাম। সেখানে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার ফলে কিছু নেতাদের পশ্চাদ্দেশে ইক্ষুদন্ডের মিষ্টাঘাতের প্রয়োজনে ফতেমোল্লার জন্ম হয়েছিল। অর্থহীন ও হাস্যকর একটা ছদ্মনাম হিসেবে ‘ফতেমোল্লা’ নামটা নেয়া হয়েছিল।
চালাক নেতা
মোল্লা ! একি ! সম্মেলনে হঠাৎ দেখি সেই নেতা !
চার পাঁচমাস কোথায় গায়েব ছিলেন ভেবে পাইনে তা !
ছুটছে এদিক, ছুটছে সেদিক, ভাবখানা খুব ব্যস্ত যে,
সম্মেলনের সমস্ত ভার তাঁর ওপরেই ন্যস্ত যে !
ছুটছে এদিক, ছুটছে সেদিক, স্যুটেড বুটেড বস সেজে,
মুখটা করুণ, চোখটা বিরাট, আছেন খুবই কষ্টে যে!
ভাবখানা ছাদ পড়বে ধ্বসে, চুন খসলেই পান থেকে,
এমন বিরাট কর্মী হঠাৎ এলো রে কোনখান থেকে?
সবাই যখন গলদঘর্ম গত পাঁচটি ছয়টি মাস,
চোখের ঘুম আর মুখের ভাতের হয়েই গেছে সর্বনাশ,
উল্কাবেগে দিন আসে যায়, লক্ষ কাজের নেইকো শেষ,
সম্মেলনে ফুলের মতন ফুটতে হবে বাংলাদেশ।
হাজার শাপলা আসবে ছুটে, গলায় গলায় মিলবে সব,
দূর বিদেশে বসবে স্বদেশ, দু'তিন দিনের মহোৎসব -
ম্যাজিক করে হয়না সেটা, পরিশ্রমের ঘাম যে চাই,
বড় কিছু করতে হলে বড় ধরণ দাম যে চাই।
সময় তো নেই হাটবাজারের, সময় তো নেই মরবারও,
সময় তো নেই বাচ্চাটাকে একটু আদর করবারও।
তখন যে এই চালাক নেতা সময় কাটান তাস খেলে,
কি হবে আর সম্মেলনের একগাদা ছাইপাঁশ ঠেলে ?
তার চেয়ে ঢের আড্ডা ভালো। নিদ্রা ভালো। স্বাস্থ্যকর !
পরিশ্রমটি করবনা বাপ্ ! তোদের সাজে, তোরাই কর।
গাধার দলে খাটনি খাটুক ! শেষের দিকে ফাঁকতালে,
পড়ব ঢুকে, সবার সঙ্গে নাচব ঝুমুর ঝাঁপতালে !
বাক্যনবাব এসব নেতাই করছে রে কেল-লা ফতে,
আর কতকাল এই ভুষামাল গিলবি রে মোল-লা ফতে?
*************************************
বিশ্ব মুসলিম
ঝড়ের গতিতে ছুটে চলে রেলগাড়ী,
একশো তিরিশ কোটি পুরুষ ও নারী।
মাঝে কিছু টুপি আর হিজাব ও দাঁড়ি,
বহু ড্রাইভার, প্রায়ই কাঁচা ও আনাড়ী !
কাজেই অ্যাক্সিডেন্ট তো হবেই !
*************************************
সুরা ?
দুরকম সুরা আছে এ জগতে। একটি বোতলে, একটি কোরাণে,
দুটোতেই করে বদ্ধ মাতাল, দুটোতেই তৃষা মেটেনা পরাণে !!!!
একই বানান, আলাদা উচ্চারণ, আলাদা অর্থ!
*************************************
ব্যতিক্রম
জীবনের সব যন্ত্রনা মুছে সুখের প্রাসাদে হোসনে ধন্য,
যন্ত্রনা এক আছে চেয়ে দ্যাখ, কলজেতে পুষে রাখার জন্য !
*************************************
প্রিয়তমা
যে মুখে তোমার ধ্রুবযন্ত্রণা, সে মুখেই আছে রোগের পথ্যি,
আর কোত্থাও নেই !! ফরহাদ, মজনুরা জানে একথা সত্যি !!!!
*************************************
ব্যস্ত
এতই ব্যস্ত !! যমদূত যদি আসে সমনটি হাতে,
বলিব - সময় নেই মরিবার, আসিও পরশু প্রাতে !!
*************************************
নাছোড়বান্দী
দরজা ছিল বন্ধ, তাতে পড়ল কয়েক টোকা,
টোকা দিলেই খুলব যে দ্বার, নইতো এতই বোকা !
টোকা তখন ধাক্কা হল, দরজা পড়ল ভেঙে,
ঢুকল ঘরে লক্ষ্মী, আঁধার এ ঘর উঠল রেঙে……
********************************
দাঁও
এ জীবন জুয়াখেলা - সব্বাই খেলি,
অনেক বুদ্ধি করে বুঝে তাস ফেলি।
এইবার মেরে দেব সুবিশাল দাঁও,
অনন্তে হয়ে যাব হঠাৎ উধাও...
*******************************
টোনা টুনি
(সত্য ঘটনা)
বহু বছর আগের কথা, ব্যতিব্যস্ত কাজ করছি আবুধাবী সেন্ট্রাল হাসপাতালের বায়োকেমিস্ট্রি ল্যাবের অফিসে - ল্যাবের ভেতর ব্যতিব্যস্ত আমার টেকনিশিয়ান টেকনোলজিস্টের দল। ফোন বাজল, ওধারে মহিলা:-
" …… বলছেন?"
"বলছি !"
"একজনের কাছ থেকে আপনার ফোন নম্বর পেয়েছি, আমাকে একটু হেল্প করতে হবে"।
হাসি পেল। আমার ওপরে আবুধাবীর পঁয়ত্রিশ হাজার বাংলাদেশীর অখণ্ড অধিকার, হাসপাতালে সবাইকে কখনো না কখনো আসতেই হয়- এ রকম হেল্প আমার লেগেই আছে। ছোটখাট আইনও ভাঙ্গতে হয় কখনো। বললাম:-
"বলুন!"
"আমি পরশু ঢাকা থেকে এখানে ছেলের সংসারে এসেছি, আগামী সপ্তাহে ফিরে যাব। এক পেশেন্টকে দেখতে আসতে চাই”।
“চলে আসুন ভিজিটিং আওয়ারে, কোনো অসুবিধে নেই"।
"না, ভিজিটিং আওয়ারে না। আমি আসতে চাই যখন বাইরের কেউ থাকবে না"।
একটু ধাক্কা খেলাম. বললাম – "কোন পেশেন্ট"?
নাম শুনে চুপ হয়ে গেলাম। পেশেন্ট বাংলাদেশী, আমার সিনিয়র বন্ধু, কতো বছরের কতো অনুষ্ঠান, কতো দাওয়াত আড্ডার সঙ্গী। এখন ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে গভীর কমা'তে লাইফ সাপোর্টে আছেন। ডাক্তারেরা জবাব দিয়ে দিয়েছে, আমার ল্যাব রিপোর্টও বলছে জীবনের আর কোনো আশা নেই। এখন শুধু লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেবার অপেক্ষা। বললাম:-
"উনি তো ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে আছেন. ওখানে অনেক রেস্ট্রিকশন !!"
মিনতিভরা কন্ঠে তিনি বললেন –
"দেখুন, উনাকে শুধু একটিবার দেখার জন্য আমি এতটা পথ পাড়ি দিয়েছি। অফিস ছুটি দিচ্ছিল না, রিজাইন করে এসেছি। প্লিজ, প্লি--জ একটা ব্যবস্থা করে দিন!!”
আমার মুখ ফসকে বেরিয়ে এল - "চাকরী ছেড়ে দিয়েছেন?"
“কি করব, ছুটি দিচ্ছিল না। আমার এত বছরের চাকরী !”
মনে হল জীবনের এমন এক দাবী এসেছে যাকে উপেক্ষা করা সম্ভবও নয়, উচিতও নয়। বললাম- “যখন বাইরের কেউ থাকবে না......তাহলে তো মাঝরাতে আসতে হয়"।
"তাই আসব, যখন বলবেন আসব”।
"রাত দু'টোয় আসুন - আমি ইমার্জেন্সির গেটে থাকব।
"আচ্ছা। আমি সবুজ শাড়ী পরে আসব, চিনতে পারবেন"।
রাত দু'টোয় তিনি ট্যাক্সি থেকে নামলেন, সবুজ শাড়ী পরা। আইসিইউ ওয়ার্ডে ঢুকতেই হাসিমুখে ছুটে এল হেড নার্স সুমাইয়া, বলল -“কি ব্যাপার, এত রাতে"? বললাম পেশেন্ট দেখতে এসেছি। সে মৃদু হেসে অন্যদিকে চলে গেল।
নাকেমুখে বিভিন্ন যন্ত্র থেকে লাগানো নানা রকম পাইপ আর টিউব, ধীরে বইছে নি:শ্বাস। চোখদুটো আগের মতই বন্ধ। সরু টিউবের ভেতর দিয়ে হাতের সুঁচে শরীরে ঢুকছে টিপিএন ফ্লুইড, টোটাল প্যারেন্টারেল নিউট্রিশন. আস্তে তিনি বসলেন বেডের পাশে চেয়ারে। পেশেন্টের হাত ধরে কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললেন-
"টোনা ! শুনতে পাচ্ছ ? আমি তোমার ছোটবেলার টুনি! ”
আমি আকাশ থেকে পড়লাম আর পুরো আকাশটাই যেন হুড়মুড় করে আমার মাথায় ভেঙে পড়ল। তীক্ষ্ণ বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছি। এ শরীর এতদিন বিন্দুমাত্র সাড়া দেয়নি শত আহ্বানে তার বন্ধু বান্ধবের, স্ত্রীর এমনকি সন্তানদেরও। সেটা এখনো পড়ে আছে একই রকম নিস্প্রাণ। ওই শরীর, ওই মন, ওই আত্মা কি আর কখনো কারো ডাকে সাড়া দেবে? তিনি ফিসফিস করে বললেন-
“তোমার অসুখের কথা শুনে ঢাকা থেকে তোমাকে দেখতে এসেছি!"
তীক্ষ্ণ চোখে তাকিয়ে আছি। আগের মতই কাঠ হয়ে পড়ে আছে পেসেন্ট - ওটা মৃত শরীরে জীবন্ত আত্মা নাকি জীবন্ত শরীরে মৃত আত্মা বলা কঠিন। কিন্তু আমি কল্পনাও করতে পারিনি ওই নিথর দেহের কোন অতলান্ত গভীরে নড়তে শুরু করেছে রহস্যময় বিশাল কি যেন। মহিলা গভীর মমতায় ফিসফিস করে বললেন –
"আমি জানি তুমি শুনতে পাচ্ছ ! আমার কথা না শুনে তুমি পারবে না। সেই সবুজ শাড়ীটা তুলে রেখেছিলাম! এত বছর পর আজ আবার পড়েছি!!”
অবিশ্বাস্য ঘটনা ঘটল। কোন সুদুর অতীত থেকে কত বছরের ক্ষুধার্ত বাল্যপ্রেম ঝড়ের বেগে ছুটে এসে বোমার মত বিস্ফোরিত হল হতচেতন দেহের ভেতরে। থরথর করে কেঁপে উঠল দেহ, নড়ে গেল নাক-মুখের পাইপ, হাতের সুঁচ নড়ে গিয়ে ফিনকি দিয়ে ছুটল রক্ত। আতংকে চিৎকার করে উঠলাম- "সুমাইয়া!" ছুটে এল নার্সের দল কিন্তু সেই ভূমিকম্প থামায় কার সাধ্য। মহিলা ধরে আছেন তাঁর হাত, কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বললেন,
"শান্ত হও, শান্ত হও টোনা! আমি তোমার পাশে এখনো আছি তো....আমি কখনোই তোমাকে ছেড়ে যাইনি....শান্ত হও....! ”
কি এক নিবিড় প্রশান্তিতে স্থির হয়ে এল দেহ, আমি তাকিয়ে আছি পাথরের মূর্তির মত। পেশেন্টের হাতের একটা আঙ্গুল একটু একটু নড়ছে, মহিলা অনেক আদরে সেই আঙ্গুলটা ছুঁয়ে রইলেন। যেন দুটো টোনাটুনি পাখী জীবনের শেষবার ঠোঁটে ঠোঁট রেখে কোন অজানা ভাষায় কথা বলছে। এদিকে নার্সের চোখে ফুটে উঠেছে মিনতি। মহিলা সেটা বুঝলেন। অচেতন রোগীর চোখে মুখে গালে কপালে বুকে ক্ষুধার্তের মতো হাত বুলোলেন, তারপর গভীর নি:শ্বাস ফেলে বললেন – "চলুন"।
বাইরে ট্যাক্সিতে উঠতে গিয়ে আমার দিকে ফিরে তাকালেন। সে চোখে ফুটে উঠেছে অনুরোধ। আস্তে করে বললাম – "কেউ জানবে না"।
মহিলা নিজের মনে বললেন - "আমার আর বাঁচতে ইচ্ছে করে না”।
তারপর একটু থেমে বললেন – “আপনাকে অনেক, অনেক ধন্যবাদ"।
ট্যাক্সি চলে গেল।
আমি সম্মোহিতের মত, মূর্তির মত অপলক হতবাক দাঁড়িয়ে আছি সেই মরুভুমির মাঝরাতে উন্মুক্ত আকাশে ঝিকমিক করা অসংখ্য নক্ষত্রের নীচে ।
(পরদিন পেশেন্ট-এর লাইফ সাপোর্ট সরিয়ে নেয়া হয়েছিল। কোনো এক টোনা বোধহয় তার ছোটবেলার টুনির জন্যই জীবনের শেষ দড়িটা কোনরকমে ধরে রেখেছিল, তারপর অনন্তে উধাও হয়ে গেল।)
*****************************************************************
হুটুটু
প্রাচীন কালে হোরাডো নামের এক দেশে এক অত্যন্ত কৌতুহলী লোক ছিল, প্রায়ই সে অদ্ভুত কাণ্ড করত। একদিন সে ভাবল, চোখে পট্টি বেঁধে উদ্দেশ্যহীন হাঁটলে শেষে কি ঘটবে? এই ভেবে সে চোখে পট্টি বেঁধে উদ্দেশ্যহীন হাঁটা শুরু করল। পনেরো বছর ক্রমাগত হাঁটার পর সে পনেরো হাজার মাইল দুরে এক গ্রামে পৌঁছল। সে গ্রামের নাম হুটুটু।
হুটুটু গ্রামের মন্দির থেকে পুরুত-ঠাকুর মহা উৎসাহে এ ঘটনার মাহাত্ম্য জনগণের মধ্যে প্রচার শুরু করল। কি অচিন্ত্যনীয় স্বর্গীয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির বলে সুদুর পনেরো হাজার মাইল দুরের হোরাডো থেকে কেউ চোখ বন্ধ করে পনেরো বছর ক্রমাগত হেঁটে পৃথিবীর অন্য কোথাও না পৌঁছে অত্যন্ত সঠিকভাবে হুটুটু-তেই পৌঁছতে পারে, সেকথা শুনে লোকজন ভক্তিতে অভিভূত হয়ে নুয়ে পড়ল। এই স্বর্গীয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যাখ্যা করার ভার পুরুতের ওপর পড়ল। পুরুত এই অলৌকিক ব্যাপারের অতি জটিল ব্যাখ্যা আবিষ্কার করে গ্রামে তা আরো জটিল ভাবে ব্যাখ্যা করতে লাগল। সে ব্যাখ্যা যত দুর্বোধ্য মনে হল মানুষের ভক্তিও ততই বেড়ে গেল। পুরুতকে মানুষ বিধাতার প্রতিনিধি মনে করল, এতে করে জনগণের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ বেড়ে গেল।
স্কুল-কলেজে এই স্বর্গীয় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি পড়ানো শুরু হল। মানুষের মনযোগ অন্যান্য সমস্যা-সমাধানের দিক থেকে সরে এসে এর ওপরে নিবদ্ধ হল। দেশের উন্নয়ন খাতের টাকা সরিয়ে এনে বিরাট দালান বানিয়ে এর ওপরে বিস্তর গবেষণা শুরু হল ও তার সম্পত্তি-কর, পানি-বিজলীর কর ইত্যাদি মওকুফ করে সরকারী টাকায় প্রচুর আসবাব ও যন্ত্রপাতি কেনা হল। অনেক বেতন দিয়ে সবচেয়ে মেধাবী বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ করা হল যাঁরা এ গবেষণায় সারাটা সময় দিতে লাগলেন। অন্যান্য সব গবেষণা হয় বন্ধ হয়ে গেল নয়ত কোনরকমে বেঁচে থাকল। ফসলের সার উৎপাদন, রাস্তা-ঘাট ও ব্রীজ বানানো, হাসপাতালের ওষুধপত্র যন্ত্রপাতি কেনা, নুতন স্কুল-প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি বন্ধ বা ব্যাহত হল। কিন্তু তবু এতে গ্রামের সবাই পুরুত-ঠাকুরের ওপরে খুব খুশী হল।
সেই গ্রামে মুমনা নামে এক বুদ্ধিমান ছেলে ছিল। কিছুদিন পরে সে সবাইকে বলা শুরু করল যে, পনেরো হাজার মাইল দুরের হোরাডো গ্রামের সেই লোকটা হুটুটু গ্রামের কথা জানতই না। তাই সে হুটুটুতে আসার জন্য রওনা হয়নি কারণ একটা জায়গার কথা যে জানে না সে সেখানে যাবার জন্য রওনা হতে পারে না। আসলে লোকটা বিশেষ কোথাও যাবার জন্য রওনা হয়নি, উদ্দেশ্যহীন রওনা হয়েছে। কোথাও না কোথাও তাকে পৌঁছতেই হত, সেভাবেই সে হুটুটু গ্রামে পৌঁছেছে। এরপর কেউ চোখ বেঁধে হোরাডো থেকে একশ’ কোটি বার রওনা হয়ে একশ’ কোটি বছর হাঁটলেও হয়ত আর কখনোই হুটুট গ্রামে পৌঁছাবে না। সবাই এ নিয়ে খুব ভাবতে শুরু করল। এতে পুরুত-ঠাকুর খুব রেগে গিয়ে মুমনার কান ধরে তাকে গ্রাম থেকে বের করে দিল। সবাই তখন ভাবনা চিন্তা করার মত কঠিন কাজ বাদ দিয়ে খুব আনন্দ করল। পুরুত মুমনাকে নির্বাসনের দিনকে ধর্মীয় মহোৎসব ঘোষণা করল।
প্রতি বছর সেই পবিত্র দিনে হুটুটু গ্রামে কোটি কোটি টাকা খরচ করে মহাসমারোহে সেই উৎসব আজও হয়ে থাকে।
এমনকি দুর্ভিক্ষের সময়েও।
*****************************************
হারানো খেলাঘরে
জীবনের হারানো খেলাঘরে কেউ আজীবন খেলা করে, কেউ তা হেলাভরে পায়ে দ’লে এগিয়ে যায়।
বহু, বহু বছর আগের কথা। গহন গ্রামবাংলার ছেলে আমি ম্যাট্রিক পাশ করে ঢাকা কলেজে ভর্তি হয়ে হোষ্টেলে থাকি। পাশের রুমে মোশাররফ, সন্ধ্যায় ওর রুমে গেছি, আমাকে দেখেই তড়িঘড়ি বালিশের নীচে কি একটা লুকিয়ে ফেলল। ভঙ্গীটাই বলে দিল ওটা প্রেমপত্র, ওই বয়সের হ্যামিলনের বাঁশী। ঝাঁপিয়ে পড়লাম ওর ওপর। আমি তখন তালপাতার সেপাই, মশা আমার চেয়েও তালপাতার সেপাই, ওকে ধরাশায়ী করতে সময় লাগল না। ধস্তাধস্তিতে কাগজ ছিঁড়ে যাবার জোগাড় হতেই মশা চেঁচিয়ে উঠল – “দিচ্ছি দিচ্ছি, ছিঁড়িস না”।
হাতে পেলাম, পড়লাম। হ্যাঁ প্রেমপত্রই, আঠারোটা। কোন এক শিখা তার প্রদীপকে লিখেছে। দু’টোই ছদ্মনাম। আমাদের বই পড়া পরিবার, বাংলা সাহিত্যের হেন বিখ্যাত বই নেই যা আমার মা বুকশেলফ্ ও স্মৃতিতে রাখেন নি। আবাল্য গ্রন্থকীট আমি ওই চিঠি পড়ে যা স্তম্ভিত হয়েছিলাম সে বিষ্ময় আজও কলজের সাথে লেগে আছে। আশ্চর্য্য গভীর প্রেমরসে আপ্লুত আঠারোটা চিঠি। সেগুলোর অপরূপ অভিব্যক্তি, ভালোবাসার গভীরতা, কাব্যিক শব্দচয়ন আর বাক্যবিন্যাসের বর্ণাঢ্য প্রকাশ আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল বন্যার মত।
একটা চিঠির একটা লাইন রক্ত দিয়ে লেখা, ব্র্যাকেটে লেখা আছে আঙুল কেটে সেই রক্ত দিয়ে লেখা।
বললামঃ-
“মারাত্মক লিখেছে তো ! এমন একটা মুক্তোর মালা তোর মত বাঁদরের গলায় পড়ল !!’’
“ওগুলো আমার নয়, এক বন্ধুর।‘’
“ওদের চিঠি তোর কাছে কেন ? কি নাম ওদের? কোথায় থাকে ? ’’
“সে সব বলা যাবে না”।
কষে চেপে ধরলাম কিন্তু মশা অনড়। কিছুতেই বলল না। শেষে বিরক্ত হয়ে বললাম –
“কাল এই সময় এখানে থাকিস, আমিই তোকে বলব ওরা কারা”।
“তুই তো ঢাকা শহর চিনিসই না, কিভাবে বলবি ?’’
“কাল এই সময় এখানে থাকিস”।
সকালে ভরপেট নাস্তা করে বেরিয়ে গেলাম। চিঠিগুলোতে ওদের বাসা, স্কুল, জায়গার ইংগিত ছিল, ওখানে আমার এক বন্ধু থাকে। সারাদিন ঘোরাঘুরি করে আবিষ্কারের গর্ব নিয়ে ফিরলাম সন্ধ্যায়। মশাকে বললামঃ-
“ মেয়ের ভালো নাম এই, ডাক নাম এই। বাবার নাম এই, মায়ের নাম এই। মেয়ে দেখতে খুব সুন্দর, হিন্দু এক ছেলের সাথে সম্পর্ক ছিল যার নাম এই। ছেলেটা কোলকাতা চলে গেছে”।
মশা নিঃশ্বাস ফেলে বলল - ‘‘হ্যাঁ। যাবার আগে আমাকে চিঠিগুলো দিয়ে গেছে। খুব গভীর প্রেম ছিল ওদের”।
গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত কিন্তু জীবন বড় রহস্যময়। ততক্ষণে অলক্ষ্যে ধ্বনিত হয়েছে ইঙ্গিত, ভবিতব্যের রেখা ধরে ধরে এ গল্পকে পাড়ি দিতে হবে প্রায় সুদীর্ঘ চল্লিশ বছর, দু’টো মহাদেশ আর ছুঁয়ে যেতে হবে পাকড়াশী’র ভাঙ্গা হার্মোনিয়ম।
দু’বছর পর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে আমরা থাকি। মশার সাথে একদিন কি কথায় সেই চিঠির কথা উঠল। কতো ভালো লেগেছিল বললাম, কিছু উদ্ধৃতিও দিলাম। মশা অবাক হলঃ-
“দুই বছর আগে মাত্র একবার পড়েছিস, লাইনগুলো পর্য্যন্ত মনে আছে তোর ?’’
“মনের যা ভালো লাগে মন সেটা মনে রাখে দোস্ত”।
“আমার সাথে আয়”।
“কোথায়”?
“আয়”।
ওর রুমে গিয়ে একটা ছোট্ট প্লাষ্টিকের ব্যাগ বের করল, তার ভেতরে চিঠিগুলো। বললঃ-
“এগুলোর ভার আমি আর বইতে পারছি না। না পারি রাখতে, না পারি ফেলে দিতে। ওর সাথে আমার আর কখনো দেখা হবে না। তোর যখন এতোই ভালো লেগেছে তোর কাছেই থাকুক্”।
হাতে চাঁদ পাওয়া একেই বলে। আবার ডুবে গেলাম সেই গভীর প্রেমে আপ্লুত কাব্যময় চিঠিগুলোতে। রক্তে লেখাগুলো একটু কালচে হয়ে এসেছে।
অপরিচিতার রক্ত।
ক’বছর পর, ১৯৬৮’র দিকে। ঘটনা তখন ছুটছে উন্মত্তবেগে। সময়ের জঠরে জন্মযন্ত্রনায় নড়ে উঠছে বাংলাদেশের রক্তাক্ত ভ্রূণ, মানচিত্র ভাঙ্গার জন্য তৈরী হচ্ছে পাকিস্তান। ছাত্রলীগের চিরদুর্ভেদ্য দুর্গ ফজলুল হক হলের আমি ব্যতিব্যস্ত লীগ-ভিপি আর হলের সাংস্কৃতিক সম্পাদক। একাত্তরের পঁচিশে মার্চে নেমে এল নাপাক বাহিনীর গণহত্যার কেয়ামত, ছিটকে গেলাম কে কোথায়। সপ্তাহ পরে হলে এসে দেখি আর্মি এসে আমার রুমের সামনে বিছানা-বালিশ মশারী বইপত্র অ্যালবাম ডায়েরী সবকিছু পুড়িয়ে দিয়েছে। আমরা যারা ছাত্রলীগের কমিটিতে ছিলাম তাদের প্রায় সবারই এই অবস্থা। ছুঁড়ে ফেলার সময় ওজন কম বলেই হয়ত প্লাষ্টিকের ছোট্ট ব্যাগটা অন্যদিকে পড়েছিল, আগুনে পড়েনি।
যক্ষের মতন আবার বুকে তুলে নিলাম অপরিচিতার হৃৎস্পন্দন।
আরো ক’বছর পর। ততদিনে বাংলাদেশ হয়েছে। সে মেয়ের খুব সুনাম হয়েছে, দেশজুড়ে সবাই তার নাম জানে। আমার এক দুরাত্মীয়া তার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। বলল তার বিয়ে হবে, সামনে গায়ে হলুদ। ছোট্ট এক কাঠের বাক্সে সেই প্লাষ্টিকের ব্যাগ রেখে ছোট্ট তালাবন্ধ করে তাকে দিয়ে বললামঃ-
“এটা ওকে দেবেন। চাবি আমার কাছে থাকল, তালা ভাঙ্গতে বলবেন। বিশেষ করে বলবেন কারো সামনে যেন না খোলে”।
“কি আছে এতে ?’’ - রমণীয় কৌতুহল তার।
“জানতে হবে না। জীবনের সবকিছু জানতে হয় না”।
গল্পটা এখানেও শেষ হতে পারত কিন্তু হয়নি। এরপর আমি আবুধাবী চলে গেছি, দুরাত্মীয়াও হারিয়ে গেছে জীবন থেকে।
ক’বছর পর। দেশে গেছি, ঢাকা এয়ারপোর্টে রাজশাহী’র প্লেনের জন্য ডোমেষ্টিক লাউঞ্জে বসে আছি। কানে এল সেই নাম। দেখি একটু দুরে জটলা, চট্টগ্রামের অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে যাচ্ছে উদ্যোক্তারা। এত বছর যার প্রথম কদম ফুল বয়ে বেড়িয়েছি এই প্রথম তাকে দেখলাম। হ্যাঁ, মেয়ে সুন্দর। নাক-চোখের নকশা সুন্দর, গায়ের রং দুধে-আলতায় একটু চুন মেশানো। ও জানতেও পারছে না কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে তার রক্তলেখা আগলিয়ে রেখেছে বহু বছর।
আরো ক’বছর পর। হঠাৎ মনে হল জীবনভর পরের হার্মোনিয়ম বাজালাম পাড়ার শিল্পী থেকে ওস্তাদদের রাগ-রাগিনীর কনসার্ট, আমার নিজের একটা থাকা উচিত। কোলকাতা’র পাকড়াশীর হার্মোনিয়ম সুবিখ্যাত। অর্ডার দিলাম অনেক শর্ত দিয়ে, কাঠ বহু পুরোন হতে হবে যাতে ক্যানাডার প্রচণ্ড শীত ও প্রচণ্ড গরমে বেঁকে না যায়, রীডের ডেপথ কম, স্প্রিং নরম ও রীডের পাশগুলো ঘষে দিতে হবে যাতে ত্রিতালের কালবৈশাখীতে পরস্পরের সাথে ধাক্কা না খায়- নানান বায়নাক্কা। পাকড়াশী পুরো এক বছর সময় নিল কিন্তু বানাল ভাল। ইমিগ্রেশন নিয়ে টরন্টোতে এসে একটু জড়িয়ে গেলাম সংস্কৃতি-জগতে, সবাই জানল আমার খুব ভালো একটা হার্মোনিয়ম আছে। বাংলাদেশ সমিতির প্রেসিডেন্ট একদিন ফোন করলেনঃ-
“উপকারটা করতেই হবে ভাই !! না করবেন না যেন”।
“কি ব্যাপার ?’’
“দেশে থেকে খুব ভালো এক শিল্পীকে আনছি, আপনার হার্মোনিয়মটা একটু লাগবে”।
“কোন শিল্পী?’’
নাম শুনে অস্পষ্ট হাসি ফুটে উঠল আমার ঠোঁটে। পেছনের কত কথা মনে পড়ল। সেই ঢাকা কলেজের হোষ্টেল .....মশার সাথে ধ্বস্তাধ্বস্তি ! সেই প্ল্যাষ্টিকের ব্যাগ..... এফ এইচ হলে মশার সাথে সন্ধ্যা.....পুড়ে যাওয়া সবকিছুর মধ্যে অক্ষত চিঠি.........সেই ডোমেষ্টিক লাউঞ্জ! এত বছর পর গল্পটা শেষ হবে। বললাম আনব হার্মোনিয়ম।
গাড়ীর ট্রাংকে হার্মোনিয়ম নিয়ে যাচ্ছি অনুষ্ঠানে, ভাবছি ওকে কি কিছু বলব? চিঠিগুলোর কথা বলব? জিজ্ঞেস করব প্রদীপের কথা? প্রদীপ এখন কোথায় আছে, কেমন আছে? ওর সাথে আর কখনো দেখা হয়েছে? যোগাযোগ আছে? বললে মেয়েটা কিভাবে সেটা নেবে?
নাকি কিছুই বলব না? এই বয়সে কি ওই বয়সের কথা বলা যায়? দু’টি কচি মন কচি বয়সে কাছাকাছি এসেছিল, একসাথে জীবন কাটাতে চেয়েছিল কিন্তু পারল না। কেন ওরা দুরে সরে গেল? জীবনের ঐশী স্পন্দন একেবারেই কি হারিয়ে গেল জীবন থেকে? নাকি রাতের প্রবল ধ্রুবতারাটা প্রবলতর হয়ে আছে দিনের আলোর গভীরে ?
পেছন থেকে বিশাল এক গাড়ী এসে দানবের মত ঝাঁপিয়ে পড়ল আমার ট্রাংকের ওপরে। ছত্রছান হয়ে গেল সবকিছু - আমার এতো আদরের এতো ভালো পাকড়াশীর হার্মোনিয়ম তখন ভেঙ্গেচুরে লাশ হয়ে পড়ে আছে। প্রেসিডেন্টকে ফোন করে দিলাম - অনুষ্ঠানে যাওয়া হলনা।
কাহিনীটা অসমাপ্ত থেকে গেল। অসমাপ্ত গল্প জীবনের ভারী অপছন্দ, ভালমন্দ যেভাবেই হোক জীবন সেটা শেষ করার প্রাণান্ত চেষ্টা করে। তাই মনে হয় এ গল্পটাও হয়তো শেষ হবে কোনদিন.... কোথাও.... কোনভাবে ....কখনো...........
(জীবন আসলেই ক’বছর পরে গল্পটা শেষ করেছিল। সে গল্প পরে হবে।)
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
ADD:- TAKE FROM FOTEMOLLA FACEBOOK.
- হাজার শাপলা আসবে ছুটে, গলায় গলায় মিলবে সব,
দূর বিদেশে বসবে স্বদেশ, এই দুদিনের মহোৎসব,
লেখক-পাঠক পুণ্যতীর্থে প্রাণেরই হৈ হুল্লোড়ে,
"আমরা বাঙালী ফাউণ্ডেশন" আনন্দধাম খুললো রে !
২২ - ২৩ জুন ২০১৯ - ওয়াশিংটন বই মেলা।
- আল্লা দেখিনি রসূল দেখিনি, দেখিনি তাঁদের কায়া,
কিন্তু আমার মায়ের মধ্যে দেখেছি তাঁদের ছায়া...
মোল্লাগুচ্ছ ৭৯ -
কল্পলোকের এক প্রেমিকাই মর্ত্যলোকে বিশটি হয়,
বিশ-প্রেমিকার মোহন বিষেই পরকীয়ার সৃষ্টি হয় ... !!
মোল্লাগুচ্ছ ৭৮ -
এই জলেতে কাটবে সাঁতার ওই জলেতে ডুব,
ঠিকানাহীন লিখবে চিঠি লাগলে একা খুব।
এর বাহুতে রাখবে মাথা ওর কোমরে হাত,
এমনি করেই গালিব-হাফিজ কাটায় তাদের রাত !
মোল্লাগুচ্ছ ৭৫ - নৃত্যকলা ...
"দেহভঙ্গিমা যবে হয় আরাধনা, সেটাই নৃত্যকলা, অমিয় সাধনা।
তা নাহলে সেটা 'ধেড়েনৃত্য'-ই হবে, মোক্ষম একথাটা জেনে নাও সবে !!
************************************************************
আমার এই দেহখানি তুলে ধরো,
তোমার ওই দেবালয়ের প্রদীপ করো .... কবিগুরু।
মোল্লাগুচ্ছ ৭৩ -
মগজ ও মন করে যদিও ভ্রূকুটি,
প্রশ্ন করোনা আকাশের ভুলত্রুটি।
মোল্লাগুচ্ছ ৭২ -
যুব, নারী, টুপি দাঁড়ি, খেঁদি বুঁচি পটলে ,
সবাই বানায় "লীগ", তুমি কেন হটলে ?
এখনো তো খালি আছে "লীগ" আরো কিছু,
বানিয়ে নাও হে বাপু, পাবে কিছুমিছু !
অন্ধ কিছু লোক করে নাও জড়ো,
"আওয়ামী অন্ধলীগ" হয়ে যাবে দড়ো !
কিংবা সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধ কয়েক,
"আওয়ামী বৃদ্ধলীগ" বানাও না এক!
মোল্লাগুচ্ছ ৭১ -
বিশ্ব মুসলিম !!
বাচ্চা বেড়াল চোখ খোলে তার সাতটি দিনের পরে,
রইলি যে দেড় হাজার বছর অন্ধ আঁতুর ঘরে !
মোল্লাগুচ্ছ ৭০ -
চতুর্দিকে "জয় নৌকো"র শ্লোগান শত,
সেই নৌকোর তলাতে ভাই ছিদ্র কত?
মোল্লাগুচ্ছ ৬৬ -
ঝড়ের গতিতে ছুটে চলে রেলগাড়ী,
একশো তিরিশ কোটি পুরুষ-নারী,
মাঝে কিছু টুপি আর হিজাব ও দাঁড়ি।
বহু ড্রাইভার, সবে কাঁচা ও আনাড়ী !
কাজেই অ্যাক্সিডেন্ট তো হবেই !
&&&&&&&&&&
মোল্লাগুচ্ছ ৮০ –
রক্তস্রোতেই বইছে জীবন, খাদ্য-খাদক সর্বকালে,
কে খুনী আর কে নিহত, বলবে কে হে রাত পোহালে?
&&&&&&&&&&&&&&
মোল্লাগুচ্ছ ৮১ -
জীবনে তো হলে বহু হ্যানো ত্যানো, অনেকের প্রয়োজন,
হিসেবে করো তো কজনার তুমি হয়েছ হে প্রিয়জন ?
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
মোল্লাগুচ্ছ ৮৬ : -
লাল সবুজের মায়া শুধু বোঝেনা সেই ছাগল,
প্রকৃতিও দেখো কেমন লাল-সবুজের পাগল :) !
********************************************************
রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রে হরিলুট around 19 May 2019
বালিশ তুলি, বালিশ!
বালিশ তুলেই প্রচুর কামাই, করছো কেন নালিশ?
দু'গাল দিয়ে নেতার জুতো করছি কষে পালিশ,
কচু হবে, আদালতে হোক না যতই সালিশ :)!
- ফতেমোল্লা
রমণীর পরকীয়া
এই যে শরীর, এই বিছানা, একঘেয়েমী ভরা,
চেনা স্বামীর একঘেয়ে সেই চেনা রমণ করা।
এই শরীরেই অসহ্য সুখ নিত্য নুতন সাজে,
উছলে উঠে তাহার হাতে মোহন বীণায় বাজে।
&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&&
TO ADD TO THE BOK:-
বাগান হোকনা শত ADDED – NEW:-
- “কথা” – কথা, সুর ও কণ্ঠ - ফতেমোল্লা। (Check the missing lines in the book!) - http://hasanmahmud.com/index.php/multimedia/multimedia-audio/179-2020-09-14-09-55-41
- "সারা জীবন থাকবো সাথে", মন ভোলানো অঙ্গীকার,
দিন বদলে বদলায় মন, কে হয় তখন সঙ্গী কার? - 22 sept 2020.
- মত্ত দরিয়া, নাও ডুবুডুবু, মৃত্যু জীবন-নদীর দুধারে,
এধারে রক্তচক্ষু পুরাণ, রক্তচক্ষু কোরান ওধারে …. (সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা) ।
- জানতে হলে পড়তে হবে,
পড়েই জীবন গড়তে হবে।
- আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার মর্মসঙ্গীত
https://www.facebook.com/watch/?v=423289214516808
কথা ও সুর - হাসান মাহমুদ
কণ্ঠ ও পরিচালনা – ড. মমতাজ মমতা ও তাঁর ছাত্রছাত্রী বৃন্দ।
দিগন্তরে,
অমর একুশে যুগ যুগান্তরে, ছড়িয়ে গেলো আজ কি মন্তরে
মুক্তিকামী মানুষের অন্তরে - ওই একুশে - একুশে - একুশে।।
রফিক সালাম,
দেশ বিদেশে ছড়িয়ে গেল নাম, দেশ বিদেশে সবে জানালো সালাম।
রক্তরাগে,
শহীদ মিনার কি অলক্তরাগে, বিশ্ববীণায় বাজে সপ্তরাগে -
ওই একুশে - একুশে - একুশে।।
কি ঝংকারে,
বিশ্ব-ললাটে জ্বলে অহংকারে, একুশে রক্তক্ষতের অলংকারে,
ওই একুশে - একুশে - একুশে।।
এসো সবে,
বিশ্ব-মাতৃভাষার এ উৎসবে, বাংলার দানে ধরা ধন্য হবে।
এসো এসো ভাই, অমর একুশের জয়গান গাই,
মায়ের ভাষার বড়ো নাই কিছু নাই,
ওই একুশে - একুশে - একুশে।।