নারীর পোশাক - নিকাব-নামা

Pakistan Under Jinnah

 

 

 

 

 

 

Image: Pakistan Under Jinnah in 1947

 

 

 

 

 

 

Image: Pakistan Today

ইসলাম এক, আল্লাহ এক, কোরান এক, রসুল এক। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা অন্তত: ৩ রকমের নারী-পোশাককে দাবী করেছেন ইসলামী বলে। (ক) শুধু চোখ খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত, (খ) চেহারা ও হাতের কব্জি পর্য্যন্ত খোলা রেখে সারা শরীর আবৃত ও(গ) সংযত পোশাক, শুধু নামাজ-আজান ইত্যাদি ও গুরুজনের সামনে মাথায় কাপড় দেয়া। এটা ভারতবর্ষের ইসলাম প্রচারকেরা প্রতিষ্ঠা করেছেন যা আমরা নানী-দাদী সহ আবহমান বাংলায় ও ভারতবর্ষে দেখেছি।

1. কোরানে এ ব্যাপারে আয়াত আছে নুর ৩০, ৩১, ৬০ ও আহযাব ৫৩ ও ৫৯। সবার কাছেই কোরান আছে বলে উদ্ধৃতি দিচ্ছি না, লম্বা হয়ে যাবে তাই। আয়াত গুলোতে পোশাকের সাথে জড়িত শব্দদুটো হলো "বাইরের ঢিলেঢালা পোশাক" ও "মাথা ঢাকবার স্কার্ফ"। হিজাব অর্থাৎ “আড়াল” শব্দটা ব্যবহার হয়েছে পোশাক নিয়ে নয়, "আড়াল” থেকে কথা বলা ইত্যাদির ওপরে (নবী-পত্নীদের সাথে ইত্যাদির)। নিকাব-বিরোধী বিশেষজ্ঞরা এই দুই ধরনের আয়াতকে আলাদা রেখে ব্যাখ্যা করেছেন, আর নিকাব-পন্থী বিশেষজ্ঞরা সবগুলো আয়াতকে একত্রিত করে ব্যাখ্যা করেছেন। বলাই বাহুল্য, এই দু'ভাবেই আয়াতগুলোর পরস্পর-বিরোধী ব্যাখ্যা করা সম্ভব কিন্তু একই বিষয়ে দুই পরস্পর-বিরোধী সিদ্ধান্তের প্রভাব সমাজের জন্য বিপজ্জনক।

2. এবারে হাদিস। বায়হাকী-কানজুল উম্মাল, দারিমী, বাদিউস সানাই থেকে শুরু করে মানহুল জালীল, আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু, মাকতাবাতুল হক্কানিয়্যাহ, লামিউদ দারারী, যাদুল মাআদ, ইবনে হিব্বান, উমদাতুল কারী, শরহুল বুখারী, মাকতাবায়ে তাওফীকিয়া, আবু আওয়ানা, হাশীয়া লামিউদ দারারী, মাবসুতে সরখসী ইত্যাদি অসংখ্য বই আছে, অনেকের কাছে সেগুলো কোরানের সমান মুখে যা-ই বলুন না কেন। “অমুকে বলিয়াছেন”, ব্যাস– ওটাই অভ্রান্ত তাঁদের কাছে। আমরা সহি বুখারী-মুসলিম-আবু দাউদ থেকে কিছু হাদিস দেখব।

(ক) ফেস-মাস্ক-এর সমর্থনে-
*** পোশাকের আয়াত নাজিল হলে নারীরা তাদের চেহারা ঢাকা শুরু করল; তারা নবীজী'র সামনে চেহারা ঢাকত না, অন্যান্যদের সামনে ঢাকত - বুখারী ৫-৩২ ও ৬-২৮২।

(খ) ফেস-মাস্ক-এর বিপক্ষে:-

*** পুরুষের প্রতি কোরানের "দৃষ্টি নীচে কর" (নুর ৩০) প্রমাণ করে ফেস-মাস্ক নারীর পোশাক নয়।

*** পোশাকের আয়াত নাজিল হলে নারীরা জানালার পর্দা কেটে মাথা-ঢাকার স্কার্ফ তৈরী করল - আবু দাউদ ৪০৮৯।

*** এক সুন্দরী নারীর সৌন্দর্য্যে "আকৃষ্ট হইয়া" সাহাবী আল ফাদেল তার দিকে তাকিয়ে থাকলে নবীজী ফাদেলের চিবুক ধরে মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিলেন, নারীকে মুখ ঢাকতে বললেন না - বুখারী ৮-২৪৭.

*** নবীজী বললেন মেয়েরা বড় হলে চেহারা ও হাত ছাড়া আর কিছু দেখানো উচিত নয় - আবু দাউদ ৪০৯২। এটা সুরা নুর আয়াত ৩১-এর সাথে যায়, নারীরা যেন সৌন্দর্য্য প্রকাশ না করে, "যা সাধারণত: প্রকাশমান তাহা ব্যতীত"।

*** জাবির বিন আব্দুল্লাহ – নবীজী বলেছেন কোন পুরুষ যদি কোন নারীকে বিয়ে করতে চায় তবে সে সেই নারীর সেটা দেখতে পারে যা তাকে বিয়ে করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। "আমি এক নারীকে বিয়ে করতে চাইলাম। আমি গোপনে তাকে দেখলাম..." ইত্যাদি - আবু দাউদ ২০৭৭।

*** হজ্ব ও ওমরাতে নারীর চেহারা খোলা থাকলে অন্যত্র থাকবে না কেন।


(গ) আরেকটা তত্ত্ব দেন অনেকে - তা হলো নিকাব শুধু নবীজীর স্ত্রীদের জন্য, এটা আহযাব ৫৩ ও হাদিস দ্বারা সমর্থিত।

***সাফিয়ার সাথে নবীজীর সাথে এক ভ্রমণে সাহাবী বলছেন যদি নবীজী সফিয়াকে নিকাব পড়ান তাহলেই বোঝা যাবে সাফিয়া তাঁর বিয়ে করা স্ত্রী, নাহলে নয় - বুখারী ৭-২২, মুসলিম ৮-৩৩২৮।

*** হজরত ওমর (রা) বলেছেন - আল্লাহ ৩টি আয়াত নাজিল করেছেন তাঁর প্রার্থনার ভিত্তিতে - তার একটা হল পোশাকের বিষয়ে - সহি মুসলিম বুক ০৩১-৫৯০৩। কি ছিল তাঁর প্রার্থনা?

*** হজরত ওমর (রা) রসুলকে (স) বলিলেন ভালোমন্দ সব ধরণের লোক তাঁহার বাড়ীতে আসে, তাই নবী-পত্নীদের উচিত (আড়াল বা নিকাব- দুই অর্থেই ধরা যেতে পারে) ব্যবহার করা। তখন আল্লাহ এইসব আয়াত নাজিল করিলেন - বুখারী ১-১৪৮, ৬-১০ ও ৩১৩, ৮-২৫৭ ও মুসলিম ২৬-৫৩৯৭।

*** নবীজীর সময় অনেক যুদ্ধে নারীদের প্রত্যক্ষ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ, নবীজীর অনেক পরে জামাল যুদ্ধে বিবি আয়েশার (রা) সেনাপতিত্ব ইত্যাদি প্রমাণ করে নারীরা কখনোই ফেস-মাস্ক পরেন নি ও গৃহবন্দী ছিলেন না।

ফেস-মাস্কের পক্ষের আলেম দেশে অনেক যাঁদের আমরা হামেশাই শুনছি। এবারে দেখা যাক বিপক্ষের বিশেষজ্ঞদের।

*** মধ্যপ্রাচ্য, ইরাণ, মালয়েশিয়া ইন্দোনেশিয়া সহ প্রায় সব মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের ইমামেরা নারীর ওপরে ফেস-মাস্ক চাপিয়ে দেন নি। তাঁরাও তো ইমাম, তাঁরা কেন দেন নি সেটা আমাদের নিকাব-পন্থীদের উচিত তাঁদের জিজ্ঞাসা করে খুঁজে বের করা।


(১) "এটা কি? খুলে ফেল, খুলে ফেল এখনি !! ইসলামের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই- এটা সামাজিক প্রথা মাত্র" - বালিকা বিদ্যালয় পরিদর্শনকালে এক ছাত্রীকে ফেস-মাস্ক পরা দেখে বকা দিয়েছিলেন মিসরের প্রাক্তন গ্র্যান্ড মুফতি ও আল আজহার বিশ্ব-বিদ্যালয়ের প্রাক্তন গ্র্যান্ড ইমাম ড: তানতাওয়াঈ।   Source: BBC        Source: Haaretz

(২) পাকিস্তানের সর্বোচ্চ ইসলামী সংগঠন কাউন্সিল অফ ইসলামিক আইডিওলজি।  Source: Tribune

(৩) আরবের সর্বোচ্চ সুরা কাউন্সিলে ১৫০ জন সদস্যের মধ্যে নারী ৩০ জন, টিভি'র খবরে দেখা গেছে তাঁদের প্রায় কেউই চেহারা ঢাকেন নি। Source: Islamic Pluralism

(৪) সৌদি আরবের কমিশন ফর দি প্রমোশন অফ ভার্চু (হাইয়া অর্থাৎ শারিয়া-পুলিশ) বিভাগের প্রাক্তন প্রধান আহমেদ বিন কাসিম আল ঘামিদী| Link HERE

(৫) ড: জাকির নায়েক- Link HERE

(৬) ইউরোপের সবচেয়ে প্রভাবশালী মুসলিম নেতা, মিসরের হাসান আল বান্নার নাতি ড: তারিক রামাদান। Link HERE

(৭) আইন শামস বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ডীন ড: আতিফ আল আওয়ামী – Link HERE

(৮) শেখ আহমদ কুট্টি, সিনিয়র শিক্ষক ও ইসলামী বিশেষজ্ঞ। Link HERE

(9) কাতার-এর রাজকন্যার ছবি দেয়া হল।

(4) এ তো গেল দলিলের কচকচি। বাস্তবে ফেস-মাস্ক নারীর মুখের সামনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ পেশার কপাট বন্ধ করে দেয় যেমন রাষ্ট্রপ্রধান, সামরিক উচ্চপদ, এরোপ্লেন চালানো, ডাক্তার, সার্জন, ইঞ্জিনিয়ার, আইনজীবী, ইত্যাদি। সার্ফিং, পর্বতারোহন ইত্যাদি অনেক খেলাধুলা ও হবি-ও বন্ধ করে। নারীর কি ওসব পেশা বা স্পোর্টস-এর ইচ্ছে করে না? নিশ্চয়ই করে। নারীর কি ওসব পেশা বা স্পোর্টস -এর অধিকার নেই? অবশ্যই আছে। যেখানে এ বিষয়ে ইমামদের মধ্যেই প্রচণ্ড মতভেদ আছে সেখানে তাঁদের ওপরে ফেস-মাস্কের ডান্ডাবাজী তাঁরা মানবেন কেন? দেশ-জাতির অগ্রগতিতে নারী-পুরুষ একত্রে কাজ করা অপরিহার্য্য।।

(5) মুসলিম দেশ সহ অনেক দেশে/শহরে/অঞ্চলে আইন বানিয়ে ফেস-মাস্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কেউ এ তালিকা আপডেট করলে খুশী হব।

(১). পুরো ফ্রান্স, বেলজিয়াম ও আফ্রিকার মুসলিম প্রধান দেশ চাদ রিপাবলিক-এ ফেস্ক-মাস্ক বেআইনী।

(২) ২০০৪ সালের নভেম্বরে পেশোয়ার হাই কোর্টের প্রধান বিচারক তারিক পারভেজ খান বিধান জারী করেন নারী-আইনজীবীরা ফেস-মাস্ক পরে আসতে পাবেন না কারণ তাতে তাঁকে চেনা যায় না।

(৩) এইসব দেশের কিছু শহরে/প্রদেশে ফেস্ক-মাস্ক বেআইনী - (ক) ইতালীর নোভারা ও ভারালো সেশিয়া শহর, (খ) চায়না'র উরুমকি শহর, (গ) স্পেনের বার্সিলোনা, রিউস ও ক্যাটালোনিয়া'র কয়েকটি শহর, (ঘ) সুইজারল্যান্ডের তিসিন'র ক্যান্টন শহর, (ঙ) রাশিয়ার স্যাভর্পুল শহরের সরকারী স্কুলে, (চ) হজ্ব ও ওমরার সময় সৌদি আরবে, (ছ) কায়রো বিশ্ব বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাদের জন্য ফেস-মাস্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। - Link HERE

***ক্যানাডার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ দল আইন করেছিল কারো ইমিগ্রেশন গৃহীত হলে জাতীয়তার শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে নিকাব অবৈধ। এক পাকিস্তানী নিকাবধারীনি আদালতে মামলা ঠুকে দিয়েছিল, রায়ে সরকার পরাস্ত হয়েছে- শুধু শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানেই নয়, নিকাবধারীনিরা নির্বাচনে ভোটও দিতে পারবে। সরকার নাকি আপিল করবে, আদালতে নাস্তা নাবুদ হলেও জরীপে ৮২% জনতা ফেস্ক-মাস্কের বিপক্ষে মত দিয়েছে।

(6) ফেস-মাস্কের উদ্দেশ্য হলো নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা বন্ধ করে যৌন উশৃঙ্খলতা বন্ধ করা। উদ্দেশ্যটা ভালো কারণ সারা দুনিয়াতেই যৌন উশৃঙ্খলতা ভয়াবহভাবে বেড়ে গেছে। কিভাবে তা বন্ধ করা বা কমানো যায় তা নিয়ে সমাজ-বিশেষজ্ঞরা মাথা ঘামাচ্ছেন, উপায় এখনো বের করতে পারেন নি। এখন অবাধ যৌনাচারে দুনিয়া সয়লাব। ফেস-মাস্ক বা স্কুল-কলেজ বা কর্মক্ষেত্রে নারী-পুরুষের বিভক্তিই কি এর সমাধান? বাস্তব কি বলে? নারী-পুরুষের বিভক্তির কেন্দ্রভূমি সৌদি আরবের টিভিতে প্রচারিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২৩% সৌদিরা শিশুকালে আত্মীয়, ভাই, শিক্ষক দ্বারা ধর্ষিত/ধর্ষিতা, রিয়াদ শহরে ৪৬% তরুণ তরুণী সমকামী। অনেক খুঁজেও এ ব্যাপারে সৌদি সরকারের কোনো প্রতিবাদ আমি পাইনি। বিশ্বব্যাপী এটা প্রচারিত হয়েছে:-    Video 1          Video 2          Video 3          Video 4          Video 5       

আমরা ওদের চেয়ে লক্ষগুণ ভালো আছি। বরং সৌদি শারিয়া আইন এ ব্যাপারে ভয়াবহ জঘন্য। টিভি-তে ইসলাম প্রচারকারী ইমাম তার ৫ বছরের কন্যাকে ধর্ষণ করে করে মেরেই ফেলেছে, ধরা পড়ে তা স্বীকারও করেছে। কিন্তু শারিয়া কোর্ট তাকে ছেড়ে দিয়েছে কিছুদিন জেল দিয়ে আর পঞ্চাশ হাজার ডলার ফাইন করে, যে ডলার সে দেবে নিহতের মা অর্থাৎ তার স্ত্রীকে। এই হলো ইসলামের নামে শারিয়া আইনের তামাশা। Video HERE

Rapist Imam


(7) যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি। ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতি ইত্যাদি দিয়ে এ দানবকে এতদিন মোটামুটি বশে রেখেছিল দুনিয়ার মানুষ। কিন্তু এখন মহাপরাক্রান্ত প্রযুক্তি এসে ঐসব ধর্মীয় মূল্যবোধ, সামাজিক সংস্কৃতিকে ভেঙ্গে চুরে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছে। এখন বাংলাদেশের টাঙ্গাইলে ছেলে আর আফ্রিকার ট্যাংগানিকা'য় মেয়ে, অথবা ঢাকায় মেয়ে আর আমেরিকার ডাকার-এ ছেলে দুজন বেডরুমে ঢুকে দরজা লক করে স্কাইপ ক্যামেরা চালিয়ে দিলেই হলো। মুখ ঢেকে, নারী-পুরুষের দুরত্ব বাড়িয়ে বা ফেসবুকে ওয়াজ মহফিলে লক্ষ হুংকার দিয়ে এটা ঠেকানো তো দুরের কথা কমানোও যাবে না, অন্য পথ ধরতে হবে। সেটা সমাজগুরু আর ধর্মগুরুদের দায়িত্ব।


(8) কাল তামামী - ইচ্ছেমত ধর্ম পালন করার অধিকার সবার আছে এটা খোঁড়া যুক্তি। কোনো হিন্দু যদি সতীদাহ করার উদ্যোগ নেয় কারণ ওটা ওদের ধর্মে আছে, তবে এই আপনিই তাকে বাধা দেবেন। কেন দেবেন? কারণ ধর্মীয় সংস্কৃতির বাহানায় কারো ওপর অত্যাচার করা যায় না, কারো অধিকার ক্ষুন্ন করা যায় না। সেজন্যই অনার কিলিং, নারীর মুসলমানীর মত ভয়ংকর প্রথাও চলতে পারে না তা যতই এর পেছনে ধর্ম বা সংস্কৃতির সমর্থন থাকুক। তাঁদের আরেক যুক্ত হল পোশাক নির্ধারণ করা নারীর অধিকার। এই কথাটায় যুক্তি আছে। বছর বারো আগেও আমিও এ দাবী করতাম -নিকাব নারীর অধিকার। কিন্তু এখন অন্য চিন্তা করতে হচ্ছে কারণ কোনো অধিকারই শর্তহীন নয়, একজনের অধিকারের সীমা অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন না করা পর্য্যন্ত। ‘ফলেন পরিচিয়তে’, অর্থাৎ গাছের পরিচয় তার ফলে। নিকাব ধীরে ধীরে হয়ে উঠেছে ক্রিমিন্যালদের রক্ষাকবচ।

(১) Daily Sangram - 15 July 2015 শাদ-এর রাজধানী দেজামেনার এক মার্কেটে (বোরকা পরিহিত) নারীর ছদ্মবেশে আত্মঘাতী বোমা হামলায় ইসলামপন্থী সশস্ত্র সংগঠন বোকো হারামের এক সদস্য ১৫ জনকে নিহত ও ৮০ জনকে আহত করে। কাউকে বোরকা পরিহিত অবস্থায় দেখলেই গ্রেফতার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছে পুলিশ।

(২) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিডিও ফুটেজ দেখে চোর আটক করা হয়েছে, নিকাব থাকলে সে আটক হত না।  Source


 

 

 

 

(৩) সংগ্রাম ডেস্ক: ০৩ অক্টোবর ২০১৫ - সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টির উদ্দেশ্যে ভারতের আজমগড়ে ফেস-মাস্ক পরে মন্দিরে গরুর গোশ্ত ছুঁড়ে পালানোর সময় ধরা পড়েছে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) কর্মী- Source

(৪) জুলাই ২১, ২০০৫-লণ্ডন বম্বিং-এর নিকাবী বোমাবাজ পালিয়ে গেছে। (৫) নিকাবী ডাকাতরা লণ্ডনের ডিপার্টমেন্টাল ষ্টোর সেলফ্রিজ-এ ডাকাতি করে পালিয়ে গেছে জুন ২০১৩ সালে।

(৬) ইংল্যান্ডে পুরুষ খুনীরা নিকাবী-নারীর ছদ্মবেশে ফ্লোরেন্স ডিক্সি নামের এক মহিলাকে হত্যার চেষ্টা করে।

(৭) ইংল্যাণ্ডে নারী-পুলিশ শ্যারন বেশেনিভিস্কি’র হত্যাকারী মুস্তাফ জুমা নিকাব পরে পালিয়ে গেছে মনে করা হয়।

(৮) পাকিস্তানের রেড-মস্ক-এর কুখ্যাত মোল্লা ফয়জুল্লা শারিয়া প্রতিষ্ঠার দাবীতে তার বাহিনী নিয়ে মহা তুলকালাম করেছিল, আত্মঘাতী বোমা দিয়ে সরকার উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়েছিল -সেনাবাহিনীর গুঁতো খেয়ে সে নিকাব-বুরখা পরে পালাবার সময় ধরা পরে।

ক্রিমিন্যালদের রক্ষাকবচ সব হিসেবেই ধ্বংস করা দরকার। এর পরেই কথা আসে, ইসলামে এক সময়ের হালাল কি অন্য সময় হারাম হতে পারে? জামাতের নারী-নেত্রীত্ব মেনে নেয়া চরম ঠকবাজী, ওটা বাদ। কিন্তু "পরিস্থিতির পরিবর্তনে" নবীজীর সময়েই কোরান ও নবীজীর নির্দেশ বদলের অনেক উদাহরণ দেয়া আছে আমার বই "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি"-তে। আমার কথা বাদ দিয়ে দেখে নিন পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ শারিয়া-সমর্থক বিশেষজ্ঞ ড: হাশিম কামালী'র "প্রিন্সিপল্স অফ ইসলামিক জুরিস্প্রুডেন্স", অনেক উদাহরণ পেয়ে যাবেন। মুখে যতই বলা হোক, ‘ফলেন পরিচিয়তে’, অর্থাৎ গাছের পরিচয় তার ফলে। আজ আপনি যদি রাষ্ট্র প্রধান হন, ফিরিয়ে আনবেন বন্দিনী ধর্ষণ? অমুসলিমদের ওপরে জিজিয়া ট্যাক্স? চালু করবেন দাসপ্রথা যেখানে হাট-বাজারে আলু-পটলের মত মানুষ বিক্রী হবে কেনা যাবে? করবেন না। কারণ পরিস্থিতি পালটে গেছে। নিকাব এখন অপরাধীকে রক্ষা করার হাতিয়ার। অপরাধ দমনের জন্য, মানব কল্যাণের জন্যই ওটা নিষিদ্ধ হওয়া উচিত। কথাটা মানতে বাধ্য হবেন যখন নিকাব-ধারীরা আপনারই দোকানে চুরি করবে, আপনারই বাড়িতে ডাকাতি করবে আপনারই প্রিয়জনকে হত্যা করবে। এটা ঠেকাতে চান না আপনারা?

ফেস-মাস্কের ইতিহাস- প্রাচীন বেশ কিছু রাজ্যে ওটা ছিল সম্ভ্রান্ত নারীর পোশাক - এমনকি অনেক রাজ্যে আইন করে সাধারণ নারীর ফেস-মাস্ক পরা নিষিদ্ধ ছিল। অনেকে বলেন ওটা থেকেই মুসলিম সাম্রাজ্যে প্রথমে সম্ভ্রান্ত নারীর নিকাব পরা শুরু হয়, পরে তা সাধারন নারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। উপনিবেশ থেকে মুক্ত হবার পরে এবং আজকাল পশ্চিমা দেশে ইমিগ্রেশন নেবার পরে মুসলিম পরিচিতি'র একটা ঝোঁক দেখা দেয় অনেক মুসলিমের মধ্যে। নারীর ইচ্ছে হোক বা বাপ-ভাইদের চাপিয়ে দেয়া হোক, নিকাব সে ঝোঁক পূরণ করে। 

Print