চলে গেছে একুশে, দ্বারে সমাগত ছাব্বিশে, দূরে দাঁড়িয়ে স্মিতহাস্যে ষোলোই। রক্তক্ষতের অলংকারে সজ্জিত আমাদের তিনটে অভ্রভেদী দিবস। সাংঘর্ষিক মেরুকরণও আছে, এই তিনটে দিন উদযাপন:-
**- জাতির এক অংশের কাছে চেতনা ও অস্তিত্বের গর্বিত মেরুদণ্ড,
**- অন্য এক অংশ বলেন দিবস পালন শির্ক :-
১. আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করতেও পারেন কিন্তু শির্ক কখনোই ক্ষমা করবেন না – সুরা নিসা: ৪৮, ১১৬, মায়িদাহ:৭২, আনাম:১৬৩, কাহফ : ১১০, ইমরান: ৬৪, আল জিন: ২৬, আনাম: ৫৯ ইত্যাদি।
২. সহি মুসলিম-৯৩, আবু দাউদ:৩২৩৬(ইফা), ফতহুল বারী ৭/৪৪৮, আবু দাউদ:৪০৩৩, ইবনে মাজাহ ৫২০৪ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
তাঁরা বলেন ‘শির্ক’ শব্দটা এসেছে “শরিক” থেকে, অর্থাৎ কোন কিছুর ওপরে অংশীদার বা যৌথ-মালিকানা। সম্পত্তি বা ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন অংশীদার থাকে সেরকম। উদাহরণ – আদি মুসলিম সমাজে দাস-দাসীর ওপরে যৌথ মালিকানার প্রথা ছিল:-
(ক) হানাফি আইন হেদায়া- পৃষ্ঠা ২৩১:- ‘অংশীদারগণ পরস্পরের সম্মতিক্রমে ক্রীতদাসীকে দৈহিক উপভোগ করিতে পারিবে’।
(খ) সহি বোখারী – মদীনা বিশ্ববিদ্যায়ের ডঃ মুহম্মদ মহসীন খান,- ভল্যুম ৩, হাদিস নং ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭০১ ও ৭০২।
মাওলানারা বলেন – আল্লাহ’র সাথে শরীক করা মানে একমাত্র আল্লাহ’র যা প্রাপ্য তাতে অন্য কিছুকে বা কাউকে অংশীদার করা। সে অংশীদার হতে পারে কোনো বস্তু যেমন, গাছ-পাথর-মাজার-প্রতিমা, বা অন্য কোন জীবন্ত বা প্রয়াত মানুষ যেমন পীর আউলিয়া মুর্শিদ এমনকি নবী মুহম্মদ (স) পর্যন্ত। শির্কের সংজ্ঞা আছে কোরানের বাংলা অনুবাদে, মওলানা মুহিউদ্দীন খান পৃষ্ঠা ২৫৪:- “আল্লাহ তাআলার সত্বা ও গুণাবলী সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, তেমন কোন বিশ্বাস সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে পোষণ করাই হল শেরক।
এরই কিছু বিশ্লেষণ নিম্নরূপ:
(ক) জ্ঞানের ক্ষেত্রে শরীক সাব্যস্ত করা: অর্থাৎ, (১) কোন বুজুর্গ বা পীরের ব্যাপারে এমন বিশ্বাস পোষণ করা যে, আমাদের যাবতীয় অবস্থা সম্পর্কে তিনি অবহিত। (২) কোন জ্যোতিষ পণ্ডিতের কাছে গায়বের সংবাদ জিজ্ঞেস করা কিংবা (৩) কোন বুজুর্গের বাক্যে মঙ্গল দেখে তাকে অনিবার্য মনে করে নেয়া অথবা (৪) কাউকে দূর থেকে ডাকা এবং সাথে সাথে এ কথা বিশ্বাস করা যে, সে আমার ডাক শুনে নিয়েছে অথবা (৫) কারো নামে রোজা রাখা।
(খ) ক্ষমতার ক্ষেত্রে শরীক করা: অর্থাৎ, কাউকে হিত বা অহিত তথা ক্ষতি-বৃদ্ধি সাধনের অধিকারী মনে করা। কারো কাছে উদ্দেশ্য যাঞ্চা করা। কারো কাছে রুজি-রোজগার বা সন্তান-সন্ততি প্রার্থনা করা।
(গ) এবাদতে শরীক সাব্যস্ত করা: কাউকে সেজদা করা, কারো নামে কোন পশু মুক্ত করা, কারো নামে মানত করা, কারো কবর কিংবা বাড়িঘরের তাওয়াফ করা, আল্লাহ তাআলার কোন হুকুমের তুলনায় ওপর কারো কথা কিংবা কোন প্রথাকে প্রাধান্য দেয়া, কারো সামনে রুকু করার মতো অবনত হওয়া, কারো নামে জীব কোরবানি করা, পার্থিব কাজ-কারবার কিংবা বিবর্তনকে নক্ষত্রের প্রভাব বলে বিশ্বাস করা এবং কোন কোন মাসকে অশুভ মনে করা প্রভৃতি।” উদ্ধৃতি শেষ।
এখন দেখা যাক আমরা আল্লাহ’র কাছে কি প্রার্থনা করি:-
- জানা অজানা সব অপরাধের ক্ষমা,
- পরকালে বেহেস্ত প্রাপ্তি ও দোজখ থেকে নাজাত,
- রোগ শোক বলা মুসিবত থেকে পরিত্রাণ,
- সন্তান লাভ,
- পরীক্ষায় ভালো ফল, বিয়ে বা ব্যবসায়ে সাফল্য ইত্যাদির লম্বা তালিকা
কিন্তুবিভিন্ন দিবস উদযাপন করার সময় আমরা কী :-
(১) দিনগুলোকে ইবাদত করি? জবাব: না, অবশ্যই করিনা।
(২) শহীদ মিনারে, বিজয় স্তম্ভে বা স্মৃতিসৌধে রুকু সেজদা করি? জবাব: না, করিনা।
(৩) দিনগুলোর কাছে অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনা করি? জবাব: না, নিশ্চয়ই করিনা।
(৪) দিনগুলোর কাছে বেহেস্ত প্রার্থনা করি? জবাব:- না, প্রশ্নই ওঠেনা।
(৫) দিনগুলোর কাছে দোজখ থেকে নাজাত প্রার্থনা করি? জবাব: না, অবশ্যই করিনা।
(৬)দিনগুলোর কাছে রোগশোক, বালামুসিবত থেকে রেহাই প্রার্থনা করি? জবাব: না, করিনা।
(৭) নি:সন্তান হলে দিনগুলোর কাছে কি সন্তান প্রার্থনা করি? জবাব: না, কখনোই করিনা।
(৮) দিনগুলোর কাছে পরীক্ষায় ভালো ফল, বিয়ে বা ব্যবসায়ে সাফল্য প্রার্থনা করি? জবাব: না, প্রশ্নই ওঠেনা।
অর্থাৎ ওই দিনগুলো পালনে শির্কের লেশমাত্র নেই।
ভলটেয়ার বলেছেন – “তোমার বক্তব্যের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষায় আমি জীবন দেব।” সভ্যতার এটাই অন্যতম মেরুদন্ড।
এবারে জন্মদিন ও বড়দিন (খ্রিষ্টমাস) পালন এবং খ্রিস্টানদেরকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানো :-
সুরা মরিয়ম আয়াত ১৫:- "তাঁর (হযরত ইয়াহিয়া আঃ) প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর জন্মদিনে, এবং মৃত্যুদিনে ও জীবিত পুনরুত্থান দিনে।
সুরা মরিয়ম আয়াত ৩৩ :- "( হযরত ইসা আঃ বলছেন) "আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব"।
অর্থাৎ কোরান মোতাবেক জন্মদিন পালন, বড়দিন (খ্রিষ্টমাস) পালন ও খ্ৰীষ্টানদেরকে খ্রিস্টমাসের শুভেচ্ছা জানানো অবশ্যই বৈধ।
দৈনিক সংগ্রাম - সু-স্বাগতম ইংরেজি নববর্ষ ২০২৪ - ডা. মুহাম্মাদ মাহতাব হোসাইন মাজেদ -
https://www.dailysangram.com/post/544813-%E0%A6%B8%E0%A7%81-%E0%A6%B8%E0%A7%8D%E0%A6%AC%E0%A6%BE%E0%A6%97%E0%A6%A4%E0%A6%AE-%E0%A6%87%E0%A6%82%E0%A6%B0%E0%A7%87%E0%A6%9C%E0%A6%BF-%E0%A6%A8%E0%A6%AC%E0%A6%AC%E0%A6%B0%E0%A7%8D%E0%A6%B7-%E0%A7%A8%E0%A7%A6%E0%A7%A8%E0%A7%AA
দিবস পালন করার বা না করার অধিকার সবার আছে, চলুন আমরা যার যা বলার শান্তিপূর্ণভাবে বলতে থাকি। কলুষিত রাজনীতির ছত্রছায়ায় বিভিন্ন উগ্রতায় ছেয়ে গেছে দেশ। কিন্তু ইতিহাসের অমোঘ ধারা বয়ে চলেছে ধীরে। বাঙালির অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক মেরুদণ্ড প্রশ্নাতীত অভ্রভেদী, ইতিহাসে বারবার প্রমাণ হয়েছে সেটা। তাকে সাময়িক বিভ্রান্ত করা যেতে পারে কিন্তু আখেরে তাকে পরাজিত করার সাধ্য কারো নেই।
হাসান মাহমুদ Email:-