• Home
  • Articles
  • Islamic :: Bangla
  • ২১শে, ২৬শে, ১৬ই, জন্মদিন ও নববর্ষ উদযাপন - বিরোধিতার মূল কারণ কি?

২১শে, ২৬শে, ১৬ই, জন্মদিন ও নববর্ষ উদযাপন - বিরোধিতার মূল কারণ কি?

 

এই দিনগুলো উদযাপন জাতির এক অংশের কাছে চেতনা ও অস্তিত্বের গর্বিত মেরুদণ্ড, অন্য অংশের কাছে শির্ক। আমরা জানি আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করতেও পারেন কিন্তু শির্ক কখনোই ক্ষমা করবেন না – সুরা নিসা: ৪৮, ১১৬, মায়িদাহ:৭২ ইত্যাদি, সুরা নিসা: ৪৮, ১১৬, মায়িদাহ:৭২ ইত্যাদি, অনেক হাদিসও আছে এ ব্যাপারে। আমরা জানি ‘শির্ক’ শব্দটা এসেছে “শরিক” অর্থাৎ কোন কিছুর ওপরে অংশীদার বা যৌথ-মালিকানা থেকে।  সম্পত্তি বা ব্যবসা-বাণিজ্যে যেমন অংশীদার থাকে সেরকম।   উদাহরণ – 

(ক)  ১৮৩৯ -১৮৬৯ সালে উসমানিয়া খলিফা তানজিমাত আইনে দাসপ্রথা উচ্ছেদ করার আগে দাস-দাসীর ওপরে যৌথ মালিকানার প্রথা ছিল :- সহি বোখারী, মদীনা বিশ্ববিদ্যায়ের ডঃ মুহম্মদ মহসীন খান,-  ভল্যুম ৩, হাদিস নং  ৬৯৭, ৬৯৮, ৬৯৯, ৭০১ ও ৭০২। ফ্রী ডাউনলোড- https://archive.org/details/the-translation-of-the-meanings-of-sahih-al-bukhari-translated-by-dr.-muhammad-muhsin-khan

(খ) হানাফি আইন হেদায়া- পৃষ্ঠা ২৩১:- অংশীদার মালিকগণ পরস্পরের সম্মতিক্রমে ক্রীতদাসীর সাথে সংসর্গ করতে পারবে।

মাওলানারা বলেন – আল্লাহ’র সাথে শরীক করা মানে একমাত্র আল্লাহ’র যা প্রাপ্য তাতে অন্য কিছুকে বা কাউকে অংশীদার করা।  সে অংশীদার হতে পারে কোনো বস্তু যেমন, গাছ-পাথর-মাজার-প্রতিমা, বা অন্য কোন জীবন্ত বা প্রয়াত মানুষ যেমন পীর আউলিয়া মুর্শিদ এমনকি নবী মুহম্মদ (স) পর্যন্ত।  শির্কের সংজ্ঞা আছে কোরানের বাংলা অনুবাদে, মওলানা মুহিউদ্দীন খান পৃষ্ঠা ২৫৪:-  “আল্লাহ তাআলার সত্বা ও গুণাবলী সম্পর্কে যেসব বিশ্বাসের কথা বলা হয়েছে, তেমন কোন বিশ্বাস সৃষ্ট বস্তুর ব্যাপারে পোষণ করাই হল শেরক"।

এখন দেখা যাক আমরা আল্লাহ’র কাছে কি প্রার্থনা করি:-

  • জানা অজানা সব অপরাধের ক্ষমা,
  • পরকালে বেহেস্ত প্রাপ্তি ও দোজখ থেকে নাজাত,
  • রোগ শোক বলা মুসিবত থেকে পরিত্রাণ,
  • সন্তান লাভ,
  • পরীক্ষায় ভালো ফল, বিয়ে বা ব্যবসায়ে সাফল্য ইত্যাদির লম্বা তালিকা

কিন্তু বিভিন্ন দিবস উদযাপন করার সময়  আমরা কী :-

(১)  দিনগুলোকে ইবাদত করি?  জবাব: না, অবশ্যই করিনা।

(২) শহীদ মিনারে, বিজয় স্তম্ভে বা স্মৃতিসৌধে রুকু সেজদা করি?  জবাব: না, করিনা।

(৩) দিনগুলোর কাছে অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনা করি?  জবাব: না, নিশ্চয়ই করিনা।

(৪) দিনগুলোর কাছে বেহেস্ত প্রার্থনা করি?   জবাব:- না, প্রশ্নই ওঠেনা।

(৫) দিনগুলোর কাছে দোজখ থেকে নাজাত প্রার্থনা করি?  জবাব: না, অবশ্যই করিনা।

(৬)দিনগুলোর কাছে রোগশোক, বালামুসিবত থেকে রেহাই প্রার্থনা করি?  জবাব: না, করিনা।

(৭) নি:সন্তান হলে দিনগুলোর কাছে কি সন্তান প্রার্থনা করি?  জবাব: না, কখনোই করিনা।

(৮) দিনগুলোর কাছে পরীক্ষায় ভালো ফল, বিয়ে বা ব্যবসায়ে সাফল্য প্রার্থনা করি?  জবাব: না, প্রশ্নই ওঠেনা। 

অর্থাৎ ওই দিনগুলো পালন স্রেফ আমাদের সামাজিক রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত উৎসব মাত্র, ওগুলো পালনে শির্কের লেশমাত্র নেই।  বিভিন্ন ইসলামী শব্দবাক্যের ধুম্রজালে  দিবস পালনকে "ইসলামবিরোধী" দাবি করাকে জাতি চিরকাল বর্জন করে দেশে ও বিশ্বজুড়ে মহা আনন্দে উৎসাহে নববর্ষ উদযাপন করেছে। সার্চ :- "নববর্ষ উদযাপন: সামোয়া থেকে লন্ডন" : মহাসমারোহে নববর্ষ উদযাপিত হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে, সামোয়ায়, প্যারিসে, টরন্টোতে, আমিরাতে, মস্কোতে, ইউক্রেনে, ইংল্যান্ডের কার্ডিফে, স্কটল্যান্ডে, ১২ হাজার আতশবাজি এবং ৫০ হাজার লাইট স্পার্ক সহ লন্ডনে, "সহস্র কণ্ঠে সঙ্গীত পরিবেশন, ৫০ হাজার বাঙালির সমাগমে বাংলা নববর্ষ উদযাপন নিউইর্য়কের রাস্তায়", কোথায় নয়? এছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যোগে বন্ধুবান্ধব নিয়ে অগণিত বাসায় উদযাপিত হয়েছে বাংলা নববর্ষ !!

বাংলাদেশ, ভারত সহ অনেক দেশে ১৪ এপ্রিল নববর্ষ মুখোশ, মূর্তি সহ উৎসব মুখর পরিবেশে উদযাপন করা হয় বিভিন্ন নামে। সংস্কৃতি শব্দ "সংক্রান্তি" থেকে উদ্ভূত "সংক্রান" নামে থাইল্যান্ডে, "সংক্রান্ত" নামে লাওসে এবং নেপালে মুখোশ সহ নববর্ষ পালনের পাশাপাশি সংস্কৃত শব্দ "চন্দ্র নববর্ষ"-ও পালন করা হয়। এই সবগুলো নাম সংস্কৃতি থেকে এসেছে কিন্তু কেউ সেগুলোকে আমাদের খেলাফতিদের মত "হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন" বলে দাবি করেনি।  সূত্র:- ১৪ই এপ্রিল দেশে দেশে যেভাবে বর্ষবরণ উৎসব হয়| BBC Bangla - https://www.youtube.com/watch?v=y4xO3CWFil8

**- দৈনিক সংগ্রামে "শুভ বাংলা নববর্ষ" ১৪৩২ - https://dailysangram.com/bangladesh/capital/FpTRl8LU3gKW/ 

এবারে জন্মদিন ও বড়দিন (খ্রিষ্টমাস) পালন এবং খ্রিস্টানদেরকে বড়দিনের শুভেচ্ছা জানানো :-

সুরা মরিয়ম আয়াত ১৫:- "তাঁর (হযরত ইয়াহিয়া আঃ) প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক তাঁর জন্মদিনে, এবং মৃত্যুদিনে ও জীবিত পুনরুত্থান দিনে।

সুরা মরিয়ম আয়াত ৩৩ :- "( হযরত ইসা আঃ বলছেন) "আমার প্রতি সালাম যেদিন আমি জন্মগ্রহণ করেছি, যেদিন মৃত্যুবরণ করব এবং যেদিন পুনরুজ্জীবিত হয়ে উত্থিত হব"।

অর্থাৎ কোরান মোতাবেক জন্মদিন পালন, বড়দিন (খ্রিষ্টমাস) পালন ও খ্ৰীষ্টানদেরকে খ্রিস্টমাসের শুভেচ্ছা জানানো অবশ্যই বৈধ। 

দিবস পালন করার বা না করার অধিকার সবার আছে, চলুন আমরা যার যা বলার শান্তিপূর্ণভাবে বলতে থাকি। ভলটেয়ার বলেছেন – “তোমার বক্তব্যের সাথে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু তোমার কথা বলার অধিকার রক্ষায় আমি জীবন দেব।”  সভ্যতার এটাই অন্যতম মেরুদন্ড।  আমার বিশ্বাস দিবস পালন যে শিরক নয় তা তাঁরা জানেন কিন্তু তবুও তাঁরা তার বিরোধিতা করেন। তার কারণ আমাদের জাতীয়তাবাদ দিবস ভিত্তিক (বিশেষ করে একুশে), এবং সেটা তাঁদের ইসলামী জাতীয়তাবাদের বিরোধী। বিস্তারিত:- 

আমাদের ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ আক্রান্ত হবার মূল কারণ :- https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/221-2023-04-20-14-54-34


Print