শারিয়া আইনের উদাহরণ - (UPDATED - 18 November 2024).

শারিয়া আইনের উদাহরণ (UPDATED - 18 November 2024).

প্রথমেই প্রাচীন ভারতের কিছু প্রাচীন আইন দেখা যাক। আমি এ আইনগুলো দেখাচ্ছি শারিয়ার সাথে তুলনা করার জন্য নয়, বরং এটা দেখাতে, আমাদের অনেকে যেমন শারিয়াকে আল্লাহ’র আইন মনে করেন সেরকম ওরাও ওই আইনগুলোকে ‘ভগবানের আইন’বলে বিশ্বাস করে - (সূত্র- "One of the foremost Indologists of her time" হিসাবে বিখ্যাত ডঃ সুকুমারী ভট্টাচার্যের বই " “প্রাচীন ভারত - সমাজ ও সাহিত্য” ) 

                                                                 Sukumari.png 

**- বিধবাকে মৃত স্বামীর সাথে পুড়িয়ে মারার আইন  “জীবিত নারীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে মৃতের বধূ হতে...এই নারী পতিলোকে যাচ্ছে, এ-প্রাচীন রীতি অনুসরণ করছে” (অথর্ববেদ ১৮/৩/৩)।

**- “পিতামাতার জন্য কন্যা অভিশাপ” (ঐত্তরীয় ব্রাহ্মণ ৬/৩/১৩)।

**- “লাঠি দিয়ে স্ত্রীকে মেরে দুর্বল করা উচিত যাতে শরীরের ওপরে তার কোন অধিকার না থাকে” (শতপথ ব্রাহ্মণ ৪/৪/২/১৩)।

**- সর্বগুণান্বিতা নারীও অধমতম পুরুষের চেয়ে অধম” (তৈত্তরীয় সংহিতা ৬/৫/৮/২)।

**- গৃহকর্মে ও দায়িত্বে স্ত্রীর অসামান্য অবদানের পরেও ‘ভার্য্যা’ (স্ত্রী) ও ‘ভৃত্য’ শব্দ দু’টোর ব্যুৎপত্তিগত অর্থ একই যাকে ‘ভরণ’ অর্থাৎ ভরণপোষণ করতে হয় দু’টোরই উৎস ‘ভৃ’ ধাতু)।

**- “পুত্র-কন্যার সামনে স্বামী উপপত্নী আনা বা বেশ্যাগমন করতে পারবে কিন্তু স্ত্রীর সামান্য পদস্খলনে সমাজ কঠোর দণ্ড দেবে” (মৈত্রায়নী-র বিভিন্ন আইন ও তৈত্তিরীয় সংহিতা ৬/৫/৮/২)।

**- “কালো পাখি, শকুন, নেউল, ছুঁচো, কুকুর ও নারী হত্যার প্রায়শ্চিত্ত একই” (আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১/৯/২৩/৪৫)।

**- “নারীকে অবরুদ্ধ রাখো, নাহলে তার শক্তিক্ষয় হবে” (শতপথ ব্রাহ্মণ ১৪/১/১/৩১)।

**- একটি যজ্ঞে “সদ্যোজাত পুত্রকে ওপরে তুলে ধরা হয়, কন্যাকে মাটিতে শুইয়ে রাখা হয়” (তৈত্তরীয় সংহিতা ৬/৫/১০/৩)।

**- “উত্তম নারী হল ‘যে স্বামীকে সন্তুষ্ট করে, পুত্র-সন্তানের জন্ম দেয় ও স্বামীর কথার ওপরে কথা বলে না’” (ঐত্তরীয় ব্রাহ্মণ ৩/২৪/২৭)।

**- “সন্তান না জন্মালে ১০ বছর পর ও পুত্র না জন্মালে ১২ বছর পর স্ত্রীকে ত্যাগ করা যাবে” (আপস্তম্ভ ধর্মসূত্র ১/১০-৫১-৫৩)।

**- “যার স্ত্রীর চেয়ে পশুর সংখ্যা বেশি সে সৌভাগ্যবান” (শতপথ ব্রাহ্মণ ২/৩/২/৮)।

ইত্যাদি। একই রকম প্রচণ্ড নারী-বিরোধীতা ছিল স্রষ্টার নামে বানানো ইহুদী-খ্রীষ্টান আইনেও।

এবারে নির্ভরযোগ্য কেতাব থেকে কিছু শারিয়া আইন, আইনগুলোই আমাদের বলে দেবে আসলেই তারা কি। সেই সাথে প্রমাণ হয়ে যাবে আল কোরান - ইহুদিরা নিজের কথা আল্লাহর নামে চালিয়েছে (ইমরান ৭৮) সেটা এক্ষেত্রেও হয়েছে!!   আমরা তো এই দুর্ধর্ষ ইসলাম-বিরোধী দাবিও দেখেছি - "আলেমদের ঐক্যমত কোরান রসূলকে বাতিল করার ক্ষমতা রাখে !!" - পৃষ্ঠাগুলোর স্ক্যান সহ দলীল :- https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/311-2024-10-28-15-42-13

সেজন্যই রসূল (সা)  কত কষ্টে কত যন্ত্রণায় ঘোষণা করেছিলেন - "দূর হয়ে যাও - আমার রহমত থেকে দূর হয়ে যাও যারা আমার পরে ইসলামকে বদলে দিয়েছো "! -  সহি বুখারী নবম খন্ড হাদিস 174:-  https://sunnah.com/search?q=Far+removedBukhari_8-174.png

চলুন মাথা ঠান্ডা রেখে একাডেমিক মানসিকতা নিয়ে সামনে এগোই। মনে রাখতে হবে যেটা আমি অনেক অনুষ্ঠানে বলেছি - শারিয়া আইনগুলো চার ভাগে ভাগ করা যেতে পারে (1) বেশিরভাগ আইনই গ্রহণযোগ্য, (2) কিছু আইন আমরাই পেছনে ফেলে এসেছি যেমন দাস বা জিজিয়া-আইন, (3) কিছু আইন সংস্কার হলে প্রয়োগযোগ্য, এবং (4) কিছু আইন সংস্কার করা অসম্ভব। সেটা ভিন্ন আলোচনা, টপিকে ফিরে আসি। :-

(১) কোরাণ-হাদিসে মানবাধিকার ও নারী-অধিকারের ওপরে অত্যন্ত সুন্দর বহু উপদেশ আছে, - কেউ সে উপদেশ না মানলে আদালতে শাস্তি হয় না। কিন্তু নারী-বিরোধী আইন না মানলে শাস্তি হয়। আপনারা জানেন স্বার্থের সঙ্ঘাতে আইনের কাছে উপদেশ পরাজিত হতে বাধ্য।

(২) আইনগুলোর বহু জায়গায় বলা আছে ‘যাহা স্থির করা হইয়াছে’ কিংবা ‘যে অধিকার দেয়া হইয়াছে’ কিংবা ‘যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হইয়াছে’ ইত্যাদি। সিদ্ধান্তটা কে নিল, অধিকারটা কে দিল বা স্থিরটা কে করল তা খেয়াল করলেই দেখা যাবে এগুলো করেছেন কিছু মানুষ এবং মানুষের ভুল হতে পারে,

(৩) কিন্তু শারিয়া আইনে বলা হয়েছে অতিতের ঐ-সব সিদ্ধান্ত কেউ না মানলে সে মুরতাদ, অর্থাৎ তার মৃত্যুদণ্ড হবে। এটা পরিষ্কার ব্ল্যাকমেইল - এটা অপরাধ - এটা ভিন্নচিন্তাকে দমন করে বিশ্ব মুসলিমের অপরিমেয় ক্ষতি করেছে, আমরাএজন্যই  পরস্পরের প্রতি মাওলানাদের তকফীর অর্থাৎ কাফের ফতোয়া দেওয়া দেখি।  এমনকি বড়পীর হযরত আব্দুল কাদের জিলানীর মতো দরবেশকে ইমাম হোউজ এক হাজার মাওলানা সিগনেচার নিয়ে কাফের ঘোষণা করেছিল - তাঁর বই "গুনিয়াতুত তালেবীন" - মুখবন্ধ। 

উদাহরণগুলোর বি-ই-আ হল বাংলাদেশ ইসলামি ফাউণ্ডেশন কর্তৃক বাংলায় প্রকাশিত বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন, ‘বাংলা কোরাণ’ হল মওলানা মুহিউদ্দিনের করা কোরাণের অনুবাদ, হানাফি কেতাব হেদায়া অনুবাদ চার্লস হ্যামিল্টন, শাফি কেতাব আল আজহার দ্বারা সত্যায়িত "উমদাত আল সালিক" এছাড়া অন্যান্য শারিয়া কেতাবও আছে।

  1. খাবার, বাসস্থান ও পোশাক দিতে স্বামী বাধ্য থাকবে শুধুমাত্র বাধ্য স্ত্রীকে, অবাধ্য স্ত্রীকে নয়। এর বাইরের সব খরচ এমনকি ডাক্তারের, ওষুধের বা সৌন্দর্য্য-চর্চার খরচ ইত্যাদি হবে স্বামীর করুণা ও দয়া। (বলাই বাহুল্য, স্ত্রী অবাধ্য কি না সেটা ঠিক করবে স্বামী নিজেই)। হানাফি আইন পৃঃ ১৪০; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৪৪; মুহিউদ্দীন খানের অনুদিত বাংলা কোরাণ পৃঃ ৮৬৭ তফসীর “স্ত্রীর যে প্রয়োজনীয় ব্যয়ভার বহন করা স্বামীর যিম্মায় ওয়াজিব (বাধ্য), তা চারটি বস্তুর মধ্যে সীমাবদ্ধ আহার, পানীয়, বস্ত্র ও বাসস্থান। স্বামী এর বেশি কিছু স্ত্রীকে দিলে অথবা ব্যয় করলে তা হবে অনুগ্রহ, অপরিহার্য নয়।”
  2. “(স্বামীর) বৌ-তালাকে সাক্ষ্য শর্ত নহে” (বি-ই-আ ১ম খণ্ড, ধারা ৩৪৪)। এবারে খুলুন কোরাণ, সুরা ত্বালাক, আয়াত ২ “তোমরা যখন স্ত্রীদিগকে তালাক দিতে চাও তখন দুইজন সাক্ষী রাখিবে।”
  3. শারিয়ায় চুরি, ডাকাতি, পরকীয়া, মদ্যপান, রাষ্ট্রদ্রোহিতা ইত্যাদির শাস্তি হল হাত-পা কাটা, জনসমক্ষে চাবুকের আঘাত, জনসমক্ষে পাথর মেরে মৃত্যুদণ্ড, ইত্যাদি। কিন্তু ওই শারিয়া আইনেই আছে “রাষ্ট্রপ্রধানের বিরুদ্ধে হুদুদ মামলা করা যাবে না” (বি-ই-আ ৩য় খণ্ড নং ৯১৪গ এবং হানাফি আইন পৃঃ ১৮৮)।
  4. বি-ই-আ ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩০১ “যদি রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি কাউকে বাধ্য করে কোন নারীকে ধর্ষণ করতে, তবে ধর্ষণকারী শাস্তি পাবে না।”এ-আইনে “রাষ্ট্রপ্রধান বা তাঁর প্রতিনিধি”র কোন শাস্তির উল্লেখ নেই। কেউ বলতে পারেন, অন্যত্র শাস্তির কথা আছে। কিন্তু এখানে সেটা নেই বলে কোন বাকপটু দুর্ধর্ষ উকিল তার অপরাধী মক্কেলকে খালাস করে নিতে পারে।
  5. বি-ই-আ ১ম খণ্ড, পৃঃ ৩১১, ধারা ১৪৯ঃ “বোবা’র সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়।” কিন্তু বোবা’র তো চোখ আছে, সে তো দেখতে পারে। তার সাক্ষ্য ছাড়া চোর-ডাকাত-খুনীরা পার পেয়ে যাবেই কখনো কখনো। এটা আল্লাহ’র আইন হতে পারে না।
  6. দাস-দাসী, গায়িকা এবং সমাজের নীচু ব্যক্তির (উদ্ধৃতিঃ রাস্তা পরিষ্কারকারী বা শৌচাগারের প্রহরী, ইত্যাদি) সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। হানাফি আইন পৃঃ ৩৬১; শাফি’ই আইন পৃঃ ৬৩৬; পেনাল ল’ অব্ ইসলাম পৃঃ ৪৬; বিধিবন্ধ ২য় খণ্ড, পৃঃ ২৬৩)। কিন্তু ওদেরও তো চোখ-কান-বিবেক আছে। ওরা তো চুরি-ডাকাতি দেখতে পারে ঠিক আমার-আপনার মতই। ওদের সাক্ষ্য ছাড়া চোর-ডাকাত-খুনীরা পার পেয়ে যাবেই কখনো কখনো।
  7. হুদুদ মামলায়, বিশেষত ব্যভিচারে ও খুনের মামলায়, নারী-সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয়। (হানাফি আইন পৃঃ ৩৫৩; শাফি’ই আইন পৃঃ ৬৩৮, ক্রিমিন্যাল ল’ ইন্ ইসলাম অ্যাণ্ড দ্য মুসলিম ওয়ার্লড পৃঃ ২৫১, মুহিউদ্দীন খানের অনুদিত বাংলা কোরাণ পৃঃ ২৩৯ (ব্যভিচারে), পেনাল ল’ অব্ ইসলাম পৃঃ ৪৪ ; বিধিবদ্ধ ১ম খণ্ড, ধারা ১৩৩ ও ২য় খণ্ড, ধারা ৫৭৬)।
  8. স্বামীর তরফ থেকে দেন-মোহর হতে পারে কোরাণ থেকে কিছু তেলাওয়াত বা লোহার আংটি বা একজোড়া জুতো। (শারিয়া দি ইসলামিক ল’ পৃঃ ১৬৩, ১৬৪ ; বিধিবদ্ধ ৩য় খণ্ড, পৃঃ ৯৭৬ ; সহি হাদিস তিরমিজি, হাদিস নং ৯৫১)।
  9. বাবা-মা, দাদা-দাদি, বা নানা-নানিকে খুন করলে খুনীর মৃত্যুদণ্ড হবে। কিন্তু বাবা-মা, দাদা-দাদি বা নানা-নানি যদি ছেলে-মেয়ে বা নাতি-নাতনিকে খুন করে তবে খুনীর মৃত্যুদণ্ড হবে না। (বি-ই-আ ১ম খণ্ড, ধারা ৬৫ ক ও খ; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৮৪ এবং সহি তিরমিজি হাদিস ৯৯৪ ও ৯৯৫)।
  10. বি-ই-আ ১ম খণ্ড পৃঃ ৭৯, ধারা ১৫৬ ও ১৫৭ ঃ আত্মীয়ের বাসা থেকে চুরি করলে বা মেজবানের বাসা থেকে মেহমান চুরি করলে তার হুদুদ শাস্তি হবে না।
  11. তওবা করলে গণহত্যাকারীর শাস্তি হবে না। (বিধিবদ্ধ ১ম খণ্ড, ধারা ১৩)।
  12. “কোনো কারণে ধর্ষকের শাস্তি মওকুফ হইলে ধর্ষক ধর্ষিতাকে মোহরের সমান টাকা দিবে” (বি-ই-আ ১ম খণ্ড পৃঃ ৩০১ ; শাফি’ই আইন #স.৮.১০)। ধর্ষণের মত মারাত্মক অপরাধের শাস্তি মওকুফ হবে কেন?  শারিয়া কোর্টে ধর্ষকের নয় বরং ধর্ষিতার শাস্তির কয়েকটা দলিল আমাদের কাছে আছে যেমন নাইজেরিয়ার বরিরা, সোমালিয়ার আয়েশা দুহুলো ইত্যাদি।
  13. মুসলিম পুরুষের রক্তমূল্য অপেক্ষা, (১) মুসলিম নারীর রক্তমূল্য অর্ধেক, (২) ইহুদী-খ্রীষ্টানের রক্তমূল্য তিনভাগের একভাগ, ও (৩) অগ্নি-উপাসকের (সম্ভবতঃ হিন্দুদেরও লেখক) রক্তমূল্য পনেরো ভাগের একভাগ। (শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৯০)।
  14. নিহতের পুত্রকন্যা থাকলে কন্যারা খুনিকে মাফ করতে (কিসাস) পারবে না (শারিয়া দি ইসলামিক ল’, ডঃ আবদুর রহমান ডোই, পৃঃ ২৩৫)। এটা কোরান-বিরোধী কিনা মাওলানারা ভেবে দেখতে পারেন।
  15. বিবাহিতা যুদ্ধ-বন্দিনীদের বিয়ে তৎক্ষণাৎ বাতিল হয়ে যাবে (শাফি’ই আইন #ড়.৯.১৩ )। এ-আইনের উদ্দেশ্য অতি পরিষ্কার। সেটা হল যুদ্ধ-বন্দিনীদের ধর্ষণ। সেটাকে সহি হাদিসে বৈধ করা হয়েছে (সহি বুখারি ৫ম খণ্ড হাদিস নং ৬৩৭, ও ৭ম খণ্ড হাদিস নং ১৩৭)।
  16. বি-ই-আ ১ম খণ্ড পৃঃ ২১০, ধারা ২ -রোজার সময় কেউ কিছু খেলে, এমনকি গোপনে খেলেও, তার শাস্তি হবে। ১১ই নভেম্বর ২০০৫ বৃহস্পতিবারে ইরাণের সানান্দাদজ শহরের এক ১৪ বছরের বাচ্চা ছেলে রোজা রেখেছিল। বেচারা সামলাতে পারেনি, দুপুরে কিছু খেয়ে রোজা ভেঙে ফেলেছিল। শারিয়া আদালত তাকে ৮৫ চাবুক মেরে মেরেই ফেলেছে।
  17. বি-ই-আ ১ম খণ্ড পৃঃ ১৩৬, ধারা ২৬৬ গ ও ২৭২ - বিয়ের সাক্ষী হতে হবে ২জন পুরুষ বা ১জন পুরুষ ও ২জন নারী।
  18. মদ্যপানের সাক্ষী হতে হবে শুধুমাত্র দু’জন পুরুষ মুসলমানের চাক্ষুষ সাক্ষ্য। মেয়েদের বা পুরুষ-মেয়েদের মিলিত সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য নয় (বি-ই-আ ১ম খণ্ড পৃঃ ৩৩৩, ধারা ১৭৪)।
  19. স্বামী তার স্ত্রীকে যখন ইচ্ছে তখনই তাৎক্ষণিকভাবে পুরো তালাক দিতে পারবে। কোনো কোনো কেতাবে আছে অত্যাচারের চাপে, নেশার ঘোরে বা হাসি-ঠাট্টাতে ‘তালাক’ উচ্চারণ করলেও পুরো তালাক হয়ে যাবে (হানাফি আইন ৮১ ও ৫২৩ ; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৬০, খধি #হ.৩.৫ ; বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন ১ম খণ্ড পৃঃ ১৫৭ ধারা ৩৫১, পৃঃ ১৫৬ ধারা ৩৪৭, পৃঃ ১৫৭ ধারা ৩৪৯ ; দ্বীন কি বাঁতে মওলানা আশরাফ থানভি আইন নং ১৫৩৭, ১৫৩৮, ১৫৪৬ ও ২৫৫৫)। চাপের মুখে তালাকের আইনটা সুরা নাহল আয়াত ১০৬-কে লঙ্ঘন করে। এ-আয়াত অনুযায়ী তালাক তো দূরের কথা, কেউ কাউকে ইসলাম ত্যাগে বাধ্য করলেও সেটা নাকচ হবে যদি মনে নিয়ত ঠিক থাকে।
  20. “যে কোন কর্মের বাস্তব সঙ্ঘটনই উহাকে অপরাধকর্মে পরিণত করে। বাস্তবে সঙ্ঘটিত না হওয়া পর্যন্ত কোন কর্মের জন্য কাহাকেও দায়ী করা যায় না।” এর সাথে যোগ করুন ৩য় খণ্ডের ধারা ১২৮২ - “কোন ব্যক্তির অপরাধ প্রকাশ্য আদালতে প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত তাহাকে গ্রেপ্তার বা আটকের মাধ্যমে তাহার ব্যক্তিগত স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা যাইবে না।” এ ভয়াবহ আইনগুলো চালু হলে অপরাধীরা উৎসাহিত হবার সম্ভাবনা- সমাজে মারাত্মক খারাপ প্রভাব পড়বে। কারণ অনেক সময়ই নিজস্ব গুপ্তচরের সাহায্যে পুলিশ চুরি-ডাকাতি থেকে শুরু করো বোমাবাজী-খুন-গণহত্যা এমনকি প্লেন-হাইজ্যাকের পরিকল্পনা আগে থেকেই জেনে ফেলে ও অপরাধীদের গ্রেপ্তার করে। এতে জনগণের জানমালের সুরক্ষা হয়, এবং অপরাধীরা ভয় পায়।

বি-ই-আ ২য় খণ্ড ও অন্যান্য সূত্র থেকেঃ

  1. পৃঃ ২১৭, ধারা ৫৫৪ হুদুদ মামলায় নারী-বিচারক অবৈধ।
  2. পৃঃ ২৬৪, ধারা ৫৭৫ খ হুদুদ মামলায় সাক্ষ্য গোপন করা যেতে পারে। এ-আইন কোরাণের খেলাফ কারণ কোরাণ বলছে “তোমরা সাক্ষ্য গোপন কর না” (বাকারা ২৮৩), “কেন তোমরা ... সত্য গোপন করছ” ইত্যাদি।
  3. বিবাহ-বিচ্ছেদের পরে বাচ্চাদের অভিভাবকত্ব মা পাবে ছেলের ৭ ও মেয়ের ৯ বছর বয়স পর্যন্ত (এ-বয়স পর্যন্তই হাড়ভাঙা পরিশ্রমে বাচ্চাদের যতœ নিতে হয়)। এর পরে তারা বাবার কাছে চলে যাবে। কিন্তু মা যদি নামাজ না পড়ে এবং মাহরাম পুরুষের বাইরে কাউকে বিয়ে করে তবে বাচ্চারা বাবার কাছে চলে যাবে। স্বামীর নামাজ বা বিয়ে এ-ক্ষেত্রে ধর্তব্য নয় (হানাফি আইন ১৩৮- ১৩৯ পৃঃ; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৫০; বি-ই-আ ১ম খণ্ড, ধারা ৩৯৮)।
  4. বিয়েতে মেয়েরা অভিভাবক হতে পারবে না (হানাফি আইন ১৩৮ - ১৩৯ পৃঃ ; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫১৮)।
  5. তাৎক্ষণিক তালাকের পর স্ত্রী খাবার বাসস্থান কিছুই পাবে না। সাধারণ তালাকের পর স্ত্রী মাত্র তিন মাসের জন্য খোরপোষ পাবে। তারপর তারা কোথায় যাবে কি খাবে তার উল্লেখ নেই (হানাফি আইন পৃঃ ১৪৫ ; শাফি’ই আইন পৃঃ ৫৪৬)।
  6. “কোনো অমুসলমানকে খুন করার অপরাধে কোন মুসলমানের মৃত্যুদণ্ড হবে না” (পেনাল ল’ অফ ইসলাম পৃঃ ১৪৯)।
  1. হুদুদ মামলায় পারিপার্শ্বিক প্রমাণ চলিবে না (চাক্ষুষ সাক্ষী থাকতে হবে) (বি-ই-আ ২য় খণ্ড ধারা ৬০০)। এতে মুশকিল হল, চুরি-ডাকাতি-খুনের চাক্ষুষ প্রমাণ প্রায়ই পাওয়া যায় না, পারিপার্শ্বিক প্রমাণেই অপরাধীর শাস্তি হয়। এ-আইন হলে বহু অপরাধীরই শাস্তি হবে না।

বিধিবদ্ধ ইসলামি আইন বলছে “বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ট্রাক ও বাস অ্যাক্সিডেণ্টে নিরীহ মানুষ মরিতেছে। তাহাদের সন্তানসন্ততির করুণ দশার পূর্ণ ও যথাযোগ্য ক্ষতিপূরণের দিকে পাশ্চাত্য আইন কোন দৃষ্টি দিবার পর্যাপ্ত বিধান রাখে নাই। এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিপূরণের বিধান ইসলামি আইনের সর্বকালীন আধুনিকতা প্রমাণ করে” (১ম খণ্ড, পৃঃ ১০)।

কথাটা ডাঁহা মিথ্যা। পাশ্চাত্য আইনে নিহতের পরিবারকে যথেষ্ট ক্ষতিপূরণ-বীমার কঠোর আইন আছে। পরিমাণটা সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট, কমবেশি করার উপায় নেই।  ইন্সিওরেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে এমন হিংস্র আইন প্রয়োগ করা হয় যে খুব কম লোকই বীমা-ছাড়া গাড়ি চালাতে সাহস করে। 

কিছু মুসলিম দেশে কিছু আইন আপডেট করা হয়েছে কিন্তু এখনো অনেক বাকি।  Related:- শারিয়া আইনের সংস্কার প্রায় অসম্ভব কেন?- https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/215-2023-03-27-01-42-40

( "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইয়ের "শারিয়া আইনের উদাহরণ"  অধ্যায় থেকে সংক্ষেপিত :- https://hasanmahmud.com/index.php/books/sharia-ki-bole ).

Print