ইসলামে নেত্রীত্ব বৈধ -ইসলামিক স্কলারেরা ও অতীত বর্তমানের ৩০ জন সর্বোচ্চ নেত্রী-শাসক
হাসান মাহমুদ
গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে এক ইসলামী দল সংবিধানে নেত্রীত্ব নিষিদ্ধ করার লিখিত আবেদন করেছিল মনে পড়ে। ১৬ই জুন ২০২৩ -জার্মানীর ‘ডয়চে ভেলে’ টকশো’তে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন ইসলামি রাষ্ট্রে নারীরা রাষ্ট্রপ্রধান ছাড়া সবকিছু হতে পারবেন। যেহেতু তাঁরা ক্ষমতার কাছাকাছি গেছেন (আমার ধারণা -ভুলও হতে পারে তবে সাবধান হওয়া ভালো), এই নারীবিরোধী ক্লজটা একবার সংবিধানে ঢুকিয়ে দিলে পরে বাতিল করা কঠিন হবে। তাই আমাদের জানা দরকার অতীত-বর্তমানে মুসলিম-বিশ্ব এই নেত্রীত্ব-বিরোধী বয়ান বর্জন করেছে এবং কেন করেছে।
বাস্তবতা এড়িয়ে যাওয়াও বোকামি। এ মুহূর্তে ফিলিস্তিনে আমরা চল্লিশ হাজার মৃতদেহের উপর দাঁড়িয়ে আছি, দায়ী প্রেসিডেন্ট নেতানিয়াহু - পুরুষ। ইরাক সিরিয়ায় ভয়াবহ যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ লোক খুন হয়েছে লক্ষাধিক বাড়িছাড়া হয়েছে - দায়ী প্রেসিডেন্ট বুশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার - পুরুষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রায় আট কোটি মানুষের খুনী রুজভেল্ট, ট্রুম্যান, চার্চিল, হিটলার, হিমলার, গুডেরিয়ান, গুটেনবার্গ, গোয়েবলস, রোমেল, স্ট্যালিন, মুসোলিনি, দ্য গল, তোজো - সবাই পুরুষ। একাত্তরে আমাদের উপর গণহত্যা গণধর্ষণ করেছে পাকিস্তান আর্মি - পুরুষ।
ইতিহাসের সমস্ত যুদ্ধ-হত্যা-গণহত্যা-ধ্বংস ও হিংস্রতার প্রায় প্রত্যেকটা করেছে পুরুষ। তারপরেও নেতৃত্ব বৈধ নেত্রীত্ব অবৈধ? কে কাকে ঠকাচ্ছে তাহলে?
নেত্রীত্ব-বিরোধী বয়ানটা এসেছে সহি বুখারী থেকে কিন্তু বুখারী-তাবারি-সীরাতে থাকলেই সেটা অভ্রান্ত হয়ে যায়না - বুখারীতে নোংরা পর্নোগ্রাফিও আছ বানরের পরকীয়াও আছে:- https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/291-2024-06-14-15-58-25
দেখা যাক এ ব্যাপারে (১) আলেমদের বক্তব্য, (২) ইতিহাসের বাস্তবতা, (৩) শারিয়া আইন, (৪) কোরান ও (৫) হাদিস।
(১) আলেমরা কি বলছেন ?
প্রায় সব ব্যাপারের মত এই বিষয়েও আলেমরা পরস্পরবিরোধী। বাংলাদেশে নেত্রীত্ব-বিরোধী বয়ান সর্বদা সর্বত্র সবাই দেখছেন শুনছেন পড়ছেন, এবার নেত্রীত্ব-সমর্থক তত্ত্ব-তথ্য দেখা যাক।
(ক) ১৯৬৫ সালে আইয়ুবের বিরুদ্ধে ফাতেমা জিন্নাহর নির্বাচনে তাঁর সমর্থনে খবরের কাগজে "রাষ্ট্রপ্রধানের পদে মহিলা নির্বাচন জায়েজ - ১০ জন আলিমের বিবৃতি" প্রকাশিত হয় :- https://songramernotebook.com/archives/39066
নেত্রীত্বকে এই ১০ জনের কেউ কেউ "কম ক্ষতিকর" নীতিতে মেনে নিয়েছিলেন যেমন মওদুদী, কেউ সোজাসাপ্টা সমর্থন করেছিলেন। মাওলানা আশরাফ আলী থানভী সুরা নমলের উদাহরণ দিয়ে বলেছেন:- "বিলকিসের মুসলমান হবার পর তাঁর রাষ্ট্রাধিকার কেড়ে নেবার কোনো প্রমাণ নেই বরং তাঁর রাজ্য যে আগের মতই বহাল ছিল ইতিহাসে তা যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। বিলকিসের রাজত্বে ও রাজ্যশাসন পদ্ধতির প্রতি কোরানে কোনরূপ অবজ্ঞা বা অসমর্থন জ্ঞাপন করা হয়নি। সুতরাং বর্ণনা থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হচ্ছে যে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় মহিলার নেত্রীত্ব চলতে পারে" - দৈনিক আজাদ ২২শে অক্টোবর ১৯৬৪।
(খ) মাওলানা থানভী ভুপালের রানী শাহজাহান বেগমের নেত্রীত্বও সমর্থন করেছেন- “Islamic View of Women Leadership as Head of the State: A Critical Analysis”:- https://www.researchgate.net/publication/270175070_Islamic_View_of_Women_Leadership_as_Head_of_the_State_A_Critical_Analysis
(গ) ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস-এর সাবেক চেয়ারম্যান, ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অফ ফতোয়া এন্ড রিসার্চ- এর প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রাক্তন উপদেষ্টা, সৌদি আরবের ব্যাংক ফয়সাল এবংবাদশাহ ফয়সাল পুরস্কার ও ব্রুনাই সরকারের 'হাসান বাকলি' পুরস্কারপ্রাপ্ত ড. ইউসুফ কারজাভীর ‘ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা, তত্ত্ব ও প্রয়োগ’ বই উল্লেখ করে বাংলাদেশের আলেমদের সম্মানিত ইসলামিক স্কলার শাহ্ আব্দুল হান্নান তাঁর ওয়েবসাইটে লিখেছেন - "শাহ আবদুল হান্নান কর্তৃক কিছু গ্রন্থ পর্যালোচনা"- Link :- https://www.iiitbd.org/wp-content/uploads/2018/01/Book-Reviews_Full.pdf - পৃষ্ঠার স্ক্যান:-
(ঘ) ড. ইউসুফ কারজাভী তাঁর "ইসলামী রাষ্ট্রব্যবস্থা : তত্ত্ব ও প্রয়োগ" বইতে নারী-নেত্রীত্ব নিয়ে ২১৭ থেকে ২৪১ পৃষ্ঠা পর্যন্ত ব্যাপক আলোচনা করে নারী-নেত্রীত্বের বিরোধী প্রতিটি যুক্তিকে অত্যন্ত দক্ষভাবে পরাস্ত করে শেষে বলেছেন - "মুসলিম দলসমূহে আজকাল প্রায় ইজমা হয়েছে যে তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সকল পদে দায়িত্ব পালন করতে পারে"। বইটি জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওয়েবসাইটে আছে:- https://www.bjilibrary.com/4508, https://shibircloud.com/pdf/islami_rastrobyabostha_totto_o_proyog.pdf- পৃষ্ঠার স্ক্যান:-
(২) ইতিহাসের বাস্তবতা - সাম্প্রতিক ১৩ ও ইতিহাসের ১৭ = ৩০ জন সর্বোচ্চ মুসলিম নেত্রী :- Search- “List of the first women heads of state and government in Muslim-majority countries:- https://en.wikipedia.org/wiki/List_of_the_first_women_heads_of_state_and_government_in_Muslim-majority_countries
ইতিহাসের বিস্মৃত মুসলিম রাণীরা !!
বিখ্যাত ইসলামি বিশেষজ্ঞ ড. ফাতিমা মার্নিসি’র বই থেকে, "দি ফরগটেন কুইনস অফ ইসলাম"-
ইতিহাসের এই ১৭ জন মুসলিম রাণীরা কোনো রাজার অলঙ্কার-মার্কা রাণী ছিলেন না, তাঁরা ছিলেন সার্বভৌম শাসনক্ষমতার অধিকারীণী। তাঁদের অনেকের নামে মওলানারা মসজিদে খোৎবা দিতেন, তাঁদের কারো কারো নিজের নামে মুদ্রাও ছিল। খলিফারা কেন "নারী-নেত্রীত্ব হারাম" বয়ানে বিশ্বাস করেন নি এবং এই সার্বভৌম রাণীদের বিরোধিতা করেননি সেটা নীচে “(৫) হাদিস” অংশে দেয়া হল।
(২ক) ভারতবর্ষ - সুলতান ইলতুৎমিসের কন্যা সুলতানা রাজিয়া - ১২৩৬-১২৪০ সাল।
(২খ) ইরাণে রাণী তুরকান খাতুন, ১২৫৭-১২৮২, মসজিদে তাঁর নামে খোৎবা।
(২গ) তুরকান খাতুনের কন্যা পাদিশা খাতুন, নামাঙ্কিত মুদ্রা।
(২ঘ) ইরাণের সিরাজ অঞ্চলে আবশ খাতুন, ১২৫৩-১২৮৭, খোৎবা এবং নামাঙ্কিত মুদ্রা।
(২ঙ) ইরাণের লুরিস্থান অঞ্চলের ১৩৩৯ সালের মুসলিম রাণী (নাম জানা নেই)।
(২চ) রাণী তিন্দু, ১৪২২- ১৪৩১, জায়গা সম্বন্ধে মতভেদ আছে।
(২ছ) মালদ্বীপের সুলতানারা খাদীজা, মরিয়ম, ও ফাতিমা, ১৩৪৭-১৩৮৮।
(২জ) ইয়েমেনের রাণী আসমা ও রাণী আরোয়া, মসজিদে খোৎবা।
(২ঝ) ১২৫০ সালে মিশরের রাণী সাজারাত আল্ দু’র, ১২৫৭-১২৫৯, মুদ্রা ও খোৎবা।
(ঞ) মধ্য এশিয়ায় সুলতানা ফাতিমা, ১৬৭৯-১৬৮১।
(ট) ইন্দোনেশিয়ায় সুলতানা শাফিয়া, সুলতানা নূর নাকিয়া, সুলতানা জাকিয়া, ও সুলতানা কামালাত শাহ ১৬৪১-১৬৯৯।
**- https://www.kalerkantho.com/print-edition/islamic-life/2020/04/20/901087 কালের কণ্ঠ - ২০ এপ্রিল, ২০২০ - "দুর্যোগকালে চিকিৎসাদাতা ৬ নারী সাহাবি" - মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা:- আয়েশা (রা)-এর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট উদ্ধৃতি:- "আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা) তাঁকে জাতুস সালাসিল যুদ্ধে প্রধান সেনাপতি নিযুক্ত করেন" - তিরমিজি , হাদিস ৩৮৮৫। লেখক একজন মুফতি, কারো কোনো প্রশ্ন থাকলে কালের কণ্ঠ-এর সাথে যোগাযোগ করে তাঁর কাছ থেকে জেনে নেবেন।
(৩) সংশ্লিষ্ট শারিয়া আইন।
বাংলাদেশ ইসলামী ফাউণ্ডেশনের প্রকাশিত “বিধিবদ্ধ ইসলামী আইন”-এর ৩য় খণ্ডের ধারা ৯০০:- “রাষ্ট্রপ্রধানের পুরুষ হওয়াও অপরিহার্য্য শর্ত”। কিন্তু তার পরেই ওটা আর “অপরিহার্য্য" থাকেনি, বলা হয়েছে - “ইসলামি রাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞ ফকীহগণ কোন বিশেষ পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে জাতির সার্বিক কল্যাণ বিবেচনা করিয়া উক্ত সর্বোচ্চ পদ নারীর জন্য অনুমোদন করিতে পারেন”।
কিন্তু উগ্র আলেমরা নিজেদের মধ্যে উন্মত্ত গালাগালির যে কুরুক্ষেত্র সূষ্টি করেছেন তাতে এ ব্যাপারে কিংবা কোন ব্যাপারেই তাঁদের ঐক্যমত কিভাবে সম্ভব আমি জানিনা। বাজারে কালো টাকা যেমন সাদা টাকাকে হটিয়ে দেয় তেমনি দেশে উগ্র আলেমরা ভদ্র আলেমদেরকে বলতে গেলে কোনঠাসা করে রেখেছেন (সবগুলো লিংক আমার কাছে আছে):-
ক - এক মওলানা হেফাজতের প্রয়াত নেতা আহমদ শফি-কে বলেছেন - “নালায়েক,….এই
বয়সেও এতো শয়তানী.... মারাত্মক শয়তান ......মালাউন .......যুগের শ্রেষ্ঠ দজ্জাল......
কুত্তাও বলবে “আমার বাচ্চা বলোনা ইজ্জত যাবে.... শুয়োরের বাচ্চা বললে তারাও বড়
কষ্ট পাবে”...,
খ - অমুক মওলানা বলেছেন তমুক আলেমকে “কাছে পেলে ওর জিহ্বা টেনে ছিঁড়ে ফেলতাম",
গ - অমুক আল্লামা বলেছেন তমুক মওলানা “বুড়া শয়তান”,
ঘ - অমুক মওলানা তমুক আলেমকে “জুতা পেটা”করলেন,
ঙ - অমুক মওলানার “ফাঁসি চাই”দাবী করলেন তমুক আলেম,
চ - অমুক হাফেজ বলেছেন তমুক মওলানা “হারামজাদা” –
লম্বা তালিকা।
বিশেষ দ্রষ্টব্য, জামাতের আদি বক্তব্য "নারী-নেত্রীত্ব হারাম" দাবীর পরেও পাকিস্থান বাংলাদেশে তাঁরা "পরিস্থিতির কারণে" বেনাজির ভুট্টো, শেখ হাসিনা ও বেগম খালেদা জিয়ার নেত্রীত্ব মেনে নিয়েছেন। অর্থাৎ "পরিস্থিতির কারণে" তাঁরা হারামকে হালাল ও হালালকে হারাম করার ক্ষমতা রাখেন। কিভাবে তাঁরা আল্লাহর কালামকে ও রসুলের সুন্নতকে বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন? অবিশ্বাস্য মনে হলেও সত্যি – “যদি আলেমদের ইজমা অর্থাৎ ঐক্যমত কোরানের কোন আয়াত বা রাসূলের (স) সুন্নতের বিরুদ্ধে গেলে ধরিয়া লইতে হইবে যে কোরানের ওই আয়াত বা রসূলের (স) ওই সুন্নত বাতিল হইয়া গিয়াছে"- পৃষ্ঠা ১৬, "দি ডকট্রিন অফ ইজমা" - আহমদ হাসান। বইটা ভারতের বিখ্যাত ইসলামী বইয়ের প্রকাশক ও লাইব্রেরী দিল্লির "কিতাব ভবন"- এ পাওয়া যায়। SCAN:-
এইভাবে ইসলামের মালিকানা হাতানোর বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা আছে ইমাম তৌহিদী'র "দি ট্র্যাজেডি অফ ইসলাম", পৃষ্ঠা ৯৪ এবং উল্লেখ আছে ডঃ হাশিম কামালীর "প্রিন্সিপলস অফ ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স" পৃষ্ঠা ২০৩।
(৪) কোরান -
ওপরে "বিশ্ববরেণ্য আলেমরা কি বলছেন?" অংশের মাওলানা আশরাফ আলী তানভীর বক্তব্য দেখুন, সূরা নমল-এ আছে।
(৫) হাদিস। নেত্রীত্বের বিরুদ্ধে কিছু হাদিস আছে কিন্তু নাম-ধাম ঘটনার বিবরণ সহ হাদিস আমি পেয়েছি মাত্র একটি, মাত্র একজন সাহাবীর বলা এবং রসূলের (স) মৃত্যুর সুদীর্ঘ ২৪ বছর পরে বলা।
৬৩০ সালে নবীজীর (স) তায়েফ আক্রমণের সময় ঘোষণা করলেন দুর্গ থেকে পালিয়ে এলে ক্রীতদাসেরা মুক্ত হবে। শুনে বালক আবু বাকরা (হজরত আবুবকর রাঃ নন) সহ অনেক ক্রীতদাস পালিয়ে আসে, দুর্গের পতন হয়। তার ছাব্বিশ বছর পর ৬৫৬ সালে জামাল যুদ্ধে হজরত আয়েশা (রা)কে পরাজিত করে হজরত আলী (রা) বসরায় এলে আবু বাকরা তাঁকে এই হাদিস শোনান - সহি বোখারীর ইংরেজী অনুবাদ, ড: মুহসিন খান, মদিনা বিশ্ববিদ্যালয় - পঞ্চম খণ্ড, হাদিস ৭০৯, ৯ম খণ্ড হাদিস ২১৯, হাফেজ মোঃ আবদুল জলিলের সহি বুখারীর বাংলা অনুবাদের হাদিস ২২২।
“আবু বাকরা বলিয়াছেন, জামাল যুদ্ধের সময় আমি সাহাবীদের সহিত যোগ দিয়া যুদ্ধে প্রায় নামিয়া পড়িয়াছিলাম, কিন্তু নবী (দঃ)-এর একটি কথায় আল্লাহ আমাকে বড়ই উপকৃত করিয়াছেন। যখন নবীজী (দঃ)-কে বলা হইল যে পারস্যের লোকেরা খসরু'র কন্যার উপর নেত্রীত্ব অর্পণ করিয়াছে, তখন তিনি বললেন – “নারী-শাসিত জাতি কখনও সফল হইবে না”-
তাহলে আমরা পেলাম:-
১। এ হাদিস জানার পরেও আবু বাকরা “যুদ্ধে প্রায় নামিয়া” পড়েছিলেন, অর্থাৎ তিনি এ হাদিস মেনে হযরত আলীর (র) পক্ষে ও আয়েশা (রাঃ)-র বিপক্ষে যুদ্ধ করেন নি।
২। এ হাদিস তিনি প্রকাশ করেছেন যুদ্ধে হজরত আয়েশা (রাঃ) পরাজিত হবার পরে, আগে নয়।
৩। এ হাদিস তিনি প্রকাশ করেছেন নবীজীর (দঃ) মৃত্যুর সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছর পর।
৪। এ হাদিসে তিনি “বড়ই উপকৃত হয়েছেন”।
৫। এক বর্ণনায় পাওয়া যায় তিনি হজরত আলী (রাঃ)-কে বলেছেন তিনি নাকি জামাল যুদ্ধের আগে হজরত আয়েশা (রাঃ)-কে চিঠি লিখে এ হাদিসের কথা জানিয়েছিলেন।
৬। অনেক গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নবীজী (দঃ) বর্ণনা করেছেন অনেক সাহাবীকে। কিন্তু যে হাদিসের সাথে কেয়ামত পর্যন্ত বিশ্বের সমস্ত মুসলিম নারীদের সম্মান ও অধিকার বাঁধা, সেই গুরুত্বপূর্ণ হাদিস নবীজী কোন নারীকে এমন কি সর্বোচ্চ দশ সাহাবী আশারা মুবাশশারাদেরকেও না বলে বলেছেন একমাত্র তাঁকেই।
এবার হিসেবের কড়ি।
- “আমি বড়ই উপকৃত হইয়াছি”। কিভাবে? তিনি কোন নেতা বা রাজা বাদশা ছিলেন না, কিভাবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে বড়ই উপকৃত হলেন? প্রশ্নই ওঠেনা।
- তিনি নিজে যদি এ হাদিস বিশ্বাস করতেন তাহলে বিবি আয়েশার (র) বিপক্ষে হযরত আলীর (র) পক্ষে যুদ্ধ করতেন, তা তিনি করেন নি।
- জামাল যুদ্ধে যদি আয়েশা (রাঃ) জিতে যেতেন তবে কি তিনি এ-হাদিস প্রকাশ করতেন? নিশ্চয়ই না, তিনি তো সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছরে কাউকেই এ হাদিস বলেননি।
- জামাল যুদ্ধ যদি না হত তবে তিনি নিশ্চয়ই এ হাদিস বলতেন না, কারণ তিনি সুদীর্ঘ ছাব্বিশ বছরে এ হাদিস বলেননি।
এবারে প্রমাণ:-
- চিঠিতে হাদিসের কথা জানানোর কথা সত্যি হলে সেটা জেনেও বিবি আয়েশা (রাঃ) যুদ্ধে নেত্রীত্ব দিয়েছেন। অর্থাৎ তিনি এ-হাদিস বিশ্বাস করেননি।
- ১৯২৪ সালে খেলাফত উচ্ছেদের আগে পর্যন্ত পরবর্তী মওলানারা মুসলিম সুলতানাদের বিরোধীতা তো করেনই নি বরং রাণীদের নামে খোৎবা পড়িয়েছেন। অর্থাৎ তাঁরাও এ হাদিস বিশ্বাস করেননি।
- খলীফাদের সমর্থন ছাড়া সুলতানাদের মুদ্রা ও খোৎবা সম্ভব হত না। অর্থাৎ খলীফারাও এ হাদিস বিশ্বাস করেননি।
প্রতিটি আদেশ-নির্দেশের পেছনে প্রজ্ঞা থাকতে হয়, দেখতে হয় তা দিয়ে জীবনের মঙ্গল হচ্ছে কিনা। প্রজ্ঞাহীন আদেশ-নির্দেশে ইসলামেরও বদনাম হয় মুসলিম সমাজও পিছিয়ে পড়ে। পুরুষের নেতৃত্বে দুনিয়াটা কি “বেহেশত” হয়েছে তা তো আমরা দেখতেই পাচ্ছি। পশ্চিমা অনেক দেশ নেত্রীত্বের গুনে এগিয়ে গেছে। এই হিংসায় উন্মত্ত রক্তস্নাত পৃথিবীতে জার্মানির অ্যাঞ্জেলা মার্কেল-এর মত, নিউজিল্যান্ডের জেসিন্ডা কেটি লরেলের মত নেত্রী অত্যন্ত দরকার।
ইমেইল – This email address is being protected from spambots. You need JavaScript enabled to view it.