প্রশ্নবিদ্ধ হাদিসের ২৫টি উদাহরণ – পর্ব ১

প্রশ্নবিদ্ধ হাদিসের ২৫টি উদাহরণ – পর্ব ১

উপকারী হাদিস আছে প্রচুর যেগুলো ছড়ানো দরকার।  যেমন নবীজির (সা) একটা হাদিসে ব্যক্তি, সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বশান্তির চাবিকাঠি আছে (ইবনে মাজাহ ৫ম খন্ড হাদিস ৩৯৭২)। সেটার উপরে কবিতা লিখে আবৃত্তি করে ফেসবুকে দিয়েছিলাম ক'বছর আগে, তাঁর সেই বাণী এ পর্য্যন্ত ২৩ লক্ষ লোকের কাছে পৌঁছেছে, অনেকেই এ কবিতা আবৃত্তি করেছেন, জিহ্বা কবিতা - হাসান মাহমুদ" সার্চ করলে সেটা পাওয়া যাবে। লিংক:- https://www.facebook.com/24ghontasongbad/videos/423289214516808

কিন্তু সেই সাথে অজস্র প্রশ্নবিদ্ধ এবং ক্ষতিকর হাদিসও আছে যেগুলো চিহ্নিত ও বাছাই করা জরুরি। তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান "দি টার্কিশ হাদিথ প্রজেক্ট"-এ সেই কাজটাই করেছেন :- https://www.reuters.com/article/opinion/turkish-hadith-project-presents-prophet-mohammads-sayings-for-the-21st-century-idUS3136924547/

হাদিসের কিছু উদাহরণ দেখাচ্ছি, আমি এগুলোর সমর্থন বা বিরোধিতা কোনটাই করছি না। এরপরে কে কি করবেন সেটা পাঠকের ব্যাপার, আমার নয়। বুদ্ধি-বিবেক সবারই আছে, সেগুলোকে কাজে লাগানো দরকার। উল্লেখিত প্রায় সব হাদিস চেক করা যাবে https://sunnah.com/ ওয়েবসাইটে।

(১) লেখার অযোগ্য - নোংরা যৌন পর্নোগ্রাফিক হাদিস - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ১৭৩, ১৭৪, 

(২) লেখার অযোগ্য - নবীর (সা) যৌনতার অত্যন্ত আপত্তিকর বিবরণ - সহি বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ২২৯, ২৪৯, ২৬০,  ৫ম খন্ড হাদিস ২০০,

(৩) লেখার অযোগ্য - নারীর শরীর নিয়ে নোংরা কেয়ামতের আলামত - বুখারী ৯ম খন্ড হাদিস ২৩২,  

(৪) হযরত মুসা কলিমুল্লাহ (আ) জনাকীর্ণ রাস্তায় লোকজনের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে দৌড়াচ্ছেন -  বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ২৭৭, ৪র্থ খন্ড হাদিস ৬১৬,

(৫) আমাদের নবীজি (সা) লোকজনের সামনে নগ্ন হয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলেন। বর্ণনাকারী জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা) বলছেন -  এরপরে আর কোনদিন তাঁকে নগ্ন দেখা যায়নি -   বুখারী ১  খন্ড হাদিস ৩৬০, 

(৬) এক বানরী পরকীয়া করেছে বলে বানরের দল ও সাহাবী বানরীকে পাথর মেরেছেন -  বুখারী ৫ম খন্ড হাদিস ১৮৮, 

(৭) মাটি প্রতিটি আদম সন্তানের হাড় খেয়ে ফেলবে মেরুদন্ড ছাড়া, যা থেকে কেয়ামতে তার শরীর আবার বানানো হবে - মুসলিম ৭০৫৬ (৭০৫৫ ও ৭০৫৭। (আসলে কবরে মেরুদন্ড সহ সব হাড় শেষ পর্যন্ত ভঙ্গুর হয়ে ধ্বংস হয়ে যায়),

(৮)  কোরানের দুটো আয়াত ছাগলে খেয়ে গেছে বলে সেগুলো আমাদের কোরানে নেই -  ইবনে মাজাহ ৩খন্ড হাদিস ১৯৪৩, ১৯৪৪,

(৯) জাহান্নামের আগুণ আল্লাহ’র কাছে অভিযোগ করল,"হে আমার প্রতিপালক,আমার বিভিন্ন অংশ পরস্পরকে খেয়ে ফেলছে!  তিনি তাকে দুইবার শ্বাস নেয়ার অনুমতি দিলেন, একটি শীতকালে অন্যটি গ্রীষ্মকালে. এবং এটাই (গ্রীষ্মকলে) প্রখর গরম ও (শীতকালে) তীব্র শীতের কারণ - বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৪৮২,    

(১০) কোনো মুসলিম কোন অমুসলিমকে খুন করলে মুসলিম খুনির প্রাণদণ্ড হবে না - ইবনে মাজাহ হাদিস ২৬৫৯, 

(১১) পিতা পুত্রকে খুন করলে খুনির মৃত্যুদণ্ড হবে না - তিরমিজি  হাদিস ১৪০৫, ১৪০৬। শারিয়া আইনে এটাকে -মা দাদা-দাদী নানা-নানি পর্যায়ক্রমে পুত্রকন্যা নাতি-নাতনিকে খুন পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া হয়েছে,

(১২) আমরা জানি নবুয়তের ২৩ বছরে নবী (সা) মক্কায় ছিলেন ১৩ বছর ও মদিনায় ১০ বছর। কিন্তু হাদিস বলছে উনি মক্কায় ছিলেন:- (ক) ১৫ বছর - মুসলিম ৫০৮৫ ,  (খ) ১০ বছর - বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৭৪৭, ৭৪৮, ৬ষ্ঠ খন্ড হাদিস ৫০২ ও ৭ম খন্ড হাদিস ৭৮৭, এবং  (গ) ১৩ বছর - বুখারী ৫ম খন্ড হাদিস ১৯০, ২৪২, ২৪৩, কোনটা সত্যি? 

(১৩) 'লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ' বললে চোর এবং ধর্ষকও বেহেশতে যাবে - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৭১৭, ৯ম খন্ড হাদিস ৫৭৯, মুসলিম ১৭২,

(১৪) জ্বর আসে জাহান্নামের তাপ থেকে! সুতরাং,জ্বরকে পানি দ্বারা প্রশমিত কর! বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৬২১,

(১৫),"যদি কারো পানিতে মাছি পড়ে মাছিটিকে পানিতে চুবিয়ে তারপর পান কর! কারণ,মাছির এক ডানায় আছে রোগ, অন্য ডানায় প্রতিকার" – বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৫৩৭, 

(১৬) কালোজিরা মৃত্যু ব্যতিত সর্বরোগের ঔষধ- বুখারী ৭ম খন্ড ৫৯১, তাহলে আমরা হাসপাতালে বা ডাক্তারের কাছে যাই কেন, 

(১৭) খাবার পর নিজে হাত চাটতে হবে বা অন্যের দ্বারা চাটিয়ে নিতে হবে - বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৩৬৬

 (১৮) দাজ্জালের :- (ক) ডান চোখ অন্ধ হবে –  মুসলিম হাদিস ০৩২৪, ০৩২৫, ৭০০৫, (খ) বাম চোখ অন্ধ হবে – মুসলিম হাদিস ৭০১০, ইবনে মাজাহ ৪০৭১,   

(১৯) 'মুগীরা বিন সুবা'র এক বালক রসুলের (সা) পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, তখন তিনি বললেন; - 'এই বালক দীর্ঘায়ু হলে সে বৃদ্ধ হবার আগেই কেয়ামত হবে"- সহিঃ মুসলিম হাদিস ৭০৫৩, একই হাদিস আছে, ৭০৫১, ৭০৫২-তেও,

(২০) কেউ সঠিকভাবে ওযু করে জামাতে দুই ওয়াক্তের ফরজ নামাজ পড়ে তবে আল্লাহ তার মাঝখানের সময়টুকুর সব গুনাহ মাফ করবেন - বুখারী ১ম খণ্ড হাদিস ১৬১,

(২১) পশুর সাথে যৌনকর্মের শাস্তি নেই -  আবু দাউদ- হাদিস ৪৪৫০

(২২) গরুর মানুষের সাথে কথা বলে -  বুখারী ৪র্থ খন্ড হাদিস ৬৭৭

(২৩) কেউ ইমামের সামনে মাথা তুললে সে গাধার আকৃতি হতে পারে - বুখারী ১ম খন্ড হাদিস ৬৬০,  

(২৪) নামাজের সময় ওপর দিকে তাকালে হারাবে চোখ বা দৃষ্টিশক্তি - মুসলিম, হাদিস ৮৬২ ও ৮৬৩,

(২৫)  বুখারী ৭ম খন্ড হাদিস ৩৫৬:- “যে ব্যক্তি প্রতি সকালে ৭টি আজওয়া খেজুর খায়,তার ওপর বিষ ও জাদু কোন প্রভাব ফেলতে পারেনা"।  এই হাদিসের সত্যতা প্রমান করতে বিতর্ক সভায় জনসমক্ষে আলেমের বিষপান - details:- https://www.facebook.com/photo?fbid=10168778381130593&set=a.155426800592

drinking_poison_to_prove_this_hadis.jpg

 খ্রিস্টানরা এই হাদিসকে চ্যালেঞ্জ করলে খ্যাতনামা আলেম শেখ ইসরার রশিদ সে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করেন। ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটিতে ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তারিখে এ বিষয়ে বিতর্ক অনুষ্ঠানে সবার সামনে তিনি ইঁদুর মারা বিষ পান করেন এবং অক্ষত থাকেন, ফলে খ্রিস্টানরা "পরাজিত" হয়। অনুষ্ঠানের ভিডিও:- https://www.youtube.com/watch?v=ucB_ovdB5tU

পরে ১০ নভেম্বর ২০২১ তারিখে আলেম শাহিদ আলী "আল ইসলাম প্রোডাকশনস" চ্যানেলে শেখ ইসরার রশিদকে প্রতারক প্রমান করে কয়েকটা সিরিয়াস প্রশ্ন তুলেছেন:-

(১) শেখ ইসরার রশিদ সর্বসমক্ষে যা খেয়েছিলেন তা মোটেই বিষ ছিল না, সেটা ছিল সর্বত্র সহজলভ্য অ্যাসিডিটি বা অম্বল রোগের ওষুধ "মিল্ক অফ ম্যাগনেসিয়া",

(২) এই নাটক করে শেখ ইসরার সারা দুনিয়াকে প্রতারিত করেছেন,

(৩) সেখানে উপস্থিত খ্রিস্টান অভিযোগকারিদের কেউ তখন সবার সামনে সেই বোতল থেকে পান করলে তারা বেঁচে থাকতো। সেক্ষেত্রে শেখ ইসরার ও ইসলাম অপদস্ত হতো,

(৪) শেখ ইসরারের এই "বিষপান"-কে বিশ্বাস করে তাঁর লক্ষ লক্ষ ফলোয়ারের যে কেউ এই হাদিসের ভিত্তিতে বিষ পান করে মারা যেতে পারে। অনুষ্ঠানের ভিডিও:- https://www.youtube.com/watch?v=UYYWu1ZXM9U

এর জবাবে শেখ ইসরার রশিদের কোন বক্তব্য খুঁজে পাইনি, কেউ পেলে জানাবেন।  

*************************

মানুষ যে নিজেদের কথা আল্লাহর নামে চালিয়ে দিয়েছে সেটা কোরআনেও আছে (ইমরান ৭৮), আলেমরাও বলেন। নবীজি (সা) নিজেও বলে গেছেন কিছু মুসলিম তাঁর দেয়া ইসলামকে বদলে দেবে – বুখারী ৯ম খন্ড হাদিস ১৭৪ - রোজ হাশরে নবীজি (সা) তৃষ্ণার্তদেরকে আল কাওসারের পানি পান করানোর সময় একদল লোক আসবে যাদেরকে তিনি চেনেন এবং যারা তাঁকে চেনে। কিন্তু তাঁদের মধ্যে একটা বাধা রাখা হবে, তখন নবীজি (সা) বলবেন - "এরা তো আমার লোক "!

তখন তাঁকে বলা হবে:- "'You do not know what changes and new things they did after you.' Then I will say, 'Far removed (from mercy), far removed (from mercy), those who changed (the religion) after me"!  

অর্থাৎ - উদ্ধৃতি - "আপনি জানেন না আপনার পরে এরা কি কি বদলে দিয়েছে এবং নতুন কি কি যোগ করেছে"।  তখন আমি বলব- "দূর হয়ে যাও, আমার রহমত থেকে দূর হয়ে যাও যারা আমার পরে ধর্মকে বদলে দিয়েছো !!"
 
কতটা ক্রোধে ও বুকভাঙ্গা বেদনায় তিনি একথা বলেছেন তা কি আমরা কল্পনা করতে পারবো?
 
********************************************

Print