• Home
  • Articles
  • Islamic :: Bangla
  • দুই প্রবল প্রতিপক্ষ- হাস্যমুখ অভিজিৎ রায় বনাম চিন্তিত জাকির নায়েক ! শেষ অট্টহাসিটা কে হাসবে? অনেক দেশে নাস্তিক এখন সংখ্যাগুরু

দুই প্রবল প্রতিপক্ষ- হাস্যমুখ অভিজিৎ রায় বনাম চিন্তিত জাকির নায়েক ! শেষ অট্টহাসিটা কে হাসবে? অনেক দেশে নাস্তিক এখন সংখ্যাগুরু

UPDATE 20 NOV 2024:-   ধর্ম বদল বা ত্যাগ বিশ্ব-মানবসমাজের একটা ইন্টারেস্টিং সমীকরণ। দুহাজার এক সালে নিউইয়র্কে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর ইসলাম গ্রহণ বেড়ে গিয়েছিল।  অনেক ওঠানামার পর আজ দেখি লন্ডনের ব্রুনেল ইউনিভার্সিটির গবেষণায় এসেছে বিশ্বময় নাস্তিকতা বাড়ছে এবং সেদেশে এখন নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু - "Study explains global rise in atheism and shows that atheists now outnumber theists in the UK"-  https://www.brunel.ac.uk/news-and-events/news/articles/Study-explains-global-rise-in-atheism-and-shows-that-atheists-now-outnumber-theists-in-the-UK

*********************************************

“অনেকে দেশে এখন নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু” - দৈনিক আমার দেশ-এ, ৩০শে জানুয়ারী ২০১৬, গ্যালাপ ইন্টারন্যাশনাল জরীপ৷

বিশ্বময় মুসলিম পরিবারে সন্তানের সংখ্যা অন্যদের চেয়ে বেশী, পশ্চিমা দেশে অনেকে ইসলাম গ্রহণ করছে তাতে "ফাস্টেস্ট গ্রোইং রিলিজিওন" ইসলামই তো হবার কথা৷ বিশ্বাসটা প্রথম ধাক্কা খায় এক বিশ্ববিদ্যালয়ের জরিপের খবরে, সেখানে ৬৭% ছাত্রছাত্রীই নাস্তিক৷ তারপর থেকে ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে বহুকাল থেকে যা ছিল অন্তর্লীন ফল্গুধারায় প্রবহমান সম্প্রতি তা উচ্ছ্বল জলধিতরঙ্গে রূপ নিয়েছে৷ সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি:- 

  • ইউরোপের অনেকে দেশে এখন নাস্তিকরাই সংখ্যাগুরু….
  • চীনে ৬১% মানুষ সরাসরি স্রষ্টার অস্তিত্ব অস্বীকার করে……
  • সুইডেনে ৮% মানুষ উপাসনালয়ে ধর্মচর্চা করে, ৭৬% নাস্তিক…
  • চেক প্রজাতন্ত্রে ১২% মানুষ গির্জায় ধর্মচর্চা করে…৭৫% নাস্তিক…
  • ব্রিটেনের ৫৩% জনের কোনো ধর্মবিশ্বাস নেই….
  • হংকং-এ ৬২% নাস্তিক
  • জাপানে ৬২% নাস্তিক
  • জার্মানিতে ৫৯% নাস্তিক
  • স্পেনের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
  • অস্ট্রিয়ার নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক
  • ফ্রান্সের নাগরিকদের বড় একটা অংশই নাস্তিক

[সূত্র:ডয়চে ভেল]

অস্ট্রেলিয়া নিউজিল্যাণ্ডেও অন্যরকম হবার কারণ নেই৷ যেহেতু পশ্চিমা বিশ্বের সব কিছুই আমাদের দেশগুলোকে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে তাই ওই ধাক্কাটা এশিয়াতেও গিয়ে লাগছে ও আরো লাগবে৷ দেখা যাক এটা ঘটছে কেন:- 

(১) গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করে পুঁজিবাদ অর্থাৎ ক্যাপিটালিজম বিশ্বময় এক ভয়ানক ভোগবাদী জীবনধারা ও জীবনবোধ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে৷ প্রজন্মের বিশাল অংশ বিশ্বাস করে "যাবজ্জীবেৎ সুখং জীবেৎ, ঋনং কৃত্ত্বা ঘৃতং পিবেৎ" - অর্থাৎ "নগদ যা পাও হাত পেতে নাও বাকীর খাতায় শূন্য থাক, দুরের বাদ্য লাভ কি শুনে মাঝখানে যে বেজায় ফাঁক"! সেখানে ধর্ম, মহাপুরুষ ও ধর্মগ্রন্থের জায়গাও নেই দরকারও নেই, স্রেফ আনন্দ করে গেলেই জীবন সার্থক৷ দেশগুলোর আইনও এটাকে সমর্থন করে - একটাই জীবন তোমার, নিজ কর্মের দায়িত্ব নিয়ে অন্যের অধিকার খর্ব না করে বা অন্যকে কষ্ট না দিয়ে জীবন উপভোগ করে যাও৷ 

যৌবন এক পরাক্রান্ত শক্তি৷ জীবনের ষড়রিপু (ছয় শত্রু) - কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য্য - তার প্রথমটাই হল কাম যা মানুষকে প্রবলভাবে তাড়িত করে৷ ধর্মগুলো বিয়ের বাইরে দৈহিক সংসর্গের বিরোধী এবং পশ্চিমা প্রজন্মের অবাধ যৌনতায় বড় বাধা৷ ""পরস্পরের সম্মতি থাকলে সাবালক নরনারীর মিলন বৈধ"" - পশ্চিমা দেশগুলোর এ আইনের পূর্ণ সুযোগ নিয়েছে প্রজন্ম, এ অধিকার তারা কিছুতেই ছাড়বে না - দরকার হলে ধৰ্মই ছেড়ে দেবে৷ প্রজন্মের এই প্রবণতা আমাদের দেশগুলোতেও বাড়ছে৷

(২) ""ধর্মই নৈতিকতার ভিত্তি"", এ দাবীও অসার প্রমাণিত হয়েছে৷ কারণ ধর্মহীন বা ধর্মে উদাসীন অথচ প্রবলভাবে আধ্যাত্মিক, উদার ও মানবিক গুণাবলীতে আলোকিত মানুষের অজস্র উদাহরণ চারদিকে ছড়িয়ে আছে৷ তাঁরা কারো ক্ষতি করেন না ও বিপদ-আপদে সর্বশক্তি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ান৷  পক্ষান্তরে গীর্জা, মন্দির ও মসজিদ মাদ্রাসা ইত্যাদির অনেক ধর্মগুরুর হিংস্রতা, হানাহানি ও অশ্লীলতার অজস্র খবরও প্রজন্ম জানছে৷ যেহেতু ধর্মগুরুদের ভাবমূর্তির ওপরে ধর্মের ভাবমূর্তি অনেকটাই নির্ভর করে তাই এটাও ধর্মের ওপরে প্রজন্মের বিতৃষ্ণার একটা বড় কারণ৷  

(৩) "ম্যান ডাজ নট লিভ বাই ব্রেড অ্যালোন"- খাদ্যের পাশাপাশি মানুষের আধ্যাত্মিক প্রয়োজন আছে যেখানে ধর্মবিশ্বাসের বিকল্প নেই৷ এই আধ্যাত্মিক প্রয়োজনটাই হারিয়েছে এ প্রজন্মের বিশাল অংশ৷ এখন তাদের প্রয়োজন প্রধানত: পার্থিব, তাদের চাই টেকনোলজি’র সর্বশেষ সংস্করণ, চাই পার্টি, নুতন মডেলের গাড়ী, বাড়ী, আরো ভালো চাকরী বা ব্যবসা, দেশে দেশে ভ্রমণ৷ এসব প্রয়োজন ধর্ম মেটাতে পারছেনা কারণ ওটা ধর্মের কাজই নয়৷ ধর্মের কাজ হেদায়েত করা, নৈতিকতা প্রতিষ্ঠা করা, সেটাও ব্যর্থ হতে দেখছে এই প্রজন্ম৷  যা প্রয়োজন মেটাতে পারেনা তা প্রাকৃতিক নিয়মেই অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে ও শেষ পর্য্যন্ত পরিত্যক্ত হয়৷  প্রজন্মের বিশাল অংশ ধর্মের মাধুর্য্য জানেনা, ধর্মের আবেদন তাদের কাছে নেই৷

(৪) প্রজন্ম দেখছে ধর্মের উৎস থেকে ভয়াবহ গণহত্যা, গণধর্ষণ, ব্যাপক হিংস্রতা ও ধ্বংসযজ্ঞ৷ ইতিহাস ঘেঁটে তারা দেখেছে অন্য ধর্মের উৎস থেকেও অতীতে প্রবাহিত হয়েছে অগণিত নিরপরাধীর রক্ত ও অশ্রুস্রোত৷ হিংস্রতা, যুদ্ধ, রক্তক্ষয় অন্যান্য কারণেও হয় এবং তার ব্যাখ্যা সম্ভব৷ কিন্তু সেটা যখন স্রষ্টার নামে হয় তখন তা ব্যাখ্যার অতীত হয়ে দাঁড়ায়৷ প্রজন্ম জানেনা কোনো ধর্মই হিংস্রতা শেখায় না৷ জানেনা যে ওগুলো ধর্মের অপব্যবহার মাত্র - কতিপয় শক্তিশালী ধর্মগুরুর হিংস্রতা মাত্র৷ তাঁদের অপকর্মের দায় গিয়ে পড়ে ধর্মের ওপরে৷ 

এছাড়া ধর্মের মধ্যে অনেক অবৈজ্ঞানিক, অবাস্তব ও হাস্যকর রূপকথা ঢুকে পড়েছে৷ ব্যভিচারের মৃত্যুদণ্ড কোরানে নেই, ওটা এসেছে একটা ছাগলের খাওয়া আয়াতের ভিত্তিতে - ইবনে মাজাহ ৩য় খণ্ড হাদিস ১৯৪৪। এমন উদাহরণ অগণিত - দেখে নিন "অশ্লীল, উদ্ভট ও প্রশ্নবিদ্ধ হাদিসের ৩৭টি উদাহরণ " - https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/291-2024-06-14-15-58-25

তাই এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক যে তাদের এক বড় অংশের কাছে ধর্ম একটা ভীতিকর, হাস্যকর ও বর্জনীয় কিছুতে পরিণত হয়েছে৷ 

(৫) কিন্তু তাহলে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা কি? ধর্মের প্রধান প্রয়োজনীয়তার প্রমাণ হল পৃথিবীর সিংহভাগ মানুষ চিরকাল এবং এখনো ধর্মে বিশ্বাসী, ধর্ম ছাড়া মানুষ চলতে পারেনা৷ এটা খুবই সত্যি যে :-“ধর্মগুরুরা নীতিবাক্য প্রচার করিয়াছেন অজস্র। আর উহাতে কাজও হইয়াছে যথেষ্ট। অসংখ্য নর-নারী অসৎকাজ ত্যাগ করিয়া সৎকাজে ব্রতী হইয়াছেন......মূলত: পশুবৃত্তি বা স্বেচ্ছাচারিতা ত্যাগ করাইয়া মানুষকে সুসভ্য করিয়া গড়িয়া তুলিবার ব্যাপারে ধর্মগুরু বনাম ধর্মের দান অপরিসীম” -আরজ আলী মাতুব্বর রচনাসমগ্র, ২য় খণ্ড পৃঃ ১৩৮। সবশেষে তিনি বলেছেন -“ধর্মীয় শিক্ষার ফলে আদিম মানবদের লাভ হইয়াছে যথেষ্ট। এবং বর্তমান যুগেও উহার আবশ্যকতা ফুরায় নাই।”

(৬ যতদিন স্রষ্টার নামে বৈধ করা হবে হিংস্রতা, অত্যাচার ও দুর্নীতি, যতদিন অর্থলোলুপ ধর্মদস্যূরা চালিয়ে যাবে ধর্মব্যবসা, যতদিন হুংকারী ধর্মগুরুদের শাস্তি না হবে, ততদিনই মানবজাতি ধীরে ধীরে ধর্মত্যাগ করবে৷ পশ্চিমা বিশ্বের এ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই৷ আপাতত: এ প্রাকৃতিক নিয়ম মানতে হচ্ছে যে, “”যা ঘটে সেটা ছাড়া আর কিছু ঘটতে পারতনা বলেই সেটা ঘটে””৷

রহিম যেটা দেখছে পানি করিম সেটা দেখছে কালি, প্রশংসা যার করছে যদু, মধু তাকে দিচ্ছে গালি।

তুই যেটাকে লম্বা দেখিস অন্যে সেটা দেখছে গোল, এক অরূপের অজস্র রূপ বড্ড লাগায় গণ্ডগোল।

সবার চোখেই একেক রঙের চশমা তা কেউ পাইনে টের, সবাই একেক রঙের দেখি, একই মোক্ষ, এক রঙের।

দুই চশমায় মিললে মধুর "স্লামালেকুম!", "সুপ্রভাত"! না মিললেই "ধর শালাকে", "মার শালাকে"র সূত্রপাত।

আসল সত্য কোথায় থাকে, কে জানে তার হয় কি রূপ, বিশ্বাসেরই সত্যে সবাই হয়ত খুশী, নয় বিরূপ।

মাতাল ভাবে, সে ঠিক আছে!  দুনিয়াটাই খাচ্ছে টাল, বিশ্বাসেরই "সত্য" খেয়ে আমরা সবাই পাঁড় মাতাল !!

এটা রূপক অর্থে বলা হল।

হাসান মাহমুদ

 ০৫ই নভেম্বর ৪৭ মুক্তিসন (২০১৭)

https://opinion.bdnews24.com/bangla/archives/51429

RELATED:- মুরতাদ-এর মহাপ্লাবনে মহাউদ্বিগ্ন বিশ্ব-আলেমরা - https://hasanmahmud.com/index.php/articles/islamic-bangla/331-2025-01-08-19-20-18


Print