শারিয়া আইনের সংস্কার ও বিবর্তন - খিলাফত আমল ও বর্তমানের উদাহরণ - হাসান মাহমুদ
"শারিয়া আইনের সংস্কার" শুনলেই অনেকে আঁতকে ওঠেন, মনে করেন ওতে বোধহয় ইসলামের ক্ষতি হয়ে যাবে। আসলে মোটেই তা নয়। ঈমান, আকিদা, ইবাদত, আখলাক ইত্যাদি আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো চিরকাল একই আছে এবং থাকবে, যদিও এগুলোর ব্যাখ্যা তফসির বদলেছে। কিন্তু শাসন পদ্ধতির সাথে জড়িত কিছু বিষয় অতীতে বিবর্তিত হয়েছে ও এখনও হচ্ছে।
যেমন উত্তর আফ্রিকায় ইরিত্রিয়া, মিশর ইত্যাদি কিছু দেশে "নারীর খতনা" বেআইনি করা হয়েছে যা শারিয়া আইনে বৈধ, তিউনিসিয়ায় বহুবিবাহ নিষিদ্ধ, তুরস্ক ও তাজিকিস্তানে পুত্রকন্যা সমান উত্তরাধিকার পায়, মিশরে ২০০০ সাল থেকে নুতন আইনে স্ত্রীরা মোহর ফেরত দিয়ে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারে যা শারিয়ার "খুলা" আইনের পরিপন্থী ইত্যাদি। আদি হানাফি আইনে খুনের মামলায় নারীসাক্ষী নিষিদ্ধ ছিল, কয়েকশো বছর পর স্পেনের ইমাম ইবনে হাযম সেটাতে নারীসাক্ষী যোগ করেন যদিও তা ছিল পুরুষের অর্ধেক। সেটাও বদলেছে, এখন ওই মামলায় নারী-পুরুষের সাক্ষী সমান। কিছু উদাহরণ আছে আমার "শারিয়া কি বলে, আমরা কি করি" বইতে।
এ বিষয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক শান্তিপূর্ণ আলোচনা হওয়া দরকার, কারণ দেশে ইসলামী রাষ্ট্র কায়েমের চাপ আছে। জাতির জানা দরকার উসমানিয়া খলিফারা ১৮৩৯ থেকে ১৮৬৯ সালে "তানজিমাত" নামে শারিয়া আইন সংস্কার করেন যার মধ্যে আছে :-
(১) মুরতাদের মৃত্যুদণ্ড বাতিল,
(২) দাসপ্রথা উচ্ছেদ,
(৩) অমুসলিমদের ওপরে জিজিয়া কর উচ্ছেদ,
(৪) অমুসলিমদের সেনাবাহিনীতে চাকরির অধিকার,
(৫) ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবার সমান নাগরিক অধিকার,
(৬) জাতীয় সংগীতের প্রচলন,
(৭) ইহুদী-খ্রিস্টানদের নিজেদের ধর্মীয় আদালত ইত্যাদি।
'ইসলামিক হিস্ট্রি ভার্চুয়াল অ্যাকাডেমি'র - "তানজিমাত কী? তানজিমাত যুগে অটোমান তুরস্কে গৃহীত সংস্কারাবলি কী ছিল" -
আবারও মনে করিয়ে দিচ্ছি অন্যতম বিশ্বশ্রেষ্ঠ শারিয়া বিশেষজ্ঞের সতর্কবাণী - সংস্কার না করে যেন শারিয়া আইন প্রয়োগের চেষ্টা না করা হয়, কারণ যে উদ্দেশ্যে ফিকাহ'র উসুল, শারিয়া ইত্যাদি বানানো হয়েছিল, উদ্ধৃতি - "অনেক কারণেই তাহা আজ সেই উদ্দেশ্য পূরণে সক্ষম নহে" - "প্রিন্সিপলস অফ ইসলামিক জুরিসপ্রুডেন্স" -ড. হাশিম কামালি - মুখবন্ধ, পৃষ্ঠা ৫০০, ৫০৪ ইত্যাদি।